বট ও বট-এর মতো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মাস্ক দিলেও এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এক্স-এ কমেনি।
Published : 17 Feb 2025, 02:06 PM
ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণের পর থেকেই কয়েক মাস ধরে এ প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। মার্কিন এই ধনকুবের কেনার পর প্লাটফর্মটির নাম বদলে রাখেন এক্স।
ড্যানিয়েল হিকির নেতৃত্বে এ গবেষণাটি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে’-এর গবেষকরা। এতে উঠে এসেছে, মাস্ক সিইও থাকাকালীন এক্স-এ বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সাপ্তাহিক হার ছিল তার প্লাটফর্মটি কেনার আগের বিভিন্ন মাসের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি।
বট ও বট-এর মতো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মাস্ক দিলেও এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এক্স-এ কমেনি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও বট বাড়ছে
আগের বিভিন্ন গবেষণা নিশ্চিত করেছে, অনলাইন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ও বাস্তব জগতের ঘৃণাভিত্তিক অপরাধের। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনসাধারণের আলোচনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এসব প্ল্যাটফর্ম ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে, স্ক্যাম প্রচার করতে ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
ক্ষতিকর বিভিন্ন কনটেন্টের সংখ্যা বাড়াতে ও অনলাইন আলোচনাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের সমস্যায় ভূমিকা রাখে বট ও নানা ভুয়া অ্যাকাউন্ট।
২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর এক্স অধিগ্রহণ করেন মাস্ক। এরপর থেকেই প্লাটফর্মটিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দ্রুত বেড়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে গবেষণায়। ওইসময় মাস্ক বলেছিলেন, এক্স থেকে বিভিন্ন বট অ্যাকাউন্ট সরানো ও ভুল তথ্য কমিয়ে আনতে কাজ করবেন তিনি।
তবে গবেষণায় উঠে এসেছে, মাস্ক এক্স অধিগ্রহণের পর বটের কার্যকলাপ বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কোনটিই কমেনি।
এ প্রবণতা রয়ে গেছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ২০২২ সালের শেষ থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এক্স-এ ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অননুমোদিত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেছেন হিকি ও তার গবেষণা দলটি।
তারা বলছেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সাময়িক ছিল না, বরং ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এই ধারা।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের আরও প্রকাশ
গবেষণায় দেখা গেছে, সমকামী, ট্রান্সফোবিক ও বর্ণবাদী গালি’সহ বিদ্বেষমূলক ভাষা পুরো সময় জুড়েই ছিল প্লাটফর্মটিতে। এ ধরনের ভাষার বিভিন্ন পোস্ট আগের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ‘লাইক’ পেয়েছে। যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, আরও বেশি ব্যবহারকারী বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এবং এগুলোর সংস্পর্শে আসছেন।
একই সময়ে বট অ্যাকাউন্টের কার্যকলাপও কমে আসার লক্ষণ দেখায়নি। গবেষকরা বলেছেন, এক্স-এ বট-এর মতো বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, যা মাস্কের বট অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপের সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষিক।
প্ল্যাটফর্মটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কমে এসেছে বলে এক্স-এর প্রকাশ্যে দেওয়া বিবৃতিকে চ্যালেঞ্জ করেছে এ গবেষণা। তবে গবেষকরা বলেছেন, কোম্পানির ভেতরের ডেটায় প্রবেশ না করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়ার জন্য মাস্কের নেতৃত্বকে সরাসরি দায়ী করতে পারবেন না তারা।
গবেষণায় এক্স-এর কনটেন্ট মডারেশন নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। পাশাপাশি ক্ষতিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে প্লাটফর্মটির শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও উঠে এসেছে গবেষণায়।
গবেষণারপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ।