Published : 28 Apr 2025, 11:27 PM
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটায় পরিণত হওয়া মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ কোটি টাকা করার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুঁজিবাজার বিষয়ক টাস্কফোর্স।
বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কিনতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে ছয় মাসে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা এবং কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ঋণের অনুপাত ১:১ অর্থাৎ একশত টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে একশত টাকা ঋণ দেওয়া যাবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুর্নিদিষ্ট কয়েকটি খাত ও শ্রেণির শেয়ারে বিনিয়োগ সীমিত করার সুপারিশও করেছে এ টাস্কফোর্স।
সোমবার আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্সের দুইজন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
টাস্কফোর্স গত রোববার ‘মার্জিন রুলস, ১৯৯৯’ এর চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেয় বিএসইসিতে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে একটি ‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনা দেওয়া হয়।
টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, টাস্কফোর্স এ প্রতিবেদন তৈরি করতে পুঁজিবাজারের অংশীজন ও অভিজ্ঞদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতের সংস্কারের ঘোষণা দেয়। আর্থিক খাতের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কারে গত ৮ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর সক্ষমতা বাড়ানোসহ পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কারে পাঁচ সদস্যের টাক্সফোর্স গঠন করা হয়।
কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোস্তফা আকবর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, লক ইন শেয়ার, উদ্যোক্তা শেয়ার, প্লেসমেন্ট, অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অতালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডে মার্জিন ঋণের অর্থ ব্যবহার করা যাবে না।
কোম্পানির বেলায় মার্জিন ঋণ গ্রহীতা নিজস্ব শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে না অর্থাৎ কোনো কোম্পানি মার্জিন ঋণ নিয়ে একই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে না।
বিনিয়োগকারীর দুটি বিও (বেনিফিশিয়ারি হিসাব) থাকতে পারবে। এরমধ্যে একটি মার্জিন ও অন্যটি নন-মার্জিন হিসাব। মার্জিন হিসাব ঋণাত্বক হলে নন-মার্জিন হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে পারবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।
মার্জিন ঋণ এমন বিনিয়োগকারীদের দেওয়া যাবে যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস আছে।
এর ব্যাখ্যায় আল-আমিন বলেন, ‘‘ঋণের তো সুদ দিতে হবে, কমপক্ষে সেই সুদ পরিশোধ করতে পারে তার নিশ্চয়তা তিনি যেন দিতে পারেন।’’
নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে, বিনিয়োগ হিসাব ঋণাত্বক হওয়ার সুযোগ থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মার্জিন ঋণ গ্রহীতার কমপক্ষে এক বছর বিনিয়োগ অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত অধিকতর যৌক্তিক হত কি না জানতে চাইলে, টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন বলেন, ‘‘আমরা অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কেউ আরো বেশি সময় করার কথা বলেছেন। মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলেছেন, ছয় মাস। আমরা এক বছরের সুপারিশটিও কমিশনকে জানাব।’’
মার্জিন ঋণ গ্রহীতার ঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ বা সার্টিফিকেশন থাকাটা বাধ্যতামূলক করার শর্ত জুড়ে দেওয়ারও প্রস্তাব আসে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে।
মার্জিন ঋণ বিষয়ক সুপারিশে বলা হয়, গৃহিণী, ছাত্র, অবসরে যাওয়া ব্যক্তিসহ যেসব বিনিয়োগকারীর নিয়মিত আয় নেই তার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে মার্জিন ঋণ পাবেন না। তবে যথেষ্ঠ সম্পদের অধিকারি হলে তারা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। যথেষ্ঠ সম্পদের সংজ্ঞা হবে এসএমই বোর্ড সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে
>> নতুন তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের (আইপিও) শেয়ার কেনায় ৯০ দিনের পূর্বে মার্জিন ঋণ দেওয়া যাবে না।
>> ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে মার্জিন ঋণ দেওয়া। মেয়াদ শেষে তা নবায়নের সুযোগ থাকবে।
>> ঋণ দেওয়ার আগে গ্রহীতা বিনিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাই বা ক্রেডিট রেটিং তৈরি করবে ঋণদাতা কোম্পানি।
>> ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে শুধু পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানি ও ‘বিবিবি+’ রেটিংয়ের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রাখতে পারবে। এর বাইরের কোনো বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রাখতে পারবে না ঋণদাতা কোম্পানি। নগদ টাকা জামানত হিসেবে রাখা যাবে।
>> স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষিত নির্দিষ্ট কোম্পানির বিপরীতে মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুযোগ রাখা যাবে। লেনদেন স্থগিত ও দেউলিয়া বা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা শোচনীয় থাকলে মার্জিন ঋণে শেয়ার কেনা যাবে না।
>> এরমধ্যে ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানি, যাদের মূল্য–আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩০ এর বেশি না হলে মার্জিন ঋণ নিতে পারবে।
>> একক কোনো গ্রাহকের বিপরীতে ঋণদাতা কোম্পানি তার মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মার্জিন ঋণ দিতে পারবে।
>> ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মার্জিন ঋণ দেয়ার সময়ে শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্যকে বিবেচনায় নিতে হবে। শেয়ার প্রতি আয়কে বিবেচনায় নেয়া যাবে না।