দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্বিতীয়বারের মত লেনদেন নামল পাঁচশ কোটি টাকার নিচে।
Published : 29 Sep 2024, 06:38 PM
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বেশির ভাগ কোম্পানির দরপতনে বাজার মূলধন কমল ২১ কোটি টাকার বেশি। তারপরেও সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৯ পয়েন্টের কাছাকাছি।
সংস্কারের রোডম্যাপ প্রণয়নে অংশীজনদেরকে নিয়ে বৈঠক আহ্বানের মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী আরও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।
১৫৩টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে এদিন কমেছে ২০৫টির দর। ৩৯টি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।
আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ৯৭ পয়েন্ট সূচক পতনে বাজার মূলধন কমেছিল ৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার বেশি।
কেবল একটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে, অন্যদিকে ১৪টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে।
দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্বিতীয়বারের মত লেনদেন নামল পাঁচশ কোটি টাকার নিচে।
বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনেও সূচক বেড়েছে মূলত তুমুল আলোচনায় থাকা ইসলামী ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, পাওয়ার গ্রিড, মবিল যমুনা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণে।
বৃহস্পতিবার বড় দরপতনের কারণ ছিল এক দিনে ২৭ প্রতিষ্ঠানকে ‘জেড’ শ্রেণিতে পাঠানো। লভ্যাংশ না দেওয়া, ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ করতে না পারা, বার্ষিক সাধারণ সভা না করাসহ বিভিন্ন কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বুধবার।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার শেয়ারের দরপতনের পাশাপাশি লেনদেন নামে ৫৩০ কোটি টাকার ঘরে, সেটি আরও কমে রোববার হয়েছে ৪৮১ কোটি টাকায়।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৮ অগাস্ট লেনদেন ছিল এর চেয়ে কিছুটা কম। সেদিন ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।
সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে বিনিয়োগ করায় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে উঠে গিয়েছিল। তবে ১৩ অগাস্ট থেকে দরপতনে দিশেহারা হয়ে গেছেন তারা। দেড় মাসের কিছু বেশি সময়ে বাজার মূলধন কমল ২৪ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে ডিএসইর সূচক ৪২৯ পয়েন্ট বেশি থাকলেও বিনিয়োগকারীর লোকসান আসলে অনেক বেশি। এই সূচক বেড়েছে মূলত বড় মূলধনি ও বহুজাতিক কিছু কোম্পানির কারণে।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়েছে। তবে ‘ব্লু’ চিপ খ্যাত ডিএস৩০ সূচক কমেছে দুই পয়েন্ট।
লেনদেনের এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক খাতে
বাজারে টানা দরপতনের মধ্যে ব্যাংক খাত আবার লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ১৬২ কোটি টাকার শেয়ার কেনা-বেচা হয়েছে এই খাতে যা মোট লেনদেনের ৩৪ শতাংশের বেশি। তবে এই খাতের ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, কমেছে ২১টির দর।
লেনদেনে ওষুধ ও রসায়ন খাতের হিস্যা ছিল ১২ শতাংশের মত। এই খাতে ১১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৩টির দর।
কেবল সাধারণ বীমা খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে। ১১টির দরপতনের বিপরীতে ২৯টি দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে। তবে লেনদেনের হিস্যায় এই খাতের অবদান ছিল খুবই কম। মোট লেনদেনের দেড় শতাংশেরও কম ছিল খাতটিতে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ‘জেড শ্রেণির’ কোম্পানি
কিছু কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে পাঠানোকে কেন্দ্র করে নতুন এই দরপতনের মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানি উত্তরা ফাইন্যান্স এই শ্রেণিতেই অবস্থান করছে।
২০১৯ সালের পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ, তবে হাতবদল হয়েছে কেবল ৩৯৭১টি শেয়ার।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা কোম্পানি দুটিও দুর্বল মৌলভিত্তির। এর মধ্যে ‘বি’ শ্রেণির দেশবন্ধু পলিমারের দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ, লোকসানি কোম্পানি শ্রেণির খান ব্রাদার্সের দর বেড়েছে ৯.৬২ শতাংশ।
আর্থিক টানাপড়েনে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দর ৯ শতাংশ, বস্ত্র খাতের প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের দর ৮.৫ শতাংশ, বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকসের দর ৮.২৭ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা অন্য চারটি কোম্পানি হল এডিএন টেলিকম, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
পতনের শীর্ষে সবগুলোর দর কমল সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে
দরপতনের শীর্ষে থাকা সবগুলো কোম্পানিই দুর্বল মৌলভিত্তির। এর মধ্যে শেয়ার প্রতি আড়াই পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে কাট্টালি টেক্সটাইলসের দর কমেছে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১৬ শতাংশ। লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে এদিন দর বৃদ্ধি বা পতনের কোনো সীমা ছিল না।
বাকি ৯টি কোম্পানির সবগুলোর দর কমেছে একদিনে যতটা কমতে পারে ততটাই।
এগুলো হল বিডিথাই অ্যালুমিনিয়ম, সেন্ট্রাল ফার্মা, ভিএসএফ থ্রেড, পেসিফিক ডেনিম, জিএসপি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, নিউলাইন ক্লথিং মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ও এডভেন্ট ফার্মা।