আলেহান্দ্রো গারনাচোর জোড়া গোলে চার ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল এরিক টেন হাগের দল।
Published : 27 Dec 2023, 03:02 AM
টানা ব্যর্থতায় নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস। তার ওপর ম্যাচের শুরুর দিকেই জোড়া গোলের ধাক্কা। যে কোনো দলেরই তাতে খেই হারানোয় স্বাভাবিকা। তবে এ দিনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেন ফিরে গেল পুরনো দিনে। একের পর এক আক্রমণে চেপে ধরল অ্যাস্টন ভিলাকে। নাটকীয়তায় ঠাসা লড়াইয়ে তারা হারিয়ে দিল মৌসুমের বিস্ময় জাগানো দলটিকে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মঙ্গলবার রাতে ইউনাইটেডের জয়ের নায়ক আলেহান্দ্রো গারনাচো। জন ম্যাকগিন ও লেওন্দারের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ১২ মিনিটে দুবার জালে বল পাঠিয়ে সমতা টানেন গারনাচো। এরপর গাসমুস হয়লুনের লক্ষ্যভেদে ৩-২ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক দল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চার ম্যাচ পর জিতল ইউনাইটেড। ওই চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছিল তারা। ব্যর্থতার জাল ছেঁড়ার স্বস্তি এবং দারুণ পারফরম্যান্সে ছন্দে ফেরার আভাস দেওয়ার জয়ে লিগ টেবিলেও এগিয়েছে ম্যানচেস্টারের দলটি। ১৯ ম্যাচে ১০ জয় ও ১ ড্রয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছে ইউনাইটেড।
ম্যাচের প্রথম ভাগে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুর্দান্ত দুটি সেটপিসে গোল আদায় করে নেয় ভিলা। ২১তম মিনিটে জন ম্যাকগিন ডান দিকের সাইডলাইন থেকে ফ্রি কিক নেন, বল বক্সে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। পা ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন অলি ওয়াটকিন্স, তার পায়ে বল লেগেছে ভেবে অফসাইডের আবেদন করে ইউনাইটেড। তবে ভিএআরে দেখা যায়, তেমন কিছু হয়নি।
দ্বিতীয় গোলেও জড়িয়ে আছে ম্যাকগিনের নাম এবং এই গোলে ইউনাইটেডের রক্ষণের দুর্বলতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার কর্নারে বল দূরের পোস্টে পেয়ে হেড পাসে গোলমুখে বাড়ান ক্লেঁমো লংলে। সেখানে অনেকের মাঝেও ফাঁকায় বল পেয়ে বিনা বাধায় জালে ঠেলে দেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার লেওন্দার।
জোড়া গোল খেয়ে হয়তো কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল ইউনাইটেড। আগে থেকেই প্রবল চাপে থাকা কোচ এরিক টেন হাগের তখন মুখে হাত। ডাগআউট তার চোখেমুখে যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে অবশ্য তারা ভালো কিছু আক্রমণ শাণায়। কিন্তু জয়ের মতো গোলের স্বাদও ভুলতে বসা দলটি বিরতির আগে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে কাটিয়ে জালে বল পাঠান আলেহান্দ্রো গারনাচো। উল্লাসে ফেটে পড়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ডাগআউটে দু-হাত উঁচিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন টেন হাগ। তবে মুহূর্ত বাদেই তাদের ঘিরে ধরে হতাশা; ভিএআরে দেখা যায়, পাস রিসিভ করার সময় অফসাইডে ছিলেন গারনাচো।
কিছুক্ষণ পর ফের পাল্টা আক্রমণে ওঠে ইউনাইটেড। ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যান মার্কাস র ্যাশফোর্ড। তবে দারুণ নৈপুণ্য দেখান মার্তিনেস। বলের গতি-প্রকৃতি বুঝে একেবারে ঠিক সময়ে ডি-বক্সের বাইরে এসে ক্লিয়ার করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক। দু্ই মিনিট পর ব্রুনো ফের্নান্দেসের জোরাল শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি।
মরিয়া ইউনাইটেড অবশেষে গোলের দেখা পায় ৫৯তম মিনিটে। ডি-বক্সে র ্যাশফোর্ডের পাস পেয়ে ডান পায়ের নিচু শটে ব্যবধান কমান তরুণ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড গারনাচো।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চার ম্যাচ এবং ৪৩০ মিনিট পর জালের দেখা পেল প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ইউনাইটেড। করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। দ্রুত দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যায় তারা। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের দুর্ভাগ্যও তাদের সহায় হয়।
ডি-বক্সের মাঝামাঝি থেকে জোরাল শট নেন গারনাচো। ঠিক দিকেই ঝাঁপিয়েছিলেন মার্তিনেস; কিন্তু ডিফেন্ডার দিয়েগো কার্লোসের পায়ে লেগে দিক পাল্টে বল জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের। সমতায় ফেরে ইউনাইটেড।
৮২তম মিনিটে জয়সূচক গোলটি করে ইউনাইটেড। কর্নার থেকে আসা বল বক্সে কেউ পারেনি ক্লিয়ার করতে, উল্টো ম্যাকগিনের হাঁটুতে লেগে চলে যায় হয়লুনের পায়ে। ঠাণ্ডা মাথায় নিখুঁত শটে বল জালে পাঠান ডেনমার্কের তরুণ স্ট্রাইকার।
সাত ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের তেতো স্বাদ পেল অ্যাস্টন ভিলা। এখানে জিতলে শীর্ষে লিভারপুলের পাশে বসতে পারতো তারা। ১৯ ম্যাচে চতুর্থ হারের পর ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে দলটি।
তাদের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে দুইয়ে ১৮ ম্যাচ খেলা আর্সেনাল।
দিনের আগের ম্যাচে বার্নলিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শীর্ষে ওঠে লিভারপুল। ১৯ ম্যাচে তাদের ৪২ পয়েন্ট।