এ বিশালাকায় গ্রহটির ওজন বৃহস্পতি গ্রহের ১১ গুণ, যা নিজের মূল তারাকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ১৪ বছর।
Published : 17 Sep 2024, 05:03 PM
উত্তরের আকাশে দেখতে পাওয়া গ্রেট বেয়ার নক্ষত্রপূঞ্জে বিশাল এক গ্রহের খোঁজ পাওয়ার দাবি করেছেন জ্যোতির্বিদরা।
পোল্যান্ডের তোরুন শহরে অবস্থিত নিকলস কোপার্নিকাস ইউনিভার্সিটি’র একদল জোত্যির্বিদ পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, এ বিশালাকায় গ্রহটির ওজন বৃহস্পতি গ্রহের ১১ গুণ, যা নিজের মূল তারাকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ১৪ বছর। আর অতি শীতল এই গ্রহটির তাপমাত্রা মাইনাস একশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। সম্প্রতি এ গবেষণার বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এ।
নতুন খুঁজে পাওয়া এ গ্রহটিকে বিজ্ঞানীরা ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ শ্রেণিতে ফেলেছেন। এর মানে, এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো তারাকে প্রদক্ষিণ করে।
ওই তারা খালি চোখে দেখা না গেলেও একটি ছোট টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তা দেখা সম্ভব। বিজ্ঞানীদের দাবি, তারাটি দেখতে সূর্যের মতো হলেও তা এর চেয়ে ২০ শতাংশ বড় ও দ্বিগুন বিশাল।
অনুমান বলছে, ওই তারা ও গ্রহটি প্রায় পাঁচশ কোটি বছর পুরোনো।
মজার বিষয় হল, এ নতুন অনুসন্ধানের যোগসূত্র রয়েছে ঐতিহাসিক একটি টেলিস্কোপের সঙ্গে। গ্রহটির তারা হচ্ছে ‘এইচডি ১১৮২০৩’, যেটি এর আগে হেনরি ড্রেপার টেলিস্কোপের নক্ষত্র তালিকায় উঠে এসেছিল।
টেলিস্কোপটি তৈরি হয়েছিল ১৮৯১ সালে, যা এমন তালিকা তৈরি লক্ষ্যে ব্যবহৃত বিশ্বের অন্যতম প্রথম অ্যাস্ট্রোগ্রাফের নজির।
ড্রেপার টেলিস্কোপ এখন অবস্থান করছে তোরুনের এনসিইউ মানমন্দিরে, যেখানে এটি জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক বিভিন্ন অনুসন্ধানের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
২০ বছরের রহস্য
জ্যোতির্বিদরা এ তারা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন প্রায় ২০ বছর আগে। ২০০৬ সালে তারা এতে এমন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছিলেন, যা আকারে বৃহস্পতি গ্রহের দ্বিগুন। আর মাত্র ছয় দিনেই নিজের মূল তারাকে প্রদক্ষিণ করে এটি।
তবে সে অনুসন্ধানে ইঙ্গিত মিলেছিল, ওই সিস্টেমে হয়ত আরেকটি গ্রহ আছে। তাই টেক্সাস ও ক্যানারি আইল্যান্ডস-এ অবস্থিত বিভিন্ন শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিদরা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করেছেন।
বেশ কয়েক বছর এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ডেটায় অন্য গ্রহের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার জবাব না এলেও ২০২৩ সালের মার্চে নতুন এক অনুসন্ধানে এ দ্বিতীয় গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে, যেটি সম্ভবত ওই তারা প্রদক্ষিণ করা বৃহত্তম গ্রহ।
তবে, জ্যোতির্বিদদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারা এ সিস্টেম নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবেন ভবিষ্যতে এমন আরও গ্রহ খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশায়। গবেষণাটি নিয়ে কাজ করছেন অনেক শিক্ষার্থী এমনকি তরুণ গবেষকরাও, যা মহাবিশ্ব নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধারণা আরও গভীরভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।