ফোনের স্ক্রিন ব্যাটারির চার্জ ক্ষয় করবে এটি আন্দাজ করাই যায়। তবে, ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে লোকেশন পরিষেবা চালু রাখলেও চার্জ ক্ষয় হয় এটি অনেকেই জানেন না।
Published : 20 May 2024, 06:40 PM
একটি স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংশের মধ্যে ব্যাটারি অন্যতম। আর একটি স্মার্টফোনকে অনেকদিন টিকিয়ে রাখতে খেয়াল রাখা উচিত ডিভাইসটির ব্যাটারি লাইফের বিষয়ে।
আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নতুন কোনো সংস্করণ যতই দুর্দান্ত হোক না কেন, দিন শেষে ফোনে চার্জ না দিলে সেটি চলবে না। ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ফোনের ব্যাটারি।
তবে, প্রতিদিন ফোন ব্যবহারের কিছু অভ্যাস স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্ষতি করছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত।
প্রয়োজনের বেশি চার্জ দেওয়া
এটি শুনে অনেকে অবাক হলেও, ফোনে প্রয়োজনের বেশি চার্জ দিলে ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন চার্জ দিলে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত ক্ষয় হয়। প্রতিটি চার্জ সাইকেল, অর্থাৎ ০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ হওয়া এবং আবার শেষ হওয়ার প্রত্যেকটি সাইকেলে ব্যাটারির রাসায়নিক উপাদান ক্ষয় হয়ে যায়। সাধারণত স্মার্টফোনে ব্যবহার হওয়া লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে এটি বেশি হয়।
অরিতিক্ত চার্জ করা, বা ব্যাটারিটি ধারাবাহিকভাবে ১০০ শতাংশে রাখা এবং অরিতিক্ত গরম হলে এ প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত ঘটে। এ কারণে, ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হলেই কেবল ফোন চার্জ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট হাও-টু গিক।
পাশাপাশি, পূর্ণ চার্জ হয়ে গেলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে চার্জে লাগিয়ে রাখার অভ্যাস বদলানো উচিত।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে রাখা
এরইমধ্যে এটি অনেকে জেনে থাকবেন, ফোনের বড় ডিসপ্লেটিই সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি ক্ষয় করছে। স্ক্রিন যত উজ্জ্বল হবে, তত বেশি ফোনের শক্তি খরচ হবে। এর কারণ হল স্ক্রিনের ব্যাকলাইট, যেটি চলতে অনেক শক্তির প্রয়োজন।
তবে, অনেক আধুনিক স্মার্টফোনে এখন ওলেড ডিসপ্লে এসেছে, যাতে ব্যকলাইটের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ওলেড ডিসপ্লেও অনেক শক্তি ক্ষয় করে। ব্যাকলাইটের বদলে ওলেড ডিসপ্লের প্রতিটি পিক্সেল, রং ও আলোর উৎস হিসেবে কাজ করে। তাই পিক্সেলগুলো যত উজ্জ্বল হবে, তত বেশি শক্তি লাগবে।
অব্যবহৃত অ্যাপে লোকেশন অ্যাকসেস দেওয়া
ফোনের স্ক্রিন ব্যাটারি ক্ষয় করবে এটি আন্দাজ করাই যায়। তবে, ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে লোকেশন পরিষেবা চালু রাখলেও ব্যাটারি ক্ষয় হয় এটি অনেকেই জানেন না।
যখন লোকেশন পরিষেবা চালু থাকে, তখন ফোনের জিপিএস রিসিভার, ওয়াই-ফাই রেডিও ও সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে ক্রমাগত কাজ করে।
এ কারণে, অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন কীভাবে লোকেশন পারমিশন ব্যবহার করছে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। অ্যাপগুলোকে লোকেশনের পার্মিশন দেওয়ার সময় ‘হোয়াইল ইউজিং দ্য অ্যাপ’ অপশনটি বেছে নেওয়া উচিত। ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য, কোনো অ্যাপে লোকেশন পার্মিশন ‘অলওয়েজ’ সেট করার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করে নিন।
নোটিফিকেশনের ফলে বার বার স্ক্রিন জ্বলে ওঠা
ডিসপ্লে যত বেশি জ্বলে থাকবে , তত বেশি ব্যাটারি ক্ষয় হবে। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট জিনিস অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে, ফোনের নোটিফিকেশন, যা বার বার ফোনের স্ক্রিন জাগিয়ে তোলে।
বিষয়টি কেবল ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত নয়। ফোনের স্ক্রিন যখনই জেগে উঠবে তখন অনেকগুলো সেন্সর চালু হবে। ফোনটি যখন ‘আইডেল’ বা স্ক্রিন বন্ধ অবস্থায় থাকে তখন নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে, প্রতিটি নোটিফিকেশন কেবল ফোনের ব্যাটারিই জাগিয়ে তুলছে না, বিভিন্ন অ্যাপ বন্ধ হওয়া থেকেও বাধা দিচ্ছে।
তবে, বার বার নোটিফিকেশন আসলেই স্ক্রিন জ্বলে ওঠার ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন, উভত ডিভাইসেই বন্ধ করা যায়।
ফোনের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট চালু করে রাখা
আইফোনে “হেই সিরি” বা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে “ওকে গুগল” এর মতো ওয়েক কমান্ড শুনতে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যাটারি লাইফের ওপর লক্ষণীয় প্রভাব ফেলতে পারে। ফিচারটি চালু করার সময়েই এ সতর্কতা জানানো হয়। ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট স্মার্টফোনের ব্যকগ্রাউন্ডে কাজ করে, এবং ওয়েক কমান্ড শনাক্ত করতে ডিভাইসের মাইক্রোফোন থেকে ক্রমাগত অডিও ইনিপুট শোনার চেষ্টা করে। নির্দিষ্ট ওয়েক কমান্ডের শোনার জন্য ডিভাইসের প্রসেসর ও মাইক্রোফোন চালু থাকতে হয়, যা বেশি ব্যাটারির শক্তি খরচ করে।
তবে, কেউ ফিচারটি বেশি ব্যবহার করে থাকলে ব্যাটারির বিষয়টি কিছুটা আপস করাই যায়। আর ওয়েক কমান্ড ব্যবহার না করলে, নিশ্চিত করুন ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট যেন ব্যাকগ্রাউন্ডে না চলে।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সার্চ করা
নেটওয়ার্কের কাছাকাছি থাকলে ওয়াইফাই বেশ ভালো একটি ফিচার। তবে, কেউ পরিচিত নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকলেও ওয়াইফাই ফিচার চালু করে থাকলে, ফোনটি বিভিন্ন নেটওয়ার্কের জন্য স্ক্যান করতে থাকবে। অনেক বেশি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক রয়েছে এমন জায়গায় বা ব্যবহারকারী যাত্রা পথে থাকলে এ ফিচারটি বেশি ব্যাটারি ক্ষয় করে বলে লিখেছে হাও-টু গিক।
ফলে, ফোনের সঙ্গে যুক্ত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকলে ফোনের ওয়াইফাই ফিচারটি বন্ধ করার অভ্যাস তৈরি করুন।