‘চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর গবেষকরা সৌর প্যানেলের বর্জ্য থেকে সাশ্রয়ী ও আকারে ছোট সিলিকনের অ্যানোড তৈরি করেছেন।
Published : 24 Jul 2024, 02:06 PM
সম্প্রতি সৌর বর্জ্য থেকে শক্তিশালী ও টেকসই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরির নতুন উপায় খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ যুগান্তরী উদ্ভাবনের কাজটি করেছেন ‘চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর ‘কিংডাও ইনস্টিটিউট অফ বায়োএনার্জি অ্যান্ড বায়োপ্রসেস টেকনোলজি (কিউআইবিইবিটি)’র গবেষকরা।
তারা নতুন এক ধরনের ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে ‘রিসাইকলড ফটোভোলটাইক’ বা সৌর প্যানেলের বর্জ্য থেকে সাশ্রয়ী ও আকারে ছোট সিলিকনের অ্যানোড তৈরি করেছেন।
এই গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার সাসটেইনএবিলিটি’-তে।
প্রচলিত ড্রাইসেল ব্যাটারির গ্রাফাইট অ্যানোডের তুলনায় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ক্ষমতা বেশি থাকে এবং এর কৃতিত্ব সিলিকন অ্যানোডের।
তবে, এর কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন – চার্জ নেওয়া ও ছেড়ে দেওয়ার সময় বিভিন্ন সিলিকন অ্যানোডের আকার বাড়ে ও কমে। এর ফলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
অধ্যাপক কুই গুয়াংলেইয়ের নেতৃত্বে এ গবেষণায় গবেষকরা ফেলে দেওয়া সৌর প্যানেল থেকে পাওয়া অতি ক্ষুদ্র আকারের সিলিকন কণা ব্যবহার করে এই সমস্যাটিরে সমাধান করেছেন।
গবেষণা দলটি এই ছোট মাইক্রোমিটার আকারের বিভিন্ন সিলিকন কণাকে (μm-Si) বিশেষভাবে নকশা করা ইথারভিত্তিক ইলেক্ট্রোলাইটের সঙ্গে মিলিয়ে রোমাঞ্চকর ফলাফল পেয়েছেন।
মাইক্রো আকারের সিলিকন কণার বিভিন্ন অ্যানোড চমৎকার ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে। ৯৯.৯৪ শতাংশ গড় দক্ষতা বজায় রেখে ও চার্জিং এবং ডিসচার্জিংয়ের ২০০ চক্রের পরেও এদের প্রাথমিক ক্ষমতার ৮৩.১৩ শতাংশ ধরে রাখতে পেরেছে।
“এই কাজটি কেবল সিলিকন কণার জন্য আরও টেকসই উৎসের ইঙ্গিতই দেয় না বরং মাইক্রো-আকারের বিভিন্ন সিলিকন অ্যানোড উপাদানের মুখোমুখি নানা বড় চ্যালেঞ্জও ঠেকায়,” বলেছেন এ গবেষণার প্রথম লেখক ড. লিউ তাও।
এইসব অ্যানোডের সাফল্যের কারণ, এদের অনন্য সলিড-ইলেক্ট্রোলাইট ইন্টারফেজ (এসইআই) রসায়ন, যা একটি নতুন ইলেক্ট্রোলাইট সূত্রের মাধ্যমে তৈরি হয়।
এ সূত্রে ১,২-ডাইঅক্সেন ও ১,২-ডাইথোক্সিথেনের মিশ্রণে দ্রবীভূত ৩ এম লিপিএফ ৬ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি একটি ‘দ্বৈত-স্তর এসইআই’ তৈরি করে, যা নমনীয় হলেও শক্তিশালী ও বিভিন্ন ভাঙা সিলিকন কণাকে একসঙ্গে ধরে রাখে। পাশাপাশি অযাচিত বিভিন্ন বিক্রিয়া কমিয়ে আয়নিক পরিবাহনকে উন্নত করে।
নতুন অ্যানোড ও ইলেক্ট্রোলাইট এর সংমিশ্রণটি ‘এনসিএম ৮১১’-এ পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। মাইক্রো আকারের বিভিন্ন সিলিকন কণার (μm-Si) পাউচ কোষ ৮০ বার চার্জ হওয়া পর্যন্ত টিকেছে ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ৩৪০.৭ কিলোওয়াট আওয়ার সরবরাহ করেছে, যেটিকে ‘বিষ্ময়কর’ বলেছেন গবেষকরা। প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় এটি অনেক উন্নত।
এ গবেষণার সহ লেখক ড. ডং তিয়ানতিয়ান পরিবেশগত বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরে বলেছেন, “বাতিল হয়ে যাওয়া সৌর প্যানেল থেকে সিলিকন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ফোটোভোলটাইক বর্জ্যের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব উভয়ই কম। বর্জ্যকে মূল্যবান ব্যাটারি উপাদানে পরিণত করলে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দাম কমবে ও এগুলো আরও সহজলভ্য হবে।”