৭৭ কোম্পানির ক্রেতা নেই, লেনদেন মার্চের সর্বনিম্ন

মার্চের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে ৯ কর্মদিবস, বেড়েছে ৬ দিন। এই কয়দিনে ডিএসইর সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 09:19 AM
Updated : 22 March 2023, 09:19 AM

‘দুর্দশাগ্রস্ত’ পুঁজিবাজার পার করল হতাশার আরও এক দিন।

বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা নেই। যেগুলোরর দর ফ্লোরের চেয়ে বেশি, তার মধ্যে হাতে গোনা দুয়েকটির কম বেড়েছে, কমেছে তার কয়েক গুণ বেশি।

লেনদেন কোনো রকমে তিনশ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করলেও তা মার্চের সর্বনিম্ন।

গত কয়েক মাস ধরেই পুঁজিবাজারে একটি প্রবণতা চলছে- ‘এক দিন বাড়লে দুই দিন পতন’, যা দেখা গেছে চলতি সপ্তাহেও।

রবি ও সোমবারের দরপতনের পর মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সূচক ১৮ পয়েন্ট বাড়লেও বুধবার তা আবার কমেছে ১৬ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারের এই প্রবণতাকে একজন বিশ্লেষক তুলনা করেছেন ‘বানরের বাঁশ বেয়ে উঠার’ বিষয়ে গণিতে বহুল ব্যবহৃত উপমার সঙ্গে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আলোচনার মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে এই হতাশাজনক চিত্র। গত জুলাইয়ের শেষে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ার আর সূচকের পতন রোধ করা গেছে বটে, তবে বাজার থেকে হারিয়ে গেছে গতি।

এই ফ্লোর প্রাইসে বেশিরভাগ শেয়ারের ক্রেতা থাকে না। বেশিরভাগ স্বল্প মূলধনী ও লোকসানি কিছু কোম্পানির শেয়ারের ওপর ভর করে সূচকের অল্প কিছু ওঠানামা হয় নিয়মিত।

মার্চের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে ৯ কর্মদিবস, বেড়েছে ৬ দিন। এই কয়দিনে ডিএসইর সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট। ১৫ কর্মদিবসের হিসাবে একে খুব একটা বড় পতন বলা যাবে না। তবে বিনিয়োগাকারীদের হতাশা বেড়েছে অন্য কারণে।

ফেব্রুয়ারির শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, মার্চে পুঁজিবাজারে সুখবর আসছে। এরপর লেনদেন ও সূচক বাড়ে একটি সপ্তাহ। সাত শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ঈদের আগে গতিশীল পুঁজিবাজারের আশার কথা বলাবলি হচ্ছিল। তবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের শুরু হয় পতন। ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর ফিরিয়ে আনার পর যেগুলোর শেয়ারদর বাড়ছিল, সেগুলো ফিরে আসতে থাকে তার ‘ঠিকানায়’।

বুধবার ডিএসইর ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে ২১৪টির লেনদেন হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে। বেড়েছে কেবল ১৪টির দর, কমেছে ৮৪টির। দুটি কোম্পানির লেনেদেন স্থগিত আগে থেকে, একটির লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকি ৭৭টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।

এছাড়া ১৫টি কোম্পানির একটি করে, ছয়টির দুটি করে, আরও আটটির ১০টির নিচে, ২৫টি কোম্পানির ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০টি, আরও ১৭টি কোম্পানির ৫৩ থেকে ১০০টি, আরও ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার এক হাজারের নিচে লেনদেন হয়েছে।

এদিন লেনদেন তিনশ কোটির নিচে নেমে যাওয়ার আভাস মিলেলেও একেবারে শেষ দিকে কিছু ক্রয়াদেশ আসে। শেষ পর্যন্ত হাতবদল হয় ৩২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

এই লেনদেনের মধ্যে শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানিতেই হাতবদল হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। শীর্ষ ২০ কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ২০১ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬০ শতাংশেরও বেশি।

সবচেয়ে বেশি ৮.০৩ শতাংশ বেড়েছে লোকসানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২.৫৬ শতাংশ বেড়েছে আরডি ফুডের দর।

এমারেল্ড অয়েল, আলহাজ্ব টেক্সটাটইল, মুন্নু অ্যাগ্রো ও শমরিতা হসপিটালের দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ৭.৪৭ শতাংশ দর হারিয়েছে বেঙ্গল উইন্ডসর, যেটি ছয় কর্মদিবসে ৪২ টাকা থেকে নেমে এসেছে ২৯ টাকা ৭০ পয়সায়। ‘দুর্বল’ এই কোম্পানির শেয়ার মন্দা পুঁজিবাজারে গত ২৫ অক্টোবর থেকে টানা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।

সর্বোচ্চ দরপতনের তালিকায় থাকা ইমাম বাটন ৬.৮৬ শতাংশ, রুপালী লাইফ ৫.৬২ শতাংশ, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স ৫.১৮ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৪.৮১ শতাংশ দর হারিয়েছে।

আরও ৫টি কোম্পানির শেয়ারদর দর তিন শতাংশের বেশি, ২০টি কোম্পানির দর ২ থেকে ৩ শতাংশ, ২২টির দর ১ থেকে ২ শাতংশ কমেছে।