পাঁচ দিনের ভারিত গড় অথবা আগের ‘ফ্লোর প্রাইসের’ মধ্যে যেটা কম, সেটাকেই শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে।
Published : 02 Mar 2023, 02:46 PM
পুঁজিবাজারে ১৬৯টি কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’ পুনর্বহাল করার পর অনেকগুলো কোম্পানির শেয়ার দর উল্টো পড়ে গেছে। ফলে ক্ষতি আরও বাড়ল এসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের।
‘ফ্লোর প্রাইস’ প্রত্যাহারের পর যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া ‘ফ্লোর প্রাইস’ আগেরটাই রয়ে গেছে। আর নতুন সিদ্ধান্তের পর এমন প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে বৃহস্পতিবার।
বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে সূচক ০.৯৪ পয়েন্ট কমেছে, ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কমে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকায়।
দর বৃদ্ধির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যাও এদিন দেখা গেছে বেশি। বেড়েছে ৭২টি দর, কমেছে ৮৮টির। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৪৯টি শেয়ার। ৮১টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
গত ২২ ডিসেম্বর থেকে এসব কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’ উঠিয়ে দিয়ে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ করে দিয়েছিল বিএসইসি। এরপর টানা ৪৮ বা ৪৯ কর্মদিবস দর হারাতে দেখা যায় কিছু কোম্পানির শেয়ারে।
বিনিয়োগকারীদের হতাশার মধ্যে বুধবার বিএসইসি এসব কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’ ফিরিয়ে এনে জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত লেনদেনের গড় দাম হবে নতুন ‘ফ্লোর প্রাইস’।
তবে গত পাঁচ কর্মদিবসে একই দরে লেনদেন হওয়া বেশ কিছু কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’ আরও কমে ঠিক করা হয়।
এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান কিছু জানাতে পারেননি।
পরে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম জানান, গত পাঁচ দিনের ভারিত গড় অথবা আগের ‘ফ্লোর প্রাইসের’ মধ্যে যেটা কম, সেটাকেই শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ধরতে হবে। তাই এমনটি হয়েছে।
নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে দাম কমল যেগুলোর
গত ২২ ডিসেম্বর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর ১০ টাকার নিচে থাকা বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেও আর কমতে পারছিল না। কারণ ‘এক শতাংশের’ বাঁধায় ১০ টাকার কমে থাকা কোম্পানির শেয়ারদর কমার সুযোগ ছিল না।
কিন্তু পুনর্বহালের পর সেসব কোম্পানির আগের ‘ফ্লোর প্রাইস’ ফিরে আসায় সেগুলোর দর কমার সুযোগ তৈরি হয়।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সের দর ৯.৬৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের দর ৯.০৯ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের দর ৮.১০ শতাংশ, ফাস ফাইনান্সের দর ৬.৮৯ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৫.১৭ শতাংশ, উসমানিয়া গ্লাসের পর ৪.৬৭ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.৪৬ শতাংশ, আইসিবি সেকেন্ড এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট ৪.৩৯ শতাংশ, বিআইএফসি ৪.০৪ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের দর ৩.৮৪ শতাংশ কমেছে।
এমন আরও বেশ কিছু কোম্পানি আছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে একদিন ছাড়া প্রতিদিনই দর হারাতে থাকা তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের দর কমেছে ৩.১৯ শতাংশ। যদিও এর আগে এক শতাংশের বেশি দর কমা সম্ভব ছিল না।
স্বল্প মূলধনীতেই আগ্রহ
আগের কয়েক মাসের মত এদিনও স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো ‘ফ্লোর প্রাইস’ থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে কেবল একটির মূলধন একশ কোটি টাকার বেশি। একটি ৬০ কোটি টাকার বেশি, একটি ৫০ কোটি টাকার বেশি।
১০ শতাংশ বেড়ে এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জিলবাংলা সুগার মিলস, যেটির দর টানা ৪৮ কর্মদিবস কমার পর মঙ্গলবার কিছুটা বেড়েছিল।
৯.৯৮ শতাংশ বেড়েছে টানা ৪৯ কর্মদিবস দর হারানো শ্যামপুর সুগার মিলস। একই হারে বেড়েছে এডিএন টেলিকমের শেয়ারদর।
টানা ৪৭ কর্মদিবস দর হারানোর পর ৮.৩০ শতাংশ বেড়েছে খাদ্য খাতের মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর।
শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল– বিজিআইসি, হাক্কানি পাল্প, জেমিনি সি ফুড, লিগেসি ফুটওয়্যার, ডেল্টা লাইফ এবং আমরা নেটওয়ার্ক।
সব মিলিয়ে চারটি কোম্পানির দর প্রায় ১০ শতাংশ, দুটির ৮ শতাংশের বেশি, তিনটির ৫ শতাংশের বেশি, দুটির চার শতাংশের বেশি বেড়েছে।
আরও তিনটি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৬টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।