সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বড় দরপতনের ধাক্কা সামলে সোমবার পুঁজিবাজারে বাড়ল মূল্য সূচক। যতগুলো কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে, বেড়েছে তার আড়াইগুণ।
তবে বিনিয়োগকারীরা তাতে আশান্বিত হতে পারছেন না। কারণ দুইশর বেশি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইসে। এই দরে ক্রেতা নেই বললেই চলে। গত কয়েক মাস ধরেই নামমাত্র কিছু শেয়ার হাতবদল হচ্ছে।
৬০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রোববার ইউনিলিভারের শেয়ারদর ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক ২৬ পয়েন্ট বাড়লেও সব মিলিয়ে পতন হয় ২৫ পয়েন্ট। সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমা সম্ভব নয়, এমন বাস্তবতায় এটিকে বড় পতন হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
শঙ্কা নিয়ে সোমবারের লেনদেনে যাওয়া পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আর বড় ক্ষতির কারণ ঘটেনি। এদিন বেড়েছে ৯৫টি কোম্পানির শেয়ারদর, বিপরীতে দর হারিয়েছে ৩৮টি। ২০১টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে।
এদিনও ৫০টিরও বেশি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪৩৩ কোটি টাকার কিছু বেশি।
গত কয়েক মাস ধরেই অল্প কিছু কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এদিনও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
কেবল ২০টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ২৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। আর শীর্ষ ১০ কোম্পানিতে লেনদেন ছিল ১৭৭ কোটি ৬৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
এক হাজারের কম শেয়ার লেনদেন হয় মোট ৯৮টি কোম্পানির। একশটির কম শেয়ার হাতবদল হয় ৫৩টি কোম্পানির। কেবল একটি করে শেয়ার লেনদেন হয় ১০টি কোম্পানির।
গত ৩১ জুলাই থেকে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও দরপতনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন শঙ্কা থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তাতে রাজি নয়।
প্রায়ই দেখা যায়, এক বা দুই দিন কিছু কোম্পানির শেয়ারদর থাকে দরবৃদ্ধির শীর্ষে, দুদিন যেতে না যেতেই তা থাকে দরপতনের শীর্ষে।
রোববার ২০ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ইউনিলিভারের শেয়ার পরের দিনই লেনদেন হয় দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় নেমে। তিন হাজার টাকার বেশি দাম থাকায় একদিনে ৫ শতাংশের বেশি দাম কমা সম্ভব ছিল না। কমেছে এই পরিমাণই।
গত কয়েক মাসের মতই দরবৃদ্ধির শীর্ষে তালিকায় লোকসানি কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে, এমন ১০টি কোম্পানির চারটিই লোকসানি।
এর মধ্যে ৯ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া চারটি কোম্পানির মধ্যে শ্যামপুর সুগার তার মূলধনের কয়েক গুণ বেশি লোকসান দিয়ে আসছে বছরের পর বছর থরে। ইউনিয়ন ক্যাপিটালেওর লোকসানও তার মূলধনের চেয়ে বেশি।
৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া বিডিওয়েল্ডিংয়ের উৎপাদন বন্ধ, ৬.৭৮ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ গত এক যুগের লভ্যাংশ নিতে পারেনি লোকসানের কারণে।
আরও পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি, চারটির বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি, ১৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
৯টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ২৩টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
এদিন লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাত। এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৮৩ কোটি টাকার বেশি, যা মোট লেনদেনের ২১.২৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জীবন বিমা খাতে হাতবদল হয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৮.৭৮ শতাংশ।
তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে ছিল যথাক্রমে খাদ্য এবং সাধারণ বিমা খাত। মোট লেনদেনের যথাক্রমে ৯.৭৬ এবং ৭.২২ শতাংশ হয় এই দুই খাতে।
অন্যদিকে শেয়ারদরের দিক দিয়ে সবার সামনে ছিল সাধারণ বিমা খাত। এই খাতে ৩৬টি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে কেবল একটির। চারটি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।