ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ‘বিএসইসির বার্তার পর’ স্বল্প মূলধনীর উত্থান

রোববার গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিচ্ছে বিএসইসি। তবে এ সংস্থার মুখপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টেফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এ নিয়ে কমিশনে কোনো আলোচনাই হয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 09:58 AM
Updated : 27 Feb 2023, 09:58 AM

শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়ার গুজবে পুঁজিবাজারে যে টানা দরপতন দেখা দিয়েছিল তা থেমেছে। কয়েকদিনে ব্যাপক হারে দর হারিয়েছে, এমন অনেকগুলো কোম্পানি হারিয়ে ফেলা দর ফিরে পেয়েছে।

অবশ্য যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার সিংহভাগই স্বল্প মূলধনী। এগুলোর দর বাড়লে বা কমলে বাজারের মূল্য সূচকে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। সূচকে প্রভাব পড়তে পারে এমন শতাধিক কোম্পানি গত কয়েক মাস ধরেই ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। সেগুলোর শেয়ারের চাহিদা নেই। এ কারণে সূচকও মোটামুটি একটি বৃত্তেই আটকে।

টানা পাঁচ কর্মদিবস কমার পর সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৭ পয়েন্ট। ৫৬টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৯৮টির দর।

এদিন লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। হাতবদল হয়েছ ২৬১ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ২৩১ কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

অথচ গত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের বাজারে লেনদেনের শীর্ষে থাকা একটি কোম্পানিতেই ওই পরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি টাকার লেনদেন দেখা গেছে।

এদিন দর বৃদ্ধির তুলনায় পতন হওয়ার কোম্পানির সংখ্যা বেশি হলেও সূচক বৃদ্ধির কারণ যেগুলোর দর বেড়েছে, শতকরা হারে বেড়েছে অনেকটাই বেশি, আর যেগুলোর দর কমেছে, তার মধ্যে সিংহভাগই এক শতাংশের বেশি কমার সুযোগ ছিল না। আর দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে বড় মূলধনীর সংখ্যা খুবই কম, যেগুলো সূচকে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজার ক্রমাগত নিচের দিকে নামছিল। এর মধ্যে গুঞ্জন উঠে ১৬৮টি কোম্পানির মত বাকিগুলোরও ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে দেওয়া হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বারবার নাকচ করার পরও গত সপ্তাহের শেষে গুজব বড় হয়ে উঠে। রোববার তা বিনিয়োগকারীদের আরও প্রভাবিত করে।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কেবল তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর কিছুটা বাড়ে। যেগুলার দর বাড়া বা কমা সম্ভব, সেগুলোর মধ্যে কমে যায় সবগুলোর। অন্যদিকে ফ্লোরে আটকে থাকা শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনই হয়নি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার গুজব তিনিও শুনেছেন। তবে নিশ্চিত কোনো খবর নেই।

বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিমের সঙ্গেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় রোববার। তিনি নিশ্চিত করেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া নিয়ে কমিশনে কোনো আলোচনাই হয়নি।

কিন্তু বাজারে তো জোর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে- এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে রিউমার থাকে। আমরা চেষ্টা করছি এই গুজবগুলোকে যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা। আমরা বারবার আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করছি। এরপরেও মূলত ফেইসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে। এখানেও আমাদের ব্যবস্থা আছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।”

বিএসইসির পক্ষ থেকে এই বার্তাটি আসার পর সোমবার বাজারের চিত্র কিছুটা বদলেছে। আগের কয়েকদিনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দর হারিয়ে ফেলা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিছুটা দর ফিরে পেয়েছে।

আগের দিন প্রায় ১০ শতাংশ দর হারিয়ে ৩১ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসা মেট্রো স্পিনিং মিলসের শেয়ারদর ৯.৮৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৪ টাকা ৬০ পয়স।

আমরা নেটওয়ার্ক ৮.৭৯ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড ৮.৭৪ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন ৮.৩০ শতাংশ, এডিএন টেলিকম ৮.২৮ শতাংশ, ইনটেক অনলাইন ৮.১৭ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিস ৮.১৩ শতাংশ মনোস্পুল পেপার ৭.২৬ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যার ৬.১৭ শতাংশ এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস ৫.৮১ শতাংশ দর ফিরে পেয়েছে।

শীর্ষ দশের বাইরে বাইরে আরও দুটি কোম্পানির শেয়ার ৫ শতাংশের বেশি, ৫টি কোম্পানির চার শতাংশের বেশি ৯টি কোম্পানির ৩ শতাংশের বেশি, ছয়টি কোম্পানির ২ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানির এক শতাংশের বেশি দর বেড়েছে।

বিপরীতে শেয়ার দর ফ্লোর প্রাইসের উপরে আছে এমন কোম্পানির মধ্যে কেবল সি পার্লের দর এক শতাংশের বেশি কমেছে। ঠিক ঠিক এক শতাংশ কমেছে বিডিকমের দর। এক শতাংশ বা কাছাকাছি কমেছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা ৮০ টির বেশি।

১৫৬টি কোম্পানি এদিন ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে। তবে চাহিদা না থাকায় খুব কম সংখ্যক শেয়ার হাতবদল হয়েছে। আর ৮০টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি।

লেনদেনেও ভারসাম্য ফেরেনি। কেবল ১০টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১২৪ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। শীর্ষ ২০ কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ১৭৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

অর্থাৎ মোট লেনদেনের ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ লেনদেন হয়েছে কেবল ২০টি কোম্পানিতে। কোনো কোম্পানিতে একটি, কোনোটিতে ৫টি, কোনোটিকে ১০০ বা ৫০০ শেয়ার লেনদেন হয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যাই বেশি।