‘ক্রেতাশূন্য’ পুঁজিবাজার, লেনদেন তিনশ কোটির নিচে

“একটি আলোচনা আছে যে, বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হবে। সেটি যদি হয়, তাহলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তটা দ্রুত এলে বিনিয়োগকারীর ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ কিছুটা কমবে”, বলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 10:21 AM
Updated : 23 March 2023, 10:21 AM

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজার পার করল আরও একটি হতাশার দিন। বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা নেই। এই অবস্থায় লেনদেন নেমে এসেছে তিনশ কোটি টাকার নিচে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারির পর এ ঘটনা ঘটল প্রথমবারের মত। টানা দুই দিন সূচক পতনের পর সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার কিছুটা বাড়লেও লেনদেনের এই পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি আরও বাড়ল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে এদিন দাম বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ২৪টির। আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে ২০৪টির শেয়ার। আর ৮৬টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে যোগ হয়েছে মোট ৮ পয়েন্ট। এ নিয়ে চলতি মার্চের ১৬ কর্মদিবসে সূচক বাড়ল ৭ দিন, কমল ৯ কর্মদিবস। 

সব মিলিয়ে ৩০২টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হলেও এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল ৪৪টি কোম্পানিতে। আরও ৫৪টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১০ লাখ থেকে এক কোটির মধ্যে। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকার বেশি হাতবদল হয়েছে ১৬৪টি কোম্পানিতে।

সব মিলিয়ে ২৯টি কোম্পানির ১ থেকে ৯টি শেয়ার, ২২টি কোম্পানির ১০ থেকে ৪৩টি শেয়ার, ১১টি কোম্পানির ৫০ থেকে ১০০টি, ৩৮টি কোম্পানির ১০১ থেকে ৫০০টি শেয়ার, আরও ১৮টি কোম্পানির ৫০১ থেকে এক হাজারটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

গত বছরের ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মত ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকেই পুঁজিবাজার এভাবে অল্প কিছু কোম্পানির ওঠানামর ওপর নির্ভর করছে। ২২ ডিসেম্বর থেকে ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ হার এক শতাংশ করা এবং ২ মার্চ থেকে এসব কোম্পানিতে আবার ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে আনা- কোনো কিছুই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থনীতির ওপর যে চাপের কথা এতদিন বলা হচ্ছিল, তা এখন তো অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে, রেমিট্যান্স ঠিক আছে, রপ্তানিও বেশ ভালো। আমার মনে হয় এখানে সবাই অপেক্ষা করছে।”

কিসের অপেক্ষা?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “একটি আলোচনা আছে যে, বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হবে। এটি যদি হয়, তাহলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে।

“এটাও ঠিক এখন অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগই এক্সপোজার লিমিটের নিচে আছে। তারপরেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তটা দ্রুত এলে বিনিয়োগকারীর ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ কিছুটা কমবে।”

তিনি বলেন, “এখন পুঁজিবাজারে কেউ কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী দিয়ে মার্কেট চলছে। এভাবে কি আসলে চলে?”

লোকসানি কোম্পানির লাফ

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই লোকসানি। এর মধ্যে একটি কোম্পানি গত এক যুগ ধরে লভ্যাংশ দিতে পারেনি। একটি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ বছর পাঁচেক ধরে।

বাকি চারটি গত অর্থবছরে লভ্যাংশ দিলেও তা ছিল নামমাত্র। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ পয়সা পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়েছে এগুলো।

সবচেয়ে বেশি ৯.৯৮ দর বৃদ্ধি পাওয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৭৯ পয়সা। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৮৬ পয়সা লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আগের বছর ১ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ারে ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৮৭ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া সমতা লেদার গত এক যুগে লভ্যাংশ দিয়েছে দু্ইবার। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা এবং ২০২১ সালে ৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি ৪ পয়সা আয় আছে তাদের।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯.৭ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া হাক্কানি পাল্প অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৮২ পয়সা। ২০১৮ সাল থেকে কোম্পানিটি কখনও শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সার বেশি লভ্যাংশ নিতে পারেনি। গত ২ অর্থবছরে দিয়েছে ১০ পয়সা করে।

৮.১৩ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া ইমাম বাটন সবশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০১০ সালে। এক যুগেও লভ্যাংশ নিতে না পারা কোম্পানিটির শেয়ারদর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২০ টাকার ঘরে। অস্বাভাবিক উত্থানে জুলাইয়ে দর ছাড়ায় দেড় শ টাকা। এরপর তা কমতে থাকে। বর্তমান দর ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা।

অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ২৩ পয়সা লোকসান দেওয়া জিকিউ বলপেন গত পাঁচ বছরেও মুনাফার মুখ দেখেনি। এই কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫.৬৮ শতাংশ।

পাঁচ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা বিডিওয়েল্ডিংয়ের দর বেড়েছে ৫.০২ শতাংশ। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ৮ পয়সা লোকসানের তথ্য দেওয়ার পর আর কোনো হিসাবই প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি।

শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানির মধ্যে ইনফরমেশন সার্ভিসেসের দর ৬.৩৩ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দর ৫.৬৫ শতাংশ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৫.১৫ শতাংশ এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার দর বেড়েছে ৪.২১ শতাংশ।

শীর্ষ দশের বাইরে আরও একটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১১টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর এক শতাংশের বেশি বেড়েছে।