শেষ বাঁশি বাজার পরপরই প্রবল আবেগ ছুঁয়ে গেল পেপ গুয়ার্দিওলাকে। তার চোখের কোণে চিকচিক করছিল জল। তবে একটু পরই যেন তার মনে হলো, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তো এখনও বাকি! ‘ডাবল’ জয়ের আনন্দে বুঁদ হলেই চলবে না, ‘ট্রেবল’ জিতে ইতিহাসের অংশ হতে হবে। এফএ কাপের শিরোপা জয়ের পর দলকে এবার সেই অভিযানেই সবটুকু ঢেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলছেন ম্যানচেস্টার সিটি কোচ।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের পর এফএ কাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্নের পথ ধরে ছুটছে গুয়ার্দিওলার দল। এফএ কাপের ইতিহাসের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বি ফাইনালে তারা শনিবার ২-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে।
সিটি অবশ্য এ দিন তাদের চেনা বিধ্বংসী চেহারায় ছিল না। ইউনাইটেড লড়াই করে যথেষ্টই। তবে শেষ পর্যন্ত শ্রেয়তর দল হিসেবেই জয় আদায় করে নিয়েছে তারা।
গুয়ার্দিওলার নামও তাতে উঠে যায় রেকর্ড বইয়ে। লিগ ও এফএ কাপ জয়ের ‘ডাবল’ একাধিকবার জয়ী তৃতীয় কোচ তিনি। তার আগে এই কীর্তি ছিল শুধু আর্সেন ভেঙ্গার ও স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে সিটি এই জোড়া সাফল্য পেয়েছিল ২০১৮-১৯ মৌসুমেও।
তবে তার ও ক্লাবের সামনে আরও বড় অর্জনের হাতছানি এখন। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া এই দুই শিরোপার সঙ্গে একই মৌসুমে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। ১৯৯৯ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের সেই অর্জনে এবার নিজেদের রাঙানোর সুযোগ সিটির।
গুয়ার্দিওলা অবশ্য বার্সেলোনার হয়ে লা লিগা, কোপা দেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রেবল জিতেছেন ২০০৮-০৯ মৌসুমে। সিটির হয়েও পুনরাবৃত্তি করতে পারলে তিনি ফুটবল ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন নিশ্চিতভাবেই।
এফএ কাপ জয়ের পর নিজ দলের ফুটবলারদের আলিঙ্গনে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত দেখা যায় গুয়ার্দিওলাকে। তবে সামলে ওঠেন তিনি দ্রুতই। আগামী শনিবারই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানের সঙ্গে লড়াই তাদের।
সিটির ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল তারা লিগ জয়ের আগে থেকেই। গুয়ার্দিওলা তখন বারবারই প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে আসছিলেন প্রতিটি ধাপ ধরে এগোনোর কথা। লিগের পর এফএ কাপ জয়ের পর এবার তিনি সরাসরি বললেন স্বপ্নের কথা।
“এফএ কাপ জয়ের অনুভূতি বিশেষ কিছু। এখন আমি প্রথমবারের মতো বলতে পারি ট্রেবল জয়ের কথা … স্রেফ আরেকটি ম্যাচ দূরে এটি…।”
“আমি ভাবতে শুরু করেছি, ইন্টারকে হারাতে আমাদের কী করতে হবে। ছেলেদের সঙ্গে অনেকবার এটা নিয়ে কথা বলেছি যে, ইন্টারকে হারাতে যা যা করা দরকার, সেদিকে যেন মনোযোগ দেয়।”
২০১৬ সালে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার কোচিংয়ে এই নিয়ে ১১টি ট্রফি জিতল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এখনও ধরা দেয়নি। মাঝারি মানের ক্লাব থেকে ইংলিশ ফুটবলে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠলেও ইউরোপ সেরার মঞ্চে তারা জিততে পারেনি নিজেদের ইতিহাসে একবারও।
গুয়ার্দিওলার মতে, ইউরোপের সেরা হতে না পারলে প্রাপ্য স্বীকৃতিও ধরা দেবে না এই ক্লাবের।
“আরেকটি ম্যাচের ব্যাপার এবং আমরা অনুভব করছি যে, এমন একটি জায়গায় আমরা এখন আছি, হয়তো আর কখনোই এখানে আসতে পারব না। এখন যদি আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে না পারি, কিছুই পরিপূর্ণ হবে না।”
“অসাধারণ কিছু মৌসুমে কেটেছে আমাদের। প্রিমিয়ার লিগ থেকে এফএ কাপ, লিগ কাপ, এসব জিতেছি নানা সময়ে। তবে যেমন স্বীকৃতি আমাদের প্রাপ্য, তা পেতে হলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে হবে আমাদের। আমরা দারুণ খেলেছি, উপভোগ করেছি, সবই হয়েছে। কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে না পারলে বড় সুযোগ হাতছাড়া হবে। দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে এবং আমাদের এটা করতেই হবে।”