এক তদন্তে অসহযোগিতা করায় এই শাস্তি বলে বিএসইসি জানিয়েছে। তবে কোম্পানির মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা।
Published : 18 Jan 2023, 09:02 PM
তদন্তে অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ‘আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি’র উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি।
বুধবার বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারবে না।
একইসঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (ইউএফএস) পরিচালিত কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতেও পারবে না আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি। এই আদেশ অনতিবিলম্বে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ইউএফএস ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর বিদেশে পালিয়েছেন বলে সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরোয়। এই ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) হিসেবে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
আর আইসিবি ফান্ডগুলো নিরীক্ষার দায়িত্বভার দিয়েছিল আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি ও রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুই নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে।
এর মধ্যে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে বিএসইসি বলছে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গঠিত বিএসইসির তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করেনি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানিয়েছে, ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড পরিচালিত চার মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত তদন্তের শুনানিতে উপস্থিত হয়নি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ‘আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড একাউনট্যান্টস। এতে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটির অপেশাদারি আচরণ প্রকাশ পেয়েছে বলে আদেশে বলেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
অবশ্য তদন্ত কমিটির শুনানিতে উপস্থিত থাকা নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য এসেছে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানির তরফে।
নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার আহমেদ জাকের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউএফএসের অডিট আমি করিনি। আমার দুই পার্টনার করেছেন। এর মধ্যে শফিকুল আলম নামে যিনি ছিলেন, তদন্ত কমিটির ডাকা বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি অসুস্থ থাকায়। তিনি ওই সময়ে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তিনি লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন। দিন পাঁচেক আগে তিনি মারা গেছেন।
“অন্যজন জাবেদ আলী মৃধা গিয়েছিলেন কমিশনে। আমাদের কাছে থাকা কাগজ ও স্টেটমেন্ট জমা দিয়েছি।”
আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার এম জাবেদ আলী মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিএসইসির ডাকা শুনানিতে উপস্থিত ছিলাম। লিখিত আকারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমার পার্টনার অসুস্থ থাকায় শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি।”
সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএসইসির কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যে চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছিল, সেগুলো হলো- ইউএফিএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ও ইউএফএস ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড।
সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি হিসেবে ‘ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড” বিএসইসির লাইসেন্স পেয়েছিল ২০১০ সালে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে কোম্পানিটির মালিকানার হাতবদল হয়।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিএসইসির কাছ থেকে ৪৬০ কোটি টাকা মূল্যের সাতটি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করার অনুমতি পেয়েছে ইউএফএস। যার মধ্যে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড ইতিমধ্যে পরিচালিত হচ্ছে, আর বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।