সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই ছিল সাধারণ বীমার।
Published : 19 Oct 2023, 03:38 PM
জুনে অর্থবছর সমাপ্ত করা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার করতে থাকার মধ্যে পুঁজিবাজারে ফের সাধারণ বীমা খাতের তেজ দেখা গেল। কেবল লেনদেনে নয়, দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে টানা দুই দিন এই খাতের প্রাধান্য দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক, লেনদেন সবই বেড়েছে। সূচক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ওষুধ খাতের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার। মোট সূচক বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট। স্কয়ার ফার্মার কারণেই বেড়েছে ৫.৩৭ পয়েন্ট।
তবে দর বৃদ্ধি পাওয়া ও হ্রাস পাওয়া কোম্পানির সংখ্যায় খুব একটা পার্থক্য নেই।
সব মিলিয়ে বেড়েছে ৭৫টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ৭৬টির। ১৫৬টি কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে ৪০টিই সাধারণ বীমা খাতের। এই খাতে একটির লেনদেন হয়নি আর একটি কোম্পানি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটিই ছিল সাধারণ বীমা খাতের।
সাধারণ বীমার মতো জীবন বিমা খাতেও চাঙাভাব দেখা গেছে। এই খাতের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১৪টির। দর বেড়েছে ৮টির, ছয়টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
অন্য কোনো খাতে এমন প্রবণতা দেখা যায়নি।
লেনদেন কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা যা আগের দিন ছিল ৫১২ কোটি টাকার কিছুটা বেশি।
এই লেনদেনের প্রায় ২৩ শতাংশই হয়েছে সাধারণ বীমা খাতে, জীবন বীমা খাতে হয়েছে আরও চার শতাংশের বেশি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
ব্যাংক, জ্বালানি, সিমেন্ট, বস্ত্র, প্রকৌশল খাতের দেড় শতাধিক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। এগুলোর ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে মোট ৩০৪ কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে কেবল ২৬টি কোম্পানির। এক লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১১৪টির। তবে আরও লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য বসানো ছিল।
৮৫টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি এদিন।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে সাধারণ বীমার জয়জয়কার
টানা তিন দিন ১০ শতাংশ ছুঁয়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের।
কাছাকাছি হারে দর বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল ও নিটোল ইন্স্যুরেন্সের।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা সাধারণ বীমার অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিকের দর ৮ শতাংশের বেশি ক্রিস্টাল, ইস্টার্ন, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
শীর্ষ দশে থাকা বস্ত্র খাতের আরগন ডেনিমের দর বেড়েছে ৬.০৪ শতাংশ। কোম্পানিটি আগের দিন গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে শেয়ারপ্রতি এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় শেয়ারদর এর ফ্লোর প্রাইস ১৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১৯ টাকা ৩০ পয়সা।
সাধারণ বীমা খাতের আরও দুটি কোম্পনির দর ৪ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই ছিল সাধারণ বীমার।
সাধারণ বীমার আরও ১৫টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি, সাতটির বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে দুর্বল কোম্পানি
উৎপাদনে নেই এবং এক যুগ ধরে লভ্যাংশ না দেওয়ার পরও টানা দাম বৃদ্ধি পাওয়া ইমাম বাটন ছিল দর পতনের শীর্ষে। ৮.০৬ শতাংশ দর হারিয়ে ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে শেয়ারদর নেমে এসেছে ১৪৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় এদিন দেখা গেছে লোকসানি ও মৌলভিত্তি দুর্বল, এমন কোম্পানিকেই।
এর মধ্যে লোকসানি সেন্ট্রাল ফার্মা, ইনটেক অনলাইন এবং আগের দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা সিএপিএম আইবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ডের দর ৪ শতাংশের বেশি, লোকসানি খুলনা পেপার মিলস, দুর্বল মৌলভিত্তির ডেফোডিলস কম্পিউটার, এমবি ফার্মা, লোকসানি জিকিউ বলপেন, লভ্যাংম ‘মনঃপুত’ না হওয়া জেএমআই হসপিটালের শেয়ার দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।
লোকসানি অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ দর হারিয়েছে ২.৯১ শতাংশ।
আরও ১০টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।
আগ্রহের শীর্ষে সোনালী পেপার
তবে এদিন টাকার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সোনালী পেপারের। কোম্পানিটির ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যদিও ফ্লোর প্রাইস থেকে বের হয়ে আবার বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দরে নেমে এসেছে দর।
এছাড়া সি পার্লের ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার, জেমিনি সি ফুডের ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার, এমারেল্ড অয়েলের ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার, লিব্রা ইনফিউশনের ১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার, ফু ওয়াং ফুডসের ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকার এবং খান ব্রাদার্স পিপিওভেন কোম্পানির ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১০টি কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ৩০ শতাংশ।