স্প্যানিশ এই কোচের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি।
Published : 11 Oct 2022, 04:38 PM
৮ ম্যাচে এক জয়, দুই ড্র আর পাঁচ হার- বাংলাদেশ কোচ হিসেবে এই হচ্ছে হাভিয়ের কাবরেরার পরিসংখ্যান। কোচের পারফরম্যান্স আতশী কাঁচের নিচে ফেলে পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ন্যাশনাল টিমস কমিটি। তবে এখনও কারবেরার ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তারা।
বাফুফের সঙ্গে কাবরেরার বর্তমান চুক্তি শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। নতুন বছরের পথচলায় এই স্প্যানিশ কোচের হাতে দলের হাল থাকবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাফুফে ভবনে মঙ্গলবার ন্যাশনাল টিমস কমিটির বৈঠকে বসার কারণও ছিল কোচের পারফরম্যান্সে পর্যালোচনা।
সভা শেষে কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ জানিয়েছেন কোচকে নিয়ে তাদের মিশ্র অনুভূতির কথা।
“মেয়াদ বাড়ানো ভিন্ন ইস্যু, আজকে আমরা খোলামনে আলোচনা করেছি। নভেম্বর মাসে জানা যাবে (কোচ থাকবে কিনা)। মূলত তখনই সিদ্ধান্ত নেব। এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জরুরি কোনো বিষয় নয়। এটা চলমান বিষয়। ভালো-খারাপ সব অনুভূতি আছে। প্লেয়ারদের জন্য, দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে আমাদের।”
“দীর্ঘ মিটিং হয়েছে। মিটিং ছিল অনুসিদ্ধান্তের নয়, পর্যালোচনার। গত দুই রাউন্ডে যে ম্যাচগুলো হয়েছে, তার ফল, টেকনিক্যাল রিপোর্ট, আমাদের কেমন প্রস্তুতি ছিল, এখন কি রকম পর্যায়ে আছি, আমাদের পারফরম্যান্স কেমন হয়েছিল, পারফরম্যান্সের সঙ্গে রেজাল্টের সামঞ্জস্য কি পরিমাণ ছিল, এগুলোর পর্যালোচনা ছিল। এ বিষয়ে কমিটির সদস্যারা মতামত দিয়েছেন, প্রশ্ন রেখেছেন। ন্যাশনাল টিমের কোচ ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দুজনেইর সঙ্গে আমাদের পর্যালোচনা ছিল, কোনো অনুসিদ্ধান্ত ছিল না।”
গত মার্চে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়ে বাংলাদেশ কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু কাবরেরা। পরের ম্যাচেও শক্তিশালী ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ড্র করে দল। কিন্তু এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে গিয়ে বাহরাইন (২-০) ও তুর্কমেনিস্তানের (২-১) বিপক্ষে হারের পর স্বাগতিক মালয়েশিয়ার কাছে উড়ে যায় ৪-১ গোলে।
সেপ্টেম্বরে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কম্বোডিয়াকে ১-০ গোলে হারায় দল এবং বাংলাদেশ কোচ হিসেবে প্রথম জয়ের অপেক্ষা ফুরোয় কাবরেরার।
ওই জয়ের উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষের প্রীতি ম্যাচে ফের ভরাডুবি। ৩-১ গোলে হেরে যান জামাল-জিকোরা। এর কদিন আগেই নেপালের মেয়েদের একই ব্যবধানে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা জয়ের উৎসব করেন সাবিনা-মারিয়ারা। ছেলেদের হার নিয়ে তাই নাবিলের হতাশা আরও বেশি।
“আমাদের দুই রকম পর্যালোচনা ছিল। যেহেতু দুই ধরণের খেলা ছিল। গত জুনে এশিয়ান কাপের যে খেলা ছিল, সেগুলো ছিল কঠিন ম্যাচ। সেখানে যাওয়ার আগে আমরা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছিলাম। এরপর বাহরাইনের কাছে ২-০ গোলে হেরেছি, তারা কিন্তু আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ১০৭ ধাপ এগিয়ে। তাদের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারা কিন্তু আমাদের জন্য ভালো খেলে হারার ইঙ্গিত, তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে হেরেছি ২-১ গোলে, তারাও আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৬০ ধাপের (৫৭) মতো এগিয়ে। এগুলো আমাদের চয়েজ করা ম্যাচ নয়, নির্ধারিত। ওখানে শুধু স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আমাদের খেলাটা আশানুরূপ হয়নি।”
“আমাদের মতো আপনারাও দেখেছেন, যদি আমাদের ধারাবাহিকভাবে ৩ বা ৪টা ম্যাচ থাকে, তাহলে তৃতীয় বা চতুর্থ ম্যাচে আমাদের আশানুরূপ হয় না। কী কারণে হয় না, কী করে এখানে উন্নতি করা যেতে পারে, এটা নিয়ে আমাদের আজকের মূল আলোচনা হয়েছে। কম্বোডিয়া র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের চেয়ে ২০/২২ ধাপ এগিয়ে থাকলেরও তাদের মাঠে আমরা জিতেছি। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা ছিল। ওই সময় আমাদের দেশও খুশির জোয়ারে ভাসছিল, যেহেতু ওই সময় আমাদের মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ফিরেছিল। কিন্তু এরপরই নেপালে গিয়ে ৩-১ গোলে হারা, আমাদের জন্য খুবই আশাহত করার মতো বিষয় ছিল।”
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোচ কাবরেরা। কথা বলেছেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল থমাস স্মলিও। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কোচের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অপেক্ষা করার পক্ষে নাবিল।
“কোচ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন নেপালে ২০ মিনিটে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়, আমরাও দেখেছি প্রথমার্ধে তিন গোল খেয়েছে দল। সেখান থেকে আমাদের ফেরত আসা…দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের মনোযোগ ছিল না। টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট, বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা, কোন ট্রেন্ডগুলো ধারাবাহিক, কোন দিকগুলো ইতিবাচক, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
“আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আমরা আরেকটি মিটিং করব। আগামী বছর আমাদের কি কি এনগেজমেন্ট আছে, সম্ভাব্য কি কি এনগেজমেন্ট থাকতে পারে, তার একটা ধারণা আমরা নিয়েছি, পরের মিটিংয়ে আমরা সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। কোচের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তখন হবে।”