‘‘সংস্কার করে ডিএসইকে ক্ষমতায়ন করলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’’, বলেন সংগঠনটির সভাপতি।
Published : 13 Aug 2024, 12:19 AM
পুঁজিবাজারকে গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে জুয়ার বোর্ড বা ‘ক্যাসিনো’র মত ব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএ।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি এর সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একাই কমিশনের ২-সিসি ক্ষমতার অপ্রপয়োগ করে এমনটি করছেন বলেও মনে করছে সংগঠনটি।
সোমবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ করা সব পরিচালকদের বাদ দেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি আইনের ২ সিসি ধারা অনুযায়ী, অন্য আইন বা এই আইনে যাই থাকুকনা কেনো কমিশন যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘একটি বাজার তো ক্যাসিনো হতে পারে না। সাবেক চেয়ারম্যান ২-সিসি ক্ষমতায় বাজে কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেছেন। ওটিসি (ওভার দ্যা কাউন্টার) বাজার থেকে তিনটি কোম্পানিকে এসএমই প্লাটফর্মে নিয়ে এসেছেন এই ক্ষমতা ব্যবহার করে। তিন কোম্পানিই উৎপাদনে নেই।’’
আইন অনুযায়ী সব কমিশনারদের নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও শিবলী রুবাইয়াত একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ডিএসইর পর্ষদে চার পরিচালক নিয়োগ হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। সাত স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে সরকার একজনকে নিয়োগ দেয় সেনাবাহিনী থেকে। বাকি ছয় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায়। আর চীনের সাংহাই-শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের একজন পরিচালক রয়েছে কৌশলগত বিনিয়োগকারি হিসেবে।
সাইফুল বলেন, ‘‘ডিএসই ও বিএসইসিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া পরিচালকদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন খাতের পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। আগে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হত স্বতন্ত্র পরিচালকদের।’’
ডিএসই ও বিএসইসির সংস্কার করলেই পুঁজিবাজারের সব সমস্যার সামাধান হবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সংস্কার করে ডিএসইকে ক্ষমতায়ন করলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
গত ১৫ বছরে এসব বিষয়ে কেনো বলা হয়নি সাংবাদিকদের প্রশ্নে সাইফুল বলেন, ‘‘এজন্য আমরা ক্ষমা চাই। আমরা কথা বলতে পারিনি, কথা বললেই নানা ধরনের হয়রানি করা হয়েছে। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে।
“ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আমরা তো ব্যবসা করতে এসেছি। আমরা তো সাধারণ ব্যবসায়ী, আমরা অন্য কিছুতে যেতে পারি না। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের উপর যখন-তখন নানা ধরনের নিয়ম আরোপ করা হয়েছে, এতে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি মন্তব্য করে ডিবিএ সভাপতি বলেন, “ফলশ্রুতিতে সেই কারসাজি চক্র আরো সক্রিয় হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায়।
এম খাইরুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থকে আসলেও তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।’’
বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগ দিতে ‘সার্চ কমিটি’ গঠনেরও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংগঠনটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর হায়দার খাঁন, পরিচালক দস্তগীর মো. আদিল, মাসুদুল হক, দিল আফরোজা কামাল, মামুন আকবর, সুমন দাস, শাহেদ ইমরান ও রাফিউজ্জামান বোখারীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।