“পুঁজিবাজার হচ্ছে মার্কেট ফোর্স। দাম বাড়বে, দাম কমবে”, বলেন তিনি।
Published : 27 May 2024, 10:28 PM
পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর ওঠানামা ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত না। কারসাজি বা ‘দুই নম্বরি’ হলেই কেবল সেটি দেখবে সরকার।
সোমবার বিকেলে ঢাকার আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেলিগেশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।
সালমান বলেন, “পুঁজিবাজার হচ্ছে মার্কেট ফোর্স। দাম বাড়বে, দাম কমবে। আমি মনে করি, সরকারের কোনো সময় এটাতে ইন্টারফেয়ার করা উচিত না।
“এটা শুধু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাংলাদেশের ব্যাপার না। আপনি সব পুঁজিবাজারে দেখবেন দাম বাড়ে, কমে। সরকার যেটা দেখবে, কোনো ম্যানিপুলেশন হচ্ছে কি না, কোনো দুই নম্বরি হচ্ছে কি না। সেটা সরকারের দেখা দরকার।”
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় দুর্বলতা আছে জানিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর নাই। সব আমাদের ছোট ছোট রিটেইল ইনভেস্টমেন্ট।
“নিয়মটা হচ্ছে যখন কমতে থাকে (দাম), তখন যে ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা আছে, তারা কিন্তু এক দিনেই মার্কেটটাকে স্ট্যাবল করে। এখন ভালো ভালো কোম্পানি আছে, তাদের (শেয়ার) দাম এত কমেছে…
“যেহেতু কোনো ইনস্টিটিউশন নাই, রিটেইল ইনভেস্টররা প্যানিক করে। এটা নিয়ে এখন আমরা এখন কাজ করছি কীভাবে পুঁজিবাজারে ইনভেস্টর আরও বাড়াতে পারি।”
অর্থনীতির স্বার্থেই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “সবগুলো দেশে আপনারা দেখবেন, নতুন বিনিয়োগ যারা করে অথবা যারা এক্সপানশন করতে চায়, তারা পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে কাজটা করে। আমাদের এখানে সবাই ব্যাংক থেকে লোন নেয়।
“প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন, সরকারি ভালো ভালো কোম্পানি আছে, সেগুলোকে পুঁজিবাজারে লিস্টিং করা দরকার। এটা নিয়ে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও কাজ করছে।”
বন্ড মার্কেটটাকে শক্তিশালী করার কাজও চলছে বলেও জানান সালমান এফ রহমান।
ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হবে বলেও আশা করেন সালমান। তিনি বলেন, “ব্যাংক খাতের সংস্কারে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে শেয়ারবাজারের দুর্বলতা দূর করারও।
“দেশের অর্থনীতিতে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। ডলার সংকটও কমে আসছে।”
অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ৫ থেকে ৬ পার্সেন্ট গ্রোথ হচ্ছে। আমাদের পৃথিবীতে কয়টা দেশ আছে এ রকম গ্রোথ হচ্ছে?”
বিনিয়োগ বাড়াতে চায় মার্কিন কোম্পানি
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তুও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তিনি জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে করনীতির ধারাবাহিকতা চেয়েছেন তারা।
বোয়িং, এক্সিলারেট, অ্যামাজন, মেটা, ভিসা কার্ডসহ বেশ কিছু কোম্পানির প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।
সালমান বলেন, “তারা (মার্কিন কোম্পানি) অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে চায়, আবার বিনিয়োগের পাশাপাশি নিশ্চয়তাও চায়।
“যেমন আগামী ৫ বছর, ১০ বছর ট্যাক্স যেন একই থাকে। হঠাৎ ট্যাক্সের রেট বাড়িয়ে দিলে তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না। অ্যামাজন অলরেডি এখানে বিজনেস করছে, তারা আরও বিনিয়োগ করতে চায়। আমাদের দেশে যে পণ্য তৈরি হয়, সেগুলো তারা রপ্তানি করতে চায়।”
কৃষিখাতে অনেকগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে এগিয়ে আসছে জানিয়ে সালমান বলেন, “তারা দেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা বলেছেন আমাদের এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ আছে। মেটাও (ফেসবুক) বাংলাদেশে এআই নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।”
ভিসা, মাস্টারকার্ডও আগামীতে এআই প্রযুক্তি যুক্ত করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “টোল প্লাজা বা মেট্রোরেলের টিকেট কাটতে লম্বা লাইন ধরতে হয়। সেই সমস্যার সমাধান হবে ভিসা, মাস্টার কার্ডে এআই প্রযুক্তি যুক্ত হলে। পেমেন্ট হবে এআইর মাধ্যমে।”
বোয়িং একটা আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান সালমান রহমান। তিনি বলেন, “তারা বলছে, ‘কিনবে কি কিনবেন না, এটা পরের কথা। যেহেতু আমরা একটা অফার দিয়েছি আপনারা যাচাই বাছাই করেন’।
“আমি বলেছি করব, এটার একটা প্রসেস আছে। অ্যামাজন সাজেশন দিয়েছে যে, আমরা অনেকগুলো ইনডিভিজ্যুয়াল কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছি, এটা সেন্ট্রালি করার পরামর্শ দিয়েছে। সেটা নিয়ে এনবিআরেও কথা হচ্ছে।”