জীবন বীমা খাতে হুলুস্থুল দেখা গেছে। ১৪টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ২০৮ কোটি টাকার বেশি। মোট লেনদেনের পাঁচ ভাগের প্রায় এক ভাগই হয়েছে এই খাতে।
Published : 04 Jun 2023, 04:01 PM
নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর দিন পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। এই উত্থানে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন প্রায় সাত মাস আগের অবস্থানে পৌঁছেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো কিছুই বলা নেই। তবে তিনি বেশ কিছু কর প্রস্তাব করেছেন, যার প্রভাব তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির ওপর পড়বে।
উৎপাদন খাতের কিছু কোম্পানি কর ও ভ্যাট কমার সুবিধা পাবে। কিছু কোম্পানি আবার ভ্যাট ও করের চাপে পড়বে।
এই আলোচনার মধ্যে রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১০ পয়েন্ট। যদিও দর বৃদ্ধির তুলনায় পতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল বেশি। লেনদেন বেড়েছে আগের কর্মদিবসের তুলনায় আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি।
সব মিলিয়ে বেড়েছে ৭১টি কোম্পানির দর, হারিয়েছে ১০০টি। ১৭৩টি কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।
সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৬৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। ২৭টি কোম্পানির লেনদেন হয়নি।
১০ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে, যা গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।
লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৫৪ কোটি ৪০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৯৯৭ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সূচকের মত গত ৮ নভেম্বরের পর এত বেশি লেনদেন হয়নি পুঁজিবাজারে। প্রায় সাত মাস আগে সেদিন হাতবদল হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার টাকা।
বাজারে কী প্রবণতা
এদিন জীবন বীমা কোম্পানির শেয়ারে হুলুস্থুল দেখা গেছে। ১৪টি কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ২০৮ কোটি টাকার বেশি। মোট লেনদেনের পাঁচ ভাগের প্রায় এক ভাগই হয়েছে এই খাতে।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেড়েছে ১২টির দর। একটির দর অপরিবর্তিত, একটি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের মধ্যে চারটি কোম্পানিই জীবন বীমার। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যেও চারটি ছিল জীবন বীমা খাতের।
এই খাতের তিনটি কোম্পানির দর ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই বেড়েছে। একটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৬ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত এক মাসেরও কম সময়ে ৯০ টাকার ঘর থেকে বাড়তে বাড়তে দুই শ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া রূপালী লাইফের দর হয়েছে ২২২ টাকা।
সে তুলনায় সাধারণ বীমা খাত অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ৮৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এই খাতের ৪৩টি কোম্পানিতে। কদিন আগেও এই খাতটিতে দেড়শ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন দেখা গেছে।
এই খাতে ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে হারিয়েছে ৩০টি কোম্পানি। তিনটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা তথ্য প্রযুক্তি খাতে লেনদেন হয়েছে দেড়শ কোটি টাকারও বেশি। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে ছিল যথাক্রমে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। দুটি খাতেই লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি টাকার বেশি।
দীর্ঘ দিন পর জ্বালানি খাতে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা দেখা গেছে। ক্রেতার দেখা মিলেছে প্রকৌশল খাতেও। তবে ব্যাংক, আর্থিক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এখনও তলানিতে পড়ে আছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
এই তালিকায় ছিল বেঙ্গল উইন্ডসর, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ, অগ্নি সিস্টেমস, মেঘনা সিমেন্ট, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, পদ্মা লাইফ এবং এডিএন টেলিকম।
এগুলোর দর ৮.৪০ শতাংশ থেকে ৯.৯৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও তিনটি কোম্পানির দর ৭ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর ৬ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৫ শতাংশের বেশি, আটটির দর ৪ শতাংশের বেশি, তিনটির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১১টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৬টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে যারা
মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা মিল্প, বিডি ওয়েল্ডিংয়েল এবং ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে কমেছে।
মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ছিল দরপতনের শীর্ষ দশের তালিকায়।
এসব কোম্পানির দর ৩.৬২ শতাংশ থেকে ৭.২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।