এসব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করে না, কারণ বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের সীমানা বরাবর ঘটে।
Published : 31 Mar 2025, 04:08 PM
পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ অসম্ভব উত্তপ্ত ও গলিত অবস্থায় আছে। এর ওপর দুধের সরের মতো ভেসে আছে টেকটোনিক প্লেটগুলো। এই প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়, এটা মোটামুটি জানা বিষয়। প্রশ্ন হলো, টেকটোনিক প্লেটের মাঝামাঝি অংশে তাহলে কী করণে ভূমিকম্প হয়?
পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত থেকে অনেক দূরে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভ্রান্ত বিজ্ঞানীরা। এ ধরনের আগ্নেয়গিরি ‘ইন্ট্রাপ্লেট আগ্নেয়গিরি’ নামে পরিচিত।
এসব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করে না, কারণ বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের সীমানার ওপর নির্ভর করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘রেওয়াজের বাইরে’ ঘটা এসব ভূকম্পনের রোমাঞ্চকর ব্যাখ্যা মিলেছে নতুন এক গবেষণায়। গবেষণা অনুসারে, পৃথিবীর গভীরে সঞ্চিত পানিই সম্ভবত এর মূল চাবিকাঠি।
গবেষকরা বলছেন, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪১০ থেকে ৬৭০ কিলোমিটার গভীরে ‘ম্যান্টল ট্রানজিশন জোন’ বা এমটিজেড নামে একটি স্তর রয়েছে। দেখা না গেলেও পৃথিবীর এই অঞ্চলে অনেক পরিমাণে পানি থাকতে পারে, যার পরিমাণ হতে পারে বেশ কয়েকটি মহাসাগরের মোট পানির সমান।
এ স্তরের পানি তরল সমুদ্রের মতো প্রবাহিত হয় না, বরং এটি ‘রিংউডাইট’ ও ‘ওয়াডসলাইট’-এর মতো খনিজ পদার্থের ভেতরে আটকে থাকে। আর এ ধরনের খনিজ উপাদান উচ্চ চাপের মধ্যে তৈরি হয়।
কিন্তু পানি সেখানে কিভাবে পৌঁছায়? বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের পৃথিবীর আবরণের নিচে তলিয়ে যাওয়াকে বলে ‘সাবডাকশন’। এ ঘটনায় ভূগর্ভস্থের গভীরে পানিসমৃদ্ধ শিলা বহন করে নিয়ে যায় প্লেট। এভাবেই লাখ লাখ বছর ধরে পৃথিবীর গভীরে থাকা এমটিজেড স্তরের কিছু অংশকে ভিজিয়ে রেখেছে এটি।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না এই পানি ঠিক কোথায় আছে বা কতটা সমানভাবে পৃথিবীর গভীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব সাবডাকটিং প্লেটের আকার, আকৃতি, গতি ও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। ফলে পৃথিবীর ম্যান্টল জুড়ে পানি অসমভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গবেষণার জন্য গত ৪০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্লেট কীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে তার মডেল ব্যবহার করেছেন গবেষক হেলেন ওয়াং ও তার দল। তারা এমন বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করেছেন, যেখানে পানি বিভিন্ন পথে ভ্রমণ করে পৃথিবীর এমটিজেড স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে।
তারপর সেসব অঞ্চলকে এমন বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকরা, যেখানে গত আড়াই কোটি বছর ধরে আন্তঃপ্লেট আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে।
গবেষণায় পৃথিবীর ম্যান্টলে লুকানো পানির সঙ্গে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাতের শক্তিশালী সংযোগ উঠে এসেছে। প্রায় ৪২ শতাংশ থেকে ৬৮ শতাংশ আন্তঃপ্লেট আগ্নেয়গিরি ম্যান্টল অঞ্চলের উপরে ঘটেছিল, যেগুলোতে ছিল আরও বেশি পরিমান পানি।
যেসব অঞ্চলে পানি তিন থেকে ১০ কোটি বছর ধরে ম্যান্টলের মধ্যে ছিল সেখানে এ সংযোগটি ছিল আরও শক্তিশালী। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, ম্যান্টলের দীর্ঘদিন ধরে পানি সঞ্চয়ের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ঘটাতে পারে।
পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার মতো অঞ্চলে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে এ গবেষণা। কারণ এসব অঞ্চলের আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেট সীমানা থেকে অনেক দূরে।
অন্যদিকে, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ আটলান্টিকের মতো বিভিন্ন অঞ্চল যা পৃথিবীর এমটিজেড স্তরের শুষ্ক অংশের উপরে অবস্থিত, সেখানে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ খুব কম দেখা গেছে।