সাধারণ বীমার হাতবদল হওয়া ৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, বাকি তিনটির দরও কমেনি।
Published : 20 Jul 2023, 03:23 PM
ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা পলিসি বিক্রির ব্যবস্থা ব্যাংকাস্যুরেন্সে সরকারের সম্মতি আসার পর পুঁজিবাজারে বীমা খাতের শেয়ার কেনার ধুম পড়েছে।
ক্রয়চাপে বেড়েছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার। আরও বাড়বে ভেবে অনেকেই শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রেখেছেন।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে এই চিত্র দেখা গেল। এদিন বাজারে সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে গেলেও লেনদেন বেড়েছে। বাজারে যতগুলো কোম্পানির দাম বেড়েছে, তার অর্ধেকেরই বেশি বীমা খাতের।
বীমার দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে সাধারণ বীমার শেয়ারেই হুলুস্থুল বেশি। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টিই সাধারণ বীমা কোম্পানি। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই এই খাতের।
খাতওয়ারী লেনদেনে ঈদের পর কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও আবার শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে বীমা। কেবল সাধারণ বীমায় যত টাকা লেনদেন হয়েছে, সেটিই অন্য সব খাতকে ছাড়িয়ে গেছে। জীবন বীমা যোগ করলে দ্বিতীয় প্রধান খাতের তুলনায় দ্বিগুণ টাকা লেনদেন হয়েছে বীমা খাতে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা পলিসি বিক্রির প্রস্তাবে সায় দেয়, যা ব্যাংকাসুরেন্স নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এ ব্যবস্থায় বীমা খাত ‘এজেন্ট ভিত্তিক’ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম থেকে বের হবে। এতে খাতটি নিয়ে যে অব্যবস্থাপনা ও অবিশ্বাস আছে, তা দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা ব্যাংক ও বীমা- দুই খাতেরই মুনাফা বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বীমার উত্থানে দর হারিয়েছে প্রায় সব খাত। তবে বেশিরভাগ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়ায় সূচকের পতন সম্ভব হয়নি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন দর বেড়েছে ৮৯টি কোম্পানির, বিপরীতে কমেছে ৯৮টির। আগের দিনের দরে ছিল ১৭৮টি কোম্পানি। সব মিলিয়ে তালিকাভুক্ত ৩৯৩টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৩৬৫টির শেয়ার। অবশ্য তিনটির লেনদেন স্থগিত আছে নানা কারণে।
দিনভর ওঠানামার দর দিন শেষে সূচক অবস্থান ধরে রেখেছে। আগের দিনের চেয়ে কমেছে কেবল ০.৫৮ পয়েন্ট।
যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে তার মধ্যে বীমা কোম্পানিই ৪৩টি। এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৭টি। এর মধ্যে তিনটির লেনদেন হয়নি। কমেছে জীবন বীমা খাতের তিনটির দর। আটটি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় সাড়ে নয়শ কোটি টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের তুলনায় ৭৫ কোটি টাকারও বেশি।
এই লেনদেন বৃদ্ধির প্রধান কারণই বীমা খাত। সাধারণ বীমাতেই লেনদেন হয়েছে দুইশ কোটি টাকার বেশি। জীবন বীমায় আরও প্রায় ৬১ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। অর্থাৎ মোট লেনদেনের প্রায় ২৮ শতাংশই হয়েছে এই খাতটিতে।
সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, তিনটি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে আর দুটির লেনদেন হয়নি।
জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬টির, কমেছে তিনটির, ৫টি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।
ঈদের পর থেকে বেশিরভাগ সময় শীর্ষে থাকা খাদ্য খাত নেমে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। হাতবদল হয়েছে ১২৬ কোটি টাকার বেশি। ২১টি কোম্পানির মধ্যে সমান সংখ্যক ৮টির দর বেড়েছে ও কমেছে, ৫টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে। মোট লেনদেনের প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে এই খাতে।
প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছির প্রকৌশল খাত। তবে চারটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৭টির দর। আগের দিনের দরে ছিল ২১টি কোম্পানি। মোট লেনদেনের ৯ শতাংশের বেশি ছির এই খাতে।
অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ডিভেঞ্চার ও করপোরেট বন্ড ছাড়াও ২০টি খাত থাকলেও কেবল তিন খাতেই লেনদেন হয়েছে ৫১ শতাংশের বেশি।
৬৮ কোটি টাকা নিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন এবং ৬৭ কোটি টাকা নিয়ে পঞ্চম স্থানে ছিল বস্ত্র খাত।
ওষুধ ও রসায়নের ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫টির, কমেছে ১১টির, ১৫টি ছিল আগের দিনের দরে। বাকি তিনটির লেনদেন হয়নি।
বস্ত্রের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে চারটির, কমেছে ১৫টির, ৩৬টি ছিল আগের দিনের দরে। বাকি তিনটির লেনদেন হয়নি।
অন্য কোনো খাতে ৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়নি। আর এই পাঁচটি খাতেই হাতবদল হয়েছে মোট লেনদেনের ৬৫ শতাংশের বেশি।
যেমন বাড়ল বীমার দর
প্রায় ১০ শতাংশ দর বেড়ে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া তিনটি কোম্পানিই সাধারণ বীমার। এগুলো হলো গ্রিন ডেল্টা, রিলায়েন্স ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।
শীর্ষ দশের চতুর্থ স্থানে ছিল লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, যেটির দর বেড়েছে ৯.৬৬ শতাংশ।
পঞ্চম থেকে একাদশ স্থানে ছিল যথাক্রমে কন্টিনেন্টাল, পাইওনিয়ার, জনতা, প্যারামাউন্ট, মেঘনা, অগ্রণী ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। এগুলোর সব কটির দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
আরও চারটি সাধারণ বীমা কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, পাঁচটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৩ শতাংশের বেশি, চারটির দর তিন শতাংশের বেশি, তিনটির দর দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে।
জীবন জীমার যে ছয়টি কোম্পানির দর বেড়েছে, তার একটির তিন শতাংশের বেশি, দুটির ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
কদিন লাফিয়ে এখন পতনের শীর্ষে
ব্যাংক খাত ঘুমিয়ে থাকার মধ্যে হঠাৎ লাফাতে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংক দর হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ছুঁয়ে কমেছে এর শেয়ারদর। আগের দিন ছিল ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। একদিনে কমতে বা বাড়তে পারত সর্বোচ্চ ১ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ততটাই।
ঈদের পরে ১২ কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়তে বাড়তে বুধবার প্রায় ১৮ টাকা ছুঁয়ে ফেলে।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল তুমুল আলোচিত ফুওয়াং ফুডস, যেটির দর ঈদের পর কয়েক দিনেই বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।
ফ্লোর প্রাইস ২৫ টাকা ২০ পয়সায় শেয়ারটির ক্রেতা ছিল না। সেখান থেকে ১১ কর্মদিবসে ৪৬ টাকা ৩০ পয়সায় উঠে যাওয়ার পর শেয়ারটি এখন উল্টো স্রোতে। বুধবার ৮ শতাংশে বাড়লেও তার চেয়ে বেশি ৮.৬৮ শতাংশ কমল পরের দিনই।
৬.৫৭ শতাংশ দর হারিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল খুলনা পেপার মিলস। কোম্পানি বন্ধ থাকার পরও ঈদ শেষে এটির দরও লাফাচ্ছিল।
গত কয়েকদিন ধরে লাফাতে থাকা তিন লোকসানি কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, শ্যামপুর সুগার এবং লুবরেফ ও ফুওয়াং সিরামিকসের দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য দুই কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মা ও তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ দর হারিয়েছে চার শতাংশের বেশি।