এ ঘটনাটিকে বিরল তবে ব্যাখ্যাযোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন কারাদেমির চিকিৎসা দেওয়া মেডিকেল দলের নেতৃত্ব থাকা ডাক্তার ড. গোখান ওজদেমির।
Published : 27 Apr 2025, 06:05 PM
১০ বছরেরও বেশি আগে তিনি ছিলেন ডেনমার্কে। এর মধ্যে নিজের দেশ তুরস্কে ফিরে বরাবর তুর্কী ভাষাতেই কথা বলেছেন। এর মধ্যে হঠাৎ করেই মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় আক্রান্ত হন রাহমি কারাদেমির। সেরে উঠে দেখেন তুর্কী ভাষার কিছুই তার মনে নেই!
শুক্রবার তার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা ও জরুরি চিকিৎসা নেওয়ার পর ৬৭ বছর বয়সী রাহমি কারাদেমির ড্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। যদিও এ ভাষায় বছরের পর বছর ধরে কথা বলেননি তিনি।
দশ বছর আগে তুরস্কের কোনিয়া প্রদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর আগে ডেনমার্কে দুই দশক কাটিয়েছিলেন কারাদেমির। গত সপ্তাহে তিনি তুরস্কের ‘সেলকুক ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন হসপিটাল’-এ হাঁটুর অস্ত্রোপচার করান বলে প্রতিবেদনে লিখেছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
অস্ত্রোপচারের দুই দিন পরই হঠাৎ করে তার ডান হাত ও পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলেন কারাদেমির, আক্রান্ত হয় বাকশক্তিও। এরপর তাকে জরুরীভিত্তিতে হাসপাতালে নিলে তার মস্তিষ্কের বাম দিকের অংশে থাকা প্রধান একটি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার মতো অবস্থা দেখতে পান ডাক্তাররা।
দ্রুত অ্যানজিওগ্রাফি করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা অংশটি অপসারণ করেন স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা। এ সফল অস্ত্রপাচারের পর কারাদেমির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হলেও তিনি আর তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারছেন না। বদলে ড্যানিশ ভাষায় ভাববিনিময় করছেন কারাদেমির, যে ভাষায় বহু বছর ধরে কথা বলেননি তিনি।
ভাষার এমন হঠাৎ পরিবর্তন তার স্ত্রী ও সন্তানদের রীতিমতো চমকে দিয়েছে। তার পরিবারের কেউ কেউ ড্যানিশ ভাষায় কথা বলতে পারেন ফলে কারাদেমির সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারছেন তারা।
কারাদেমির বলেছেন, তুর্কি ভাষা বুঝতে পারেন তিনি কিন্তু বলতে পারছেন না। আর এমন পরিস্থিতি যথেষ্ট কষ্ট দিচ্ছে তাকে।
“আমি কেবল কয়েকটি তুর্কি শব্দ মনে করতে পারি। তুর্কি ভাষা বুঝলেও আমি তা বলতে পারছি না। মনে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ড্যানিশ আমার মনের মধ্যে রয়েছে তবে তুর্কি ভাষা একেবারেই আসছে না।”
এসব কথা কারাদেমি ড্যানিশ ভাষায় বললেও তার মেয়ে মেরাল কারাদেমির তা তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করে নিয়েছেন।
মেরাল বলেছেন, তাকে ফের ড্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শুনে পুরো পরিবার হতবাক হয়ে গিয়েছে।
“বছরের পর বছর ধরে বাবা এ ভাষায় কথা বলেননি। এখনও তুর্কি ভাষা বুঝতে পারলেও বলতে পারছেন না তিনি। এজন্য বাবা খুব বিরক্ত। কারণ, তার ধারণা, নিজের মাতৃভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।”
এ ঘটনাটিকে বিরল তবে ব্যাখ্যাযোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন কারাদেমির চিকিৎসা দেওয়া মেডিকেল দলের নেতৃত্ব থাকা ডাক্তার ড. গোখান ওজদেমির।
এ ঘটনাটি ‘ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। আঘাতের ফলে যখন মানুষের মস্তিষ্কের ভাষা কেন্দ্র চাপ পড়ে তখন এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ধীরে ধীরে তুর্কি ভাষায় কথা বলার সক্ষমতা ফিরে পাবেন কারাদেমির।