অনুমান বলছে, স্টারলিংক টার্মিনালের কালোবাজার ছড়িয়ে আছে ইউক্রেইনের দখল করা অংশগুলো থেকে সুদান পর্যন্ত।
Published : 10 Apr 2024, 05:15 PM
ইউক্রেইনে স্টারলিংকের ইন্টারনেট টার্মিনাল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে।
বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন বাণিজ্য দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে, যেখানে ইঙ্গিত মিলেছে, ইউক্রেইনের পূর্বাংশ ও ক্রিমিয়ায় আক্রমণের পরিকল্পনার জন্য ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স-এর তৈরি টার্মিনালগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ছাড়া, যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহার করা যেতে পারে স্টারলিংকের টার্মিনালগুলো।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইসব টার্মিনাল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কাছে পৌঁছাচ্ছে কালো বাজারী বিক্রেতাদের এক জটিল নেটওয়ার্ক থেকে, যদিও দেশটিতে স্টারলিংকের ডিভাইস বিক্রি নিষিদ্ধ।
ডব্লিউএসজে এদের মধ্যে কয়েকজন বিক্রেতার পিছু নিয়ে দেখে, তারা এইসব টার্মিনাল রাশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ডেলিভারি ঠিকভাবে হয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করছে। প্রতিবেদনে আরও ইঙ্গিত মিলেছে, এর মধ্যে কিছু টার্মিনাল কেনা হয়েছিল ইকমার্স সাইট ‘ইবে’ থেকে।
অনুমান বলছে, স্টারলিংক টার্মিনালের কালোবাজার ছড়িয়ে আছে ইউক্রেইনের দখল করা অংশগুলো থেকে সুদান পর্যন্ত। এর মধ্যে অনেক সুদানি বিক্রেতা টার্মিনালগুলো বিক্রি করছেন নিজ দেশের সরকারি বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’-এর কাছে, যাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন, অধিকারকর্মীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ, যৌন নিপীড়ন ও বিভিন্ন জনবসতি একেবারে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডব্লিউএসজে বলছে, এমন শত শত টার্মিনাল ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’-এর কাছে গিয়ে পৌঁছেছে।
গেল ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর স্টারলিংক টার্মিনাল ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ বলেন, “আমাদের জানা মতে, রাশিয়ার কাছে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে স্টারলিংকের কোনও টার্মিনাল বিক্রি হয়নি।
রয়টার্সের তথ্য অনুসারে, এমন অভিযোগ নাকচ করেছে ক্রেমলিনও। এর পরও ডব্লিউএসজে বলছে, ‘আমেরিকার কিছু প্রতিপক্ষ ও অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের’ কাছে এমন ‘হাজার হাজার সাদা পিৎজার বাক্স আকারের ডিভাইস’ আছে।
সংবাদ সাইট বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মাস্ককে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট জনপ্রতিনিধিরা।
তারা আরও বলেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য লঙ্ঘন’। কারণ প্রতিটি একক টার্মিনাল নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার সক্ষমতা আছে স্টারলিংকের, যেখানে কোম্পানির প্রতিটি পণ্যে এমন ‘জিওফেন্সিং’ প্রযুক্তি যুক্ত আছে, যা নিষিদ্ধ দেশগুলোয় এর ব্যবহার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে তৈরি। তবে, কালো বাজারী বিক্রেতাদের কাছে এ মারপ্যাঁচ থেকে বেরোনোর কোনও উপায় আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
মাস্ক এর জবাবে বলেন, স্টারলিংক কখনওই ক্রিমিয়ার আশপাশের এলাকায় সক্রিয় ছিল না, তাই সেখানে নিষ্ক্রিয় করার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার নৌ বহরে ইউক্রেইনের আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনার পরপরই এ বিতর্কিত নীতিমালা জারি করার সিদ্ধান্ত এসেছে।
অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে যুদ্ধের শুরুর দিনগুলোয় এক হাজার তিনশ’র বেশি স্টারলিংক টার্মিনালে প্রবেশাধিকার হারিয়েছিল ইউক্রেইন। আর প্রতিটি ইউনিট কার্যকর রাখার জন্য ইউক্রেইনের কাছে মাসিক আড়াই হাজার ডলার করে আর্থিক ফি নিতো স্পেসএক্স, সে হিসাবে সবগুলো টার্মিনালের খরচের যোগফল ছিল সাড়ে ৩২ লাখ ডলার।
এ আর্থিক ফি কোম্পানির উচ্চমূল্যের ‘প্রিমিয়াম’ সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ছাড়া, ইউক্রেইনকে তিন হাজার ছয়শটিরও বেশি টার্মিনাল অনুদান হিসেবেও দিয়েছে স্পেসএক্স।
কালোবাজারে স্টারলিংকের টার্মিনাল বিক্রি নিয়ে ডব্লিউএসজে’র প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি স্পেসএক্স।