পর্তুগিজদের দাপটের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি সুইজারল্যান্ড।
Published : 07 Dec 2022, 12:55 AM
বিশ্বকাপে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিলেন গনসালো রামোস। হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি সতীর্থের গোলেও অবদান রাখলেন এই তরুণ। দাপুটে পারফরম্যান্সে সুইজারল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল পর্তুগাল।
কাতার বিশ্বকাপে লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচটি ৬-১ গোলে জিতেছে ফের্নান্দো সান্তোসের দল।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে খেলতে নামা দলটির অন্য তিন গোলদাতা পেপে, রাফায়েল গেরেইরো ও রাফায়েল লেয়াও।
পর্তুগালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুইসরাও শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলার খেলার চেষ্টা করেছে। বল দখলে তো তারাই একটু এগিয়ে। কিন্তু এ দিন পর্তুগিজ ফুটবল ছিল নিখুঁত, যার জবাব জানা ছিল না প্রতিপক্ষের।
ম্যাচ পরিসংখ্যানেও তা পরিষ্কার। গোলের উদ্দেশ্যে ১৫টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখতে পারে পর্তুগাল, যার ৬টিই গোল। আর সুইসদের ১০ শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে।
দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সের পর পর্তুগালের সামনে এবার মরক্কো চ্যালেঞ্জ; দিনের প্রথম ম্যাচে যারা হারিয়ে দিয়েছে ফেভারিট স্পেনকে।
আসরে প্রথম দুই ম্যাচে একেবারে শেষ দিকে রোনালদোর বদলি হিসেবে নামার সুযোগ পান রামোস। দলের সেরা তারকার জায়গায় এবার তাকে শুরুর একাদশে রাখেন কোচ। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে একাদশে নেমে ১৭ মিনিটের মাথায় জালের দেখা পেলেন বেনফিকার এই ফরোয়ার্ড।
গোলটাও করলেন কী দুর্দান্ত! বাঁ দিক থেকে জোয়াও ফেলিক্সের বাড়ানো বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে দুরূহ কোণ থেকে নেন বুলেট গতির শট, কাছের পোস্ট ঘেঁষে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা। গোলরক্ষক ইয়ান সমেসের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
৩০তম মিনিটে অন্যপাশে হতে পারত আরেকটি চমৎকার গোল। অনেক দূর থেকে জেরদান শাচিরির দুর্দান্ত ফ্রি কিকে বল রক্ষণ দেয়ালের ওপর দিয়ে বাঁক খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া দিয়েগো কস্তার আঙুল ছুঁয়ে যায় বাইরে।
এর তিন মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে পর্তুগাল। ব্রুনো ফের্নান্দেসের কর্নারে লাফিয়ে উঠে নেওয়া হেডে গোলটি করেন পেপে। সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোল করলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার।
আসরে এই নিয়ে তিন ম্যাচ খেলে দলের পাঁচ গোলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো ফের্নান্দেসের নাম (দুটি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট); ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এক আসরে কোনো পর্তুগিজ খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি। ৬৬’র ওই আসরে ইউজেবিও ১০ ও জোসে তরেস ৬ গোলে অবদান রেখেছিলেন।
৪৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়তে পারত আরও। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে ওয়ান-অন-ওয়ানে শট নেন ২১ বছর বয়সী রামোস। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক সমের।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে রামোসের দ্বিতীয় গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় পর্তুগিজরা। ডান দিক থেকে দিয়োগো দালোতের পাস গোলমুখে পেয়ে টোকায় জালে পাঠান তিনি।
এর চার মিনিট পরই স্কোরলাইন ৪-০ করে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন রাফায়েল গেরেইরো। এই গোলেও জড়িয়ে রামোসের নাম। তার পাস বক্সে পেয়ে জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ডিফেন্ডার।
তিন মিনিট পর কর্নারে উড়ে আসা বল প্রতিপক্ষের মাথা ছুঁয়ে দূরের পোস্টে পেয়ে যান মানুয়েল আকনজি। ছোট্ট টোকায় ব্যবধান কমান তিনি।
যদিও তাদের সেই স্বস্তি উবে যেতে সময় লাগেনি। আট মিনিট পরই পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ চিপ শটে আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে জালে পাঠান রামোস। ২০০২ সালে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
দ্বিতীয় পর্তুগিজ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করলেন রামোস। ১৯৬৬ আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৪ গোল করেছিলেন গ্রেট ইউজেবিও।
৭৩তম মিনিটে ফেলিক্সের বদলি হিসেবে রোনালদোকে নামান কোচ। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করার অসামান্য রেকর্ড গড়লেও নকআউট পর্বে গোল না পাওয়ার শূন্যতা এখনও রয়েই গেছে তার। এ দিন অবশ্য একবার জালে বল পাঠান পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার, কিন্তু পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন।
৮৭তম মিনিটে ফের্নান্দেসের বদলি নামেন লেয়াও এবং পাঁচ মিনিট পরই দারুণ নৈপুণ্যে সুইসদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন তিনি। গেরেইরোর পাস পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন তিনি।
নিখুঁত পারফরম্যান্স আর প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখল পর্তুগাল, ২০০৬ আসরের পর প্রথম।
দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মরক্কোর মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।