বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পদার্থবিদদের সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যা আঁকারে বাড়ির মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রায় সমান।
Published : 11 Mar 2024, 01:27 PM
ইতালির সবচেয়ে রহস্যময় শহর নেপলস। এ শহরের নিত্যদিনের গাড়ির হর্ন ও অপেরা মিউজিকের আওয়াজের নিচে ভূগর্ভস্থ এক নীরব রহস্য খুঁজে পেয়েছেন ইতালির এক প্রত্নতাত্ত্বিক, যা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার তিনশ বছর আগের প্রেক্ষাপটে।
প্রাচীন রোমানদেরও আগে ইতালির এ শহরে ঘাঁটি ছিল প্রাচীন গ্রিকদের। আর তারা এ শহরের বিভিন্ন প্রাচীন সমাধির ভেতর জীবন ও মৃত্যুর সংকেত রেখে গেছেন বলে জানিয়েছেন ইতালির প্রত্নতাত্ত্বিক রাফায়েলা বসো।
শহরের এক সমাধির দিকে টর্চলাইট দিয়ে রাফায়েল দেখতে পান, এর ভেতর সমাহিত মানুষের পা।
রাফায়েলার ব্যাখ্যা অনুসারে, এ সমাধিতে “দুইজন আছেন, যাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী।”
“সাধারণত এ ধরনের সমাধিতে আট বা তার চেয়েও বেশি মরদেহ পাওয়া যায়।”
এ সমাধির প্রথম ঝলক মিলেছিল ১৯৮১ সালে, খননের মাধ্যমে।
বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পদার্থবিদদের সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যা আকারে বাড়ির মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রায় সমান।
এ যুগান্তকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত শত ফুট পাথরের ভেতরে কী আছে, তা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন ভ্যালেরি টিউকভের মতো কণা পদার্থবিদরা। এমনকি সেগুলোর ওপর ৬০ ফুট উচ্চতার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না সে দেখায়।
ভ্যালেরি এ যন্ত্রটিকে স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের পাশে রাখার সময় বলেছেন, “এটি রেডিওগ্রাফির মতোই কাজ করে।”
প্রত্নতাত্ত্বিকরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছিলেন, এই সমাধি কক্ষের দেয়ালের অন্য পাশে একটি অতিরিক্ত চেম্বার আছে। তবে, তা দেখতে দেয়ালটি ভেঙে ফেলতে হতো প্রত্নতাত্ত্বিকদের।
তবে নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্রের সহায়তায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখন নিশ্চিতভাবেই শনাক্ত করতে পারবেন যে, সমাধির ভেতর কী আছে।
বাস্তবে এ প্রযুক্তির কার্যকারিতা বুঝতে ভ্যালেরি রাফায়েলকে ‘ইউনিভার্সিটি অফ নেপলস’-এ নিজের গবেষণাগারে নিয়ে যান, যেখানে নতুন আবিষ্কৃত এই যন্ত্র থেকে পাওয়া নানা ছবি পরিমার্জন বা পরিষ্কার করে দেখেছেন গবেষকরা।
বিশেষ করে, এ প্রযুক্তির সহায়তায় মিউয়ন নামের একটি মৌলিক কণিকা খুঁজে দেখছেন গবেষকরা, যা মূলত বিং ব্যাংয়ের অবশিষ্টাংশে থাকা মহাজাগতিক রশ্মি।
যন্ত্রটি কোনও কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মিউয়ন চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলোর পরিমাণও হিসেব করে দেখে। পরবর্তীতে, প্রবাহিত মিউয়নের সংখ্যা ‘ট্র্যাকিংয়ের’ মাধ্যমে ওই কাঠামোর ভেতরের ঘনত্ব নির্ধারণ করে এটি।
মাত্র ২৮ দিনের ব্যবধানে সমাধি কক্ষটিতে প্রায় এক কোটি মিউয়ন চিহ্নিত করেছে নতুন যন্ত্রটি।
“এতে মিউয়ন খুঁজে পাওয়া গেছে,” বলেন টিউকভ। আর এ ক্ষেত্রে একটি ‘সুইগ্লি লাইন (এমন রেখা যা অনিয়মিত উপায়ে বাঁকানো যায়)’-এর প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যা তিনি শনাক্ত করেছেন একটি মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে।
কয়েক মাসের কঠোর বিশ্লেষণের পর, সেই লুকানো সমাধি কক্ষের একটি ৩ডি মডেল সমন্বিত করেছেন ভ্যালেরি ও তার গবেষণা দল। এর ফলে, বহু শতাব্দী ধরে মানুষের কাছে অজানা ছিল, এমন তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে নতুন এই যন্ত্রের সহায়তায়।