লেনদেন বাড়ছেই, প্রকৌশলের সঙ্গে ‘জাগল’ জ্বালানি খাতও

জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে আটটি, প্রকৌশল খাতে ৪২টির মধ্যে ১৯টির কয়েক লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 09:39 AM
Updated : 5 June 2023, 09:39 AM

বাজেট প্রস্তাবের পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে শেষ বেলায় বিক্রয় চাপে সূচক কিছুটা কমলেও লেনদেন আরও বেড়েছে। এতদিন ফ্লোর প্রাইসেও ক্রেতার দেখা না মেলা বহু কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, দামও বাড়ছে।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে হঠাৎ করেই জ্বালানি খাত লেনদেনের তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে। হাতবদল হয় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। প্রকৌশল খাতেও ৯০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছ।

আগের দিনই প্রায় সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। সেটি বাড়ল আরও কিছুটা।

সারা দিনে কেনাবেচা হয়েছে ১২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার। এটি গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। আগের দিন লেনদেন ছিল ২২ লাখ টাকা কম।

তবে দর বৃদ্ধির তুলনায় পতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা বেশি হওয়ায় কমে গেছে সূচক। এক পর্যায়ে ১১ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও শেষ দুই ঘণ্টায় ২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৯ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।

কমলেও সূচকের এই অবস্থান গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।

বেড়েছে ৭১টি কোম্পানির দর, কমেছে ১১১টির, ১৭৯টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৬১টি কোম্পানির। সাতটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত ছিল নানা কারণে। বাকি ২৫টি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতার দেখা মেলেনি।

ঈদুল ফিতরের আগে থেকে পুঁজিবাজারে খাত ধরে শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলতে শুরু করে। প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি, পরে খাদ্য, ঈদের পর প্রথমে সাধারণ বীমা, এরপর জীবন বীমা, পরে প্রকৌশল, মাঝে একদিন মিউচুয়াল ফান্ড- এভাবে একেক দিন একেক খাতে ফ্লোরে আটকে থাকা শেয়ারগুলো মুক্ত হচ্ছে।

এখনও বিপুল সংখ্যক শেয়ার ফ্লোরে আটকে থাকার মধ্যে সোমবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে আটটির ক্রেতার দেখা মিলল।

এর মধ্যে চমক ছিল লুব রেফ। গত প্রায় তিন মাসে ফ্লোর প্রাইসে বসিয়েও ক্রেতার খোঁজ না পাওয়া শেয়ারধারীরা এক দিনেই বিক্রি করে দিয়েছেন এক কোটি ৫৯ লাখের বেশি শেয়ার। শুধু তাই নয়, ক্রেতার দেখা মেলার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারদরও বেড়েছে। সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে হল্টেড প্রাইসেই হাতবদল হয়েছে লাখ লাখ শেয়ার।

সব মিলিয়ে ৫৮ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির।

একই খাতের অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, এনার্জিপ্যাকেরও কয়েক লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরেই সিভিও পেট্রো কেমিকেলসসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলছে। সেগুলোর লেনদেনও বাড়ছে।

প্রকৌশল খাতে আগের দিন ফ্লোর ভেঙে হল্টেড হয়েছিল মীর আখতার হোসেন লিমিটেড। দ্বিতীয় দিনে দর আরও বাড়ল কোম্পানিটির।

এই খাতের কোম্পানি এসকে ট্রিমসের লেনদেন হল বছরের সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ১৯টির উল্লেযোগ্য সংখ্যক শেয়ার হাতবদল হল।

ক্রেতার দেখা মিলেছে জীবন বীমা খাতের ডেল্টা লাইফেরও। এই খাতের প্রায় সব কোম্পানির বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হলেও এই কোম্পানিটি ঘুমিয়ে ছিল এতদিন। লেনদেনের পাশাপাশি দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে কোম্পানিটি।

তবে ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ, আর্থিক খাতে এখনও ক্রেতার দেখা নেই। ওষুধ ও রসায়নে বড় কোম্পানিগুলোতেও আগ্রহ ফেরেনি।

সাধারণ বীমার সংশোধন চলছেই

তিন সপ্তাহ আগে থেকে সাধারণ বীমার শেয়ার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলেও গত সপ্তাহে খাতটি যায় সংশোধনে। চলতি সপ্তাহে দর আরও কমেছে। সেই সঙ্গে কমছে লেনদেন।

এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে একটির দামও কমেনি। তিনটি দর ধরে রাখতে পারে, বাকি ৩৮টিই দর হারিয়েছে। একটির লেনদেন হয়নি। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির চারটিই এই খাতের।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা। দুই সপ্তাহ আগে দর যখন বাড়ছিল, সে সময় লেনদেন দুই শ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

তবে জীবন বীমায় লেনদেনের গতি বজায় আছে। টানা দ্বিতীয় দিন দুইশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে খাতটিতে।

এই খাদের ১৫টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ২০১ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে দর বেড়েছে তিনটির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত, বাকি ১১টি দর হারিয়েছে।

সব মিলিয়ে বীমা খাতের লেনদেন ২৭০ কোটি টাকা, যা কিছুদিন আগে পৌনে চারশ কোটি টাকায় উঠে গিয়েছিল।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রকৌশলের প্রাধান্য

সব মিলিয়ে শীর্ষ দশে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ছিল চারটি।

সবচেয়ে বেশি ৯.৯৯ শতাংশ দর বেড়েছে প্রকৌশল খাতের স্বল্প মূলধনী কোম্পানি বিডি অটোকারের। আগের দিন দর ছিল ১৫৮ টাকা ১০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭৩ পাকা ৯০ পয়সা।

একই খাতের এস কে ট্রিমসের দরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এছাড়া মীর আখতারের দর ৭.৫২ শতাংশ ও বেঙ্গল ইউন্ডসরের দর ৫.৯২ শতাংশ বেড়েছে।

তিনটি ছিল জীবন বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর প্রায় ১০ শতাংশ, ডেল্টা লাইফের দর ৮.১৯ শতাংশ এবং মেঘনা লাইফের দর ৬.৪৯ শতাংশ বেড়েছে। 

এছাড়া চামড়া খাতের লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, জ্বালানি খাতের লুব রেফের দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েছে; ওষুধ খাতের এভডেন্ট ফার্মার দর বেড়েছে ৭.৮৬ শতাংশ।

পতনের শীর্ষে বীমার আধিক্য

এই তালিকার শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল টি কোম্পানি, দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল নর্দার্ন জুট। দুটি কোম্পানির দরই কমেছে ৮.৭৪ শতাংশ।

বাকি আটটি কোম্পানির মধ্যে চারটি সাধারণ বীমার, তিনটি জীবন বীমার।

সাধারণ বীমার মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ৭.৭০ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ৬.৯৩ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স ৬.৭৯ শতাংশ এবং প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ৬.৪৩ শতাংশ দর হারিয়েছে।

জীবন বীমার মধ্যে সোনালী লাইফ ৭.৩৪ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ৬.৬৮ শতাংশ এবং পপুলার লাইফ ৬.১১ শতাংশ দর হারিয়েছে।

শীর্ষ দশে অন্য কোম্পানি হলো সি পার্ল, যেটি দর হারিয়েছে ৭.১০ শতাংশ।