Published : 08 Apr 2023, 05:56 PM
প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে আচমকাই শট নিলেন মুজাফ্ফর মুজাফ্ফরভ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের গোলরক্ষক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল এক ড্রপ খেয়ে খুঁজে নিল জাল। মোহামেডানও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় নিয়ে বিরতিতে গেল। বিরতির পর হ্যাটট্রিক পূরণ করলেন সুলেমানে দিয়াবাতে। বড় জয়ের উচ্ছ্বাসে প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করল সাদা-কালো জার্সিধারীরা।
গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শনিবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ৬-১ গোলে হারিয়েছে মোহামেডান। দিনের অন্য ম্যাচে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পুলিশ এফসিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চমক
মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে হারিয়ে এবারের প্রিমিয়ার লিগ শুরু মোহামেডানের। কিন্তু প্রথম পর্বে ‘সাদা-কালো’ জার্সিধারীদের পারফরম্যান্স ছিল বড়ই মলিন। ১০ ম্যাচে মাত্র ১২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে থেকে শেষ করে প্রথম ধাপ।
ফিরতি লেগেও শুরুতে মোহামেডানকে ভড়কে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। অষ্টম মিনিটে পাওয়া প্রথম ভালো সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় তারা। কর্নারে বক্সের ভেতর থেকে এক সতীর্থের ফ্লিকের পর হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আতিকুজ্জামান।
দিয়াবাতের জোড়া গোল
পিছিয়ে পড়ার পর যেন ঘুম ভাঙে মোহামেডানের। ২২তম মিনিটে গোছালো আক্রমণ থেকে সমতায় ফিরে তারা। সতীর্থের আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন দিয়াবাতে। ৩৬ মিনিটে বক্সের ঠিক উপর থেকে জোরালো শটে মোহামেডানকে এগিয়েও নেন মালির এই ফরোয়ার্ড।
মুজাফ্ফরভের দর্শনীয় গোল
ম্যাচের তখন ৪২তম মিনিটের খেলা চলছে। সবাই যেন বিরতির বাঁশি বাজার অপেক্ষায়। মাঝমাঠে বল মুজাফ্ফরভের পায়ে। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে আচমকা শট নিলেন উজবেকিস্তানের এই মিডফিল্ডার। গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল তার সামনে ড্রপ খেয়ে লুটোপুটি খায় জালে। এই গোল হজম করে হতভম্ব হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
দিয়াবাতের হ্যাটট্রিক
৫২তম মিনিটে স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দিয়াবাতে। বক্সে মালির এই ফরোয়ার্ডই ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। চলতি লিগে এটি দিয়াবাতের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে এএফসি উত্তরাকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে প্রথমটি করেছিলেন তিনি।
চলতি লিগে হ্যাটট্রিক করেছেন এলিটা কিংসলে ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। এএফসি উত্তরার বিপক্ষে আবাহনীর ৭-০ গোলে জেতা ম্যাচে দুজনেই তিনবার করে পেয়েছিলেন জালের দেখা।
লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই জমে উঠল আরও। বসুন্ধরা কিংসের দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো ও শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াসের মতো দিয়াবাতের গোলও ৯টি।
সানডে ও সাজ্জাদের গোলে ‘শেষ’ ম্যাচ
৬৯তম মিনিটে দূরের পোস্টে ফাঁকায় থাকা এমানুয়েল সানডে অনায়াসে স্কোরলাইন ৫-১ করেন। ৮৪তম মিনিটে অবশ্য গোলটি করতে পারতেন দিয়াবাতে। বক্সে ফাঁকায় থাকা এই ফরোয়ার্ড শট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিঃস্বার্থভাবে বাড়িয়ে দেন সাজ্জাদ হোসেনকে। বদলি এই ফরোয়ার্ড লক্ষ্যভেদ করেই ছুটে যান অধিনায়কের কাছে; উদযাপনে মাততে।
শেখ রাসেলের ত্রাতা ইব্রাহিম-উদোহ
ময়মনসিংহে প্রথম এগিয়ে যায় পুলিশ এফসি। ৩৭ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা এডওয়ার্ড মরিল্লো তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাস দেন জোহান আরাঙ্গোকে। বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া শট ঝাঁপিয়েও আটকাতে পারেননি আশরাফুল রানা; বল গ্লাভস ছুঁয়ে জড়িয়ে যায় জালে।
৪৯ মিনিটে সমতায় ফেরে শেখ রাসেল। জামাল ভুঁইয়ার লম্বা ক্রস ফেরাতে ব্যর্থ গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান তুষার। বল পড়ে ছয় গজ বক্সে থাকা ইব্রাহিমের পায়ে, ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় সুযোগ কাজে লাগান তিনি। এরপর দুই মিনিটের মধ্যে এমফোন উদোহ, নিহাদ জামান উচ্ছ্বাসের গোলে শঙ্কার মেঘ সরিয়ে জয়ের পথে ছুটতে থাকে শেখ রাসেল।
দারুণ জয়ে ১১ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শেখ রাসেল। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ পুলিশ এফসি। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে মোহামেডান।