এবার বীমার ঢালাও পতন, উত্থানে লোকসানি কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি দর কমেছে এমন ২০টি কোম্পানির ১৯টিই বীমা খাতের। অন্যদিকে দর বেড়েছে এমন ১০টির ছয়টি লোকসানি কোম্পানি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 09:10 AM
Updated : 22 May 2023, 09:10 AM

মাসের পর মাস ঘুমিয়ে থাকার পর বীমা খাতের শেয়ারের যে তেজিভাব দেখা দিয়েছিল, তা নতুন করে আর্থিক ক্ষতির কারণ হল বিনিয়োগকারীদের। আগের সপ্তাহে শেয়ারদর বাড়তে থাকার মধ্যে যারা নতুন করে কিনেছেন, তারা নতুন করে টাকা খুইয়েছেন।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার পুঁজিবাজারে বীমা খাতে ঢালাও দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেন আগের দিনের অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।

বীমার উত্থানের সময় দর হারানো স্বল্প মূলধনী ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর তেজিভাব ফিরে এসেছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা প্রায় সব কোম্পানিই এই ধরনের।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বীমা খাতে যে তেজিভাবে দেখা দিয়েছিল, তাতে সব কটি কোম্পানির শেয়ারদর দেয় অস্বাভাবিক লাফ। কোনো কোনো কোম্পানির দর বেড়ে ১০ গুণেরও বেশি হয়ে যায়। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টানা দরপতনে দর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি কমে গেছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ঘুমিয়ে থাকা বীমা খাত আড়মোড়া ভাঙা শুরু করে। আর গত সপ্তাহে তিন বছর আগের মতো চিত্র দেখা দেয়। কোনো দিন মোট লেনদেনের চার ভাগের এক ভাগের বেশি, কোনো দিন লেনদেনের তিন ভাগের এক ভাগ হয় একটি খাতেই। এমনও দিন দেখা গেছে যেদিন সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৮টিই ছিল বীমা খাতের।

তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সাধারণ সূচক বছরের সর্বোচ্চ অবস্থান ছুঁয়েও নিয়ে নেমে যাওয়ার পর বেশি দর হারায় বীমা কোম্পানিগুলো। বেড়ে যাওয়া দর হারিয়ে বেশিরভাগ কোম্পানিই আগের দিনের দরে বা তার চেয়ে নিচে নেমে যায়।

পরের দিন সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া ১০টি কোম্পানির ৯টিই বীমা খাতের। এর মধ্যে জীবন বীমার একটি আর সাধারণ বীমা কোম্পানি ৮টি।

সেদিন এই খাতে লেনদেন হয় ২৩০ কোটি টাকার বেশি যা ছিল মোট লেনদেনের ৩১ শতাংশই। আগের দিন লেনদেনের ৩৫ শতাংশ ছিল একটি খাতের।

দরপতনের দিন লেনদেন নেমে এসেছে ১২৫ কোটি টাকায়, যা মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশের মতো। এর মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে হাতবদল হয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি, সাধারণ বীমায় ৫৫ কোটি টাকার মতো।

বীমার ঢালাও পতনের দিন পুঁজিবাজারে সূচকের অবশ্য পতন হয়নি। বেলা ১২টা ১২ মিনিটে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ১৭ পয়েন্ট পতন হলেও এরপর শেষ বেলায় উঠ যায় তা।

আগের দিনের চেয়ে ০.৩৪ পয়েন্ট সূচক বাড়লেও লেনদেন কমে যায় একশ কোটি টাকারও বেশি।

দিনভর হাতবদল হয় ৭০৭ কোটি ৪০ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল ৮১১ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

৭৪টি কোম্পানির দর বাড়লেও কমেছে ৯৭টির। ১৭৫টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।

দর হারানো ৯৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪৬টিই বীমা খাতের। এর মধ্যে সাধারণ বীমার ৩৬টি আর জীবন বীমার ১০টি।

দরপতনের শীর্ষে প্রায় সবই বীমা

সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে বীমা খাতের বাইরে দেখা গেছে কেবল ইন্ট্রাকো রি ফুয়েলিং স্টেশনকে, যেটি দর হারিয়েছে ৪.৪২ শতাংশ। দরপতনের শীর্ষ তালিকায় এর অবস্থান ছিল নবমে।

সবচেয়ে বেশি ৫.৮৬ শতাংশ দর হারিয়েছে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, যেটি ২৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৭০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল গত সপ্তাহে।

এছাড়া মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ৫ শতাংশের বেশি, বিজিআইসি, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ছিল পতনের শীর্ষ দশে, যেগুলোর দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি।

একাদশ থেকে বিংশতম ১০টি কোম্পানিও বীমা খাতের। এর মধ্যে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নিটোল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর ৪ শতাংশের বেশি; জনতা, সেন্ট্রাল, দেশ জেনারেল, ফিনিক্স, রূপালী জেনারেল, রিপাবলিক, ও প্রগতি ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৩ শতাংশেরও বেশি।

বীমা খাতের আরও তিনটি কোম্পানি ৩ শতাংশের বেশি, ১১টি কোম্পানি দুই শতাংশের বেশি, সাতটি কোম্পানি এক শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে সবই স্বল্প মূলধনী বা লোকসানি কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই লোকসানি। এর মধ্যে চারটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে।

কোম্পানিগুলো হলো লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, শ্যামপুর সুগার ও ন্যাশনাল টি কোম্পানি।

নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে, যদিও এই দরে শেয়ারের বিক্রেতা নেই।

শীর্ষ দশে থাকা লোকসানি অন্য দুটি কোম্পানি হলো ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও জিলবাংলা সুগার মিলস। কোম্পানি দুটির দর বেড়েছে যথাক্রমে ৬.৪১ এবং ৪.৯১ শতাংশ।

সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, জেমিনি সি ফুড ও রূপালী লাইফও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে। এগুলোর দর ৬.৯৫ শতাংশ থেকে ৮.৬২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

আরও ছয়টি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি চারটির দর ৪ শতাংশের বেশি, আটটির দর ৩ শতাংশের বেশি, নয়টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৩টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি। এগুলোর সিংহভাগই স্বল্প মূলধনী বা দুর্বল কোম্পানি।