ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হচ্ছে, মাইক্রোস্কোপিক বা ক্ষুদ্র আকারের উদ্ভিদ, যা সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় বাস করে এবং পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
Published : 04 Oct 2024, 12:31 PM
সমুদ্র উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের একটি ‘অদৃশ্য বন’ মহাসাগরের নীচের কিছু অংশে বেড়ে উঠছে বা সমৃদ্ধ হচ্ছে — এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
মাইক্রোস্কোপিক বা অতি ক্ষুদ্র আকারের উদ্ভিদ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, যা সমুদ্রপৃষ্ঠে ভাসমান অবস্থায় বা সমুদ্রের গভীরে বাস করে। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উদ্ভিদ এরা।
পৃথিবীর প্রাথমিক উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকের জন্য এই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন দায়ী বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। যার মানে, মাটিতে থাকা গাছপালার মতো জ্যান্ত কোষ তৈরি করতে সূর্যের আলো ব্যবহার করে এরা।
গবেষণায় সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বিভিন্ন দল কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তা বোঝার উপর নজর দেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটার’-এর বিজ্ঞানীরা।
এজন্য সমুদ্রের পৃষ্ঠ ও উপ-পৃষ্ঠের স্তরে বসবাসকারী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন গবেষকরা। এখানে উপ-পৃষ্ঠ বলতে বোঝানো হয়েছে সমুদ্রের গভীর অংশ, যেখানে সূযের আলো কম পৌঁছায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এ। এতে উঠে এসেছে, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের দুটি দল জলবায়ু পরিবর্তন অর্থাৎ উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
গত দশ বছরে সমুদ্র উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে বসবাসকারী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মোট পরিমাণ। অর্থাৎ পানির উষ্ণতা বাড়ার পরও সমুদ্রের গভীরে বসবাসকারী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কম আলোর মতো পরিস্থিতিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
অন্যদিকে সমুদ্র পৃষ্ঠে বসবাসকারী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মধ্যে ক্লোরোফিল কমে যাচ্ছে বলে লক্ষ্য করেন গবেষকরা। ক্লোরোফিল এক ধরনের সবুজ রঞ্জক, যা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য সূর্যের আলো ধারণে সহায়তা করে।
সালোকসংশ্লেষণের জন্য ক্লোরোফিল থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রের পৃষ্ঠের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সামগ্রিক পরিমাণ সেভাবে বাড়েনি বা একই রয়ে গেছে।
গবেষণাটি করা হয়েছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সারগাসো সাগর পর্যবেক্ষণকারী ‘বারমুডা আটলান্টিক টাইম-সিরিজ স্টাডি (বিএটিএস)’-এর ৩৩ বছরের ডেটা বা তথ্য ব্যবহার করে।
এ তথ্য থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, সমুদ্রের উপরের স্তর, যা সমুদ্র পৃষ্ঠের ‘মিক্সড লেয়ার বা মিশ্র-স্তর’ হিসাবে পরিচিত সেটির গভীরতা কমেছে। কারণ গত দশক থেকে সমুদ্র আরও দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে।
সমুদ্রের এসব পরিবর্তন বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সামুদ্রিক খাদ্যজালের ভিত্তি গঠন করে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন।
ছোট আকারের সামুদ্রিক প্রাণীর প্রাথমিক খাদ্য উৎস এসব ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, যা পরে মাছ ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীসহ বড় আকারের প্রাণীরা খেয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদ, যা পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
গবেষণার এসব ফলাফলের গুরুত্বের উপর জোর দেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটার’-এর অধ্যাপক ড. জোহানেস ভিলজোয়েন।
“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় সমুদ্রের গভীরে বাস করা জ্যান্ত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। সাধারণত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন পর্যবেক্ষণের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহের ছবির উপর নির্ভর করতে হয় আমাদের, যা সমুদ্র পৃষ্ঠের গভীরে দেখতে পারে না। তাই সমুদ্রের গভীরে কী ঘটছে তা ট্র্যাক করার জন্য আমাদের আরও ভাল উপায় দরকার।”