নারীদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকর অ্যালঝেইমার প্রোটিন বেশি থাকে এবং তাদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো নানা লক্ষণও আগেভাগেই দেখা যায়।
Published : 21 Mar 2025, 03:34 PM
সময়ের আগে মেনোপজ নারীদের মধ্যে অ্যালঝেইমার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘সানিব্রুক হেলথ সায়েন্সেস সেন্টার’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র গবেষকরা বলেছেন, যেসব নারী গড়পড়তা বয়সের আগে মেনোপজের মধ্য দিয়ে যান তাদের দুর্বল সিন্যাপটিক স্বাস্থ্যের কারণে স্মৃতিশক্তি দ্রুত কমে যেতে পারে।
গবেষণায় ‘রাশ ইউনিভার্সিটি মেমোরি অ্যান্ড এজিং প্রজেক্ট’-এ অংশ নেওয়া দুইশো ৬৮ জন নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।
তারা বলছেন, যে নারীদের মেনোপজ আগে হয়েছে তাদের স্বাস্থ্যে দুর্বল সিন্যাপটিক লক্ষণ দেখা গেছে। দুর্বল সিন্যাপটিকের মানে হচ্ছে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়া। এ নারীরা দ্রুত স্মৃতিশক্তি কমার বিষয়টিও অনুভব করেছেন।
পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যাক নারী অ্যালঝেইমার রোগে আক্রান্ত হন। নারীদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকর অ্যালঝেইমার প্রোটিন বেশি থাকে এবং তাদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো নানা লক্ষণও আগেভাগেই দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
নারীরা কেনো অ্যালঝেইমার রোগের জন্য বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন সে সম্পর্কে নতুন ধারণা মিলেছে এ গবেষণায়।
সুস্থ মস্তিষ্কের সংযোগ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দেহের এস্ট্রোজেন হরমোন। আর এ হরমোনটি মেনোপজের সময় কমে যায়।
নারীরা সময়ের আগে মেনোপজের মধ্য দিয়ে গেলে তাদের দেহে এস্ট্রোজেনের মাত্রা দ্রুত কমতে থকে, যা তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণায় উঠে এসেছে, এস্ট্রোজেনের এই কমে যাওয়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ অর্থাৎ সিনাপসকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে স্মৃতিশক্তিতে।
গবেষকরা বলছেন, মেনোপজের সময় যে নারীরা মেনোপজাল হরমোন থেরাপি নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এ প্রবণতার গুরুতর প্রভাব কম দেখা গেছে।
গবেষণায় এমন ইঙ্গিতও মিলেছে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে হরমোন থেরাপি। তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
নারীদের হরমোন স্বাস্থ্য কীভাবে মস্তিষ্কের বয়সের ওপর প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র পিএইচডি শিক্ষার্থী ড. ম্যাডেলিন উড আলেকজান্ডার।
তিনি বলেছেন, মস্তিষ্কের বিভিন্ন সংযোগ রক্ষা করার জন্য সুপরিচিত এস্ট্রোজেন। তবে অ্যালঝেইমার রোগে এর ভূমিকা সম্পর্কে খুব কম গবেষণা হয়েছে।
সময়ের আগে মেনোপজ, হরমোন থেরাপি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে এ গবেষণা।
গবেষকরা বলছেন, এ নিয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট উত্তর না মিললেও এ গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে নারীদের দেহের হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তন অ্যালঝেইমারের ঝুঁকিতে মূল ভূমিকা নিতে পারে।
যে নারীরা সময়ের আগে মেনোপজের মধ্য দিয়ে যান তারা নিজেদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।