ক্ষমা চাইলেন টেন হাগ, দায় দিলেন খেলোয়াড়দের

প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই হারের পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের কণ্ঠে তীব্র হতাশার ছোঁয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 09:48 AM
Updated : 14 August 2022, 09:48 AM

দলে শক্তির ঘাটতি আগে থেকেই স্পষ্ট। গত কয়েক মৌসুমে এমন কোনো সাফল্যও নেই, যা থেকে অনুপ্রেরণা মিলতে পারে। তারপরও নতুন কোচ এরিক টেন হাগের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে, আপাতত সেসব সম্ভাবনা যেন বড্ড ক্ষীণ। প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই হারের পর অনেক অভিজ্ঞতায় রিদ্ধ কোচের কণ্ঠেও তীব্র হতাশার ছোঁয়া।

গত সপ্তাহে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিওনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হার ইউনাইটেডের জন্য নিশ্চিতভাবেই ছিল সতর্কবার্তা। আর সবশেষ শনিবার ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে যা হলো, তা যেন সত্যিকারের বিপদ সংকেত। পুরো ম্যাচে কোণঠাসা হয়ে থেকে ৪-০ গোলে উড়ে যায় রোনালদো-ম্যাগুইয়াররা।

হতাশার সবচেয়ে বড় কারণ ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের হতশ্রী পারফরম্যান্স, তাদের শরীরী ভাষা। প্রথমার্ধ চলার সময় দলটির পারফরম্যান্স দেখে সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্লেন মারে মন্তব্য করেন, “সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ব্রেন্টফোর্ড এমনকি ভালোও খেলছে না, আসলে তাদের খেলতেই হচ্ছে না। তারা কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে সুযোগগুলো দিচ্ছে তাই কাজে লাগাচ্ছে।”

আসলেই তাই। প্রথম দুটি গোলেই যেমন ফুটে ওঠে ইউনাইটেডের গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়ার নিদারুণ ব্যর্থতা।

দশম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ব্রেন্টফোর্ডের জস ডিসিলভার শটে খুব বেশি জোর ছিল না। বাঁ দিকে শুয়ে পড়ে বল ধরতে যান দে হেয়া, বল তার হাত ফসকে জড়ায় জালে। আট মিনিট পর তিনি কী বুঝে পাস দিলেন সোজাসুজি ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনকে, খেয়ালই করলেন না ডেনিশ মিডফিল্ডারের সঙ্গে লেগে আছে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়। এরিকসেন পারলেন না নিয়ন্ত্রণে নিতে, সঙ্গে লেগে থাকা ইয়েনসেন বল ধরে নিচু শটে খুঁজে নেন ঠিকানা।

ছেলেদের এমন দশা দেখে ডাগআউটে তখন টেন হাগের মাথায় হাত। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন তিনি। দিকহারা দলের সবার কড়া সমালোচনাও করলেন।

“ব্রেন্টফোর্ড ছিল অনেক বেশি ক্ষুধার্ত। আমরা ব্যক্তিগত ভুলে গোল হজম করেছি। কৌশলগত পরিকল্পনা করার পর সেগুলো তো ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলতে পারেন না।”

বিরতির অনেক আগেই ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেয় ব্রেন্টফোর্ড। যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথই যেন জানা ছিল না ইউনাইটেডের। ন্যূনতম সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি তারা। এমন হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ৫২ বছর বয়সী কোচ।

“আমার জন্য এটা খুব কঠিন। যে কোনো ম্যাচেই এমন শুরু অবাক করার।”

“৩৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ৪ গোল খেয়ে ফেলি। এটা হতে পারে না। দলকে এর দায় নিতেই হবে। সমর্থকদের জন্য আমার খারাপ লাগছে, যারা আমাদের পাশে থাকার জন্য সবকিছু করেছে। তাদের আমরা হতাশ করেছি।”

চলতি দলবদলের এখনও কিছুদিন বাকি। দলের শক্তি বাড়াতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন টেন হাগ। তবে বর্তমান স্কোয়াডের অবস্থা কী, কতটা খারাপ? ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়েরার অবশ্য বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, চটজলদি তিনি ইউনাইটেডের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছেন না।

“একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। অনেক বছরের ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনার ফল। নেতৃত্বের অভাব আছে আর তাদের নতুন সদস্য যোগ করার বিষয়টি তো চরম বাজে।”

“তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সময় এবং অনেক অর্থের প্রয়োজন। সঙ্গে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের ধৈর্য্যও ধরতে হবে। মূল কথা, তারা যেখানে থাকতে চায় সেখান থেকে এখন অনেক দূরে আছে।”

ইউনাইটেড সবশেষ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে ৯ বছর আগে, কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের মেয়াদের শেষ মৌসুমে।

এবার টানা দুই হারে পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে প্রতিযোগিতাটির সফলতম দলটি, ৩০ বছরে যা প্রথম। সব মিলিয়ে এখান থেকে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তাটা বেশ কঠিন। অনেক হতাশার মাঝে টেন হাগ অবশ্য দলের ওপর আশা হারাচ্ছেন না।

“তারা ভালো খেলোয়াড়। মাঠে তাদের ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে, এটাই আমরা করতে পারিনি। তাদের আমি নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রেখে খেলতে বলেছিলাম, দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম, সেটা তারা করেনি।”