Published : 01 Oct 2024, 05:58 PM
সংঘবদ্ধভাবে বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন এবং কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানোর ঘটনার দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মঙ্গলবার রেকর্ড এ জরিমানার করার তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
নিকট অতীতে পুঁজিবাজারে কারসাজির দায়ে এতবড় জরিমানার নজির নেই।
বিএসইসি বলছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায়’ এসব কোম্পানিকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
একক কোম্পানি থেকে গ্রুপে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) এর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
এ কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজির ঘটনায় এককভাবে সর্বোচ্চ ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে মুসফেকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় একবার তাকে ১০০ কোটি টাকা এবং অন্যটিতে ২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে।
এছাড়া আর্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ৭০ কোটি টাকা, ট্রেডনেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে চার কোটি এক লাখ টাকা, মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি টাকা, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি টাকা, জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি এক লাখ টাকা ও আব্দুর রউফকে ৩০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসি বলছে, ২০২১ সালের ২৮ জুলাই থেকে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকোর শেয়ারদরে কারসাজি করা হয়।
পরের বার ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত আবার কারসাজির ঘটনা ঘটে। উভয় সময়ে কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জরিমানার মুখে পড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ পাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশে ছেড়েছেন বলেও খবর আসে। পরে গত ১৩ অগাস্ট নৌ-পথে পালানোর সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।
পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকোসহ চারটি কোম্পানি ও বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এসব কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকোর শেয়ারদরের ব্যাপক ওঠানামা নিয়ে গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
১৯৮৯ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত শেয়ারটির দর ২০১০ সালের ধসের পর এক পর্যায়ে নামতে নামতে ১৫ টাকার নিচেও নামে। ওই দরের আশেপাশে বেশকিছু দিন স্থির থাকার পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর দর বাড়তে শুরু করে।
সেখান থেকে এত দ্রুত বাড়ে যে দুই বছরের মধ্যে তা ১৫০ টাকা ছাড়ায় ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি।
বিএসইসি যে সময়ের কারসাজির জন্য রেকর্ড জরিমানা করেছে ওই সময়ের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২৮ জুলাই বেক্সিমকোর শেয়ার হাতবদল হয় ৯০ টাকা ৩০ পয়সা দরে। ৩৯ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর শেয়ারটি হাতবদল হয় ১১৯ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময়ের মধ্যে দর বেড়েছিল ২৯ টাকা ৫০ পয়সা বা ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় দফায় অনুসন্ধানকালীন সময়ে অর্থাৎ ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি বেক্সিমকোর শেয়ারদর ছিল ১৫২ টাকা ১০ পয়সা। দুই মাস ৮ দিন পর ১০ মার্চ শেয়ারটি হাতবদল হয় ১৫২ টাকায়।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি এর দর ছিল ২৫ টাকা ৫০ পয়সা। পরের দুই বছর তা স্বল্প ব্যবধানের মধ্যে ওঠানামা করে। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা ওঠে ২৮ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময় থেকে মূলত শেয়ারটির দর দ্রুত বাড়তে থাকে।
প্রায় এক মাসের ব্যবধানে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারিম শেয়ারটি হাতবদল হয় ৬১ টাকা ৭০ পয়সায়। তা ক্রমাগত বাড়তে থাকে জুলাই পর্যন্ত।
বর্তমানে শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে। ২০২২ সালের ২ অক্টোবর শেয়ারটির দর ১৩১ টাকা থেকে কমতে থাকে। পরে মাসের শেষের দিকে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হলে তা ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় আটকে যায়।
সেই থেকে ক্রেতা সংকটে ভুগছে শেয়ারটি। বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলেও এটির ক্ষেত্রে তা বহাল রয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার মাত্র ৯টি শেয়ার লেনদেন হয় ডিএসইতে।