কোপা দেল রে
৬ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮৩ মিনিট পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা; কিন্তু শেষ দিকে দুই গোল খেয়ে জয় হাতছাড়া করল তারা।
Published : 26 Feb 2025, 04:38 AM
গ্যালারিতে তখন কেবল নড়েচড়ে বসছিলেন দর্শকদের অনেকে। এর মধ্যেই বার্সেলোনার জালে বল! একটু পর আরেকবার। শুরুর জোড়া ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াল বার্সেলোনা। চার গোল করে দারুণ এক জয়ের পথে ছিল তারা; কিন্তু শেষ দিকে আবার নাটকীয় মোড়। তাদের জালে আরও দুই গোল করে হার এড়াল আতলেতিকো মাদ্রিদ।
কোপা দেল রের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে ৮ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইটি ৪-৪ সমতায় শেষ হয়েছে।
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে ৬ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর, ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮৩ মিনিট পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। বাকি সময়ে দুই গোল খেয়ে বসে স্বাগতিকরা।
আতলেতিকোর প্রথম দুটি গোল করেন হুলিয়ান আলভারেস ও অঁতোয়ান গ্রিজমান। এরপর প্রথমার্ধেই বার্সেলোনার হয়ে জালের দেখা পান পেদ্রি, পাউ কুবার্সি ও ইনিগো মার্তিনেস। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে ব্যবধান বাড়ান রবের্ত লেভানদোভস্কি। মার্কোস ইয়োরেন্তে আতলেতিকোর ব্যবধান কমানোর পর চার মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সমতা টানেন বদলি নামা আলেকসান্দার সরলথ।
গত ডিসেম্বরে লা লিগার ম্যাচে এই সরলথের ৯৬তম মিনিটে গোলে বার্সেলোনার মাঠে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল আতলেতিকো।
এবার ভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যায় আতলেতিকো। কর্নারে সতীর্থের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে গ্রিজমান ক্রস বাড়ান বক্সে, ক্লেমোঁ লংলের হেড পাসে দূরের পোস্টে ভলিতে বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আলভারেস।
ঘড়ির কাঁটায় ম্যাচের তখন ৪৬ সেকেন্ড।
সেই রেশ থাকতেই ষষ্ঠ মিনিটে আরেকটি গোল খেয়ে বসে বার্সেলোনা। যেখানে যথেষ্ট দায় ছিল তাদের রক্ষণের। একে তো ‘হাইলাইন ডিফেন্স’, তার মধ্যে ডিফেন্ডার জুল কুন্দের ভুল পাসে আক্রমণে ওঠে আতলতিকো। আলভারেসের পাস ধরে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন গ্রিজমান।
দ্বাদশ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ হারান ফেররান তরেস। রাফিনিয়ার পাস ধরে এগিয়ে যান তিনি। সামনে একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক, কিন্তু তাকে পরাস্ত করতে পারেননি স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। তার শট ঠেকিয়ে দেন হুয়ান মুসো।
ওই যাত্রায় না পারলেও, জবাব দিতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি স্বাগতিকদের। ১৯ থেকে ২১, এই তিন মিনিটের মধ্যে দুবার আতলেতিকোর জালে বল পাঠিয়ে সমতায় ফেরে তারা।
বক্সে কুন্দের পাসে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে নিচু শটে প্রথম গোলটি করেন মিডফিল্ডার পেদ্রি। আর রাফিনিয়ার কর্নারে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ১৮ বছর বয়সী স্প্যানিশ ডিফেন্ডার কুবার্সি।
বার্সেলোনার জার্সিতে ৬৩ ম্যাচে কুবার্সির প্রথম গোল এটি।
৩২তম মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ পান তরেস, এবার এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে কাটিয়েও ফেলেন তিনি; কিন্তু শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ঠিকমতো শট নিতে পারেননি।
আতলেতিকোর দুর্বল রক্ষণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৪১তম মিনিটে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন মার্তিনেস। রাফিনিয়ার কর্নারে বক্সে বিনা বাধায় ছুটে গিয়ে দূরের পোস্টে হেডে গোলটি করেন ৩৩ বছর বয়সী স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।
সফরকারীরা অতি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ায় বেশিরভাগ সময় খেলা হতে থাকে তাদের অর্ধেই। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লামিনে ইয়ামাল ও দানি ওলমোর শট ঠেকিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মুসো।
৫২তম মিনিটে ভয়চেখ স্ট্যান্সনির দৃঢ়তায় বেঁচে যায় বার্সেলোনা। রদ্রিগো দে পলের পাস ধরে বক্সে ঢুকে গ্রিজমানের নেওয়া নিচু শট ফিরিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক।
৫৮তম মিনিটে আতলেতিকো ডিফেন্ডার জোসে মারিয়া হিমেনেসের বাধায় ইয়ামাল বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে বার্সেলোনা। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি। ৭২তম মিনিটে বার্সেলোনার জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল পায়নি আতলেতিকো।
৭৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৪-২ করেন মিনিট ছয়েক আগেই বদলি নামা লেভানদোভস্কি। যেখানে বড় অবদান ইয়ামালের। বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে আরেক ডিফেন্ডারের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে পাস দেন এই তরুণ, কাছ থেকে পা ছুঁয়ে ফাঁকা জালে বল পাঠান ৩৬ বছর বয়সী পোলিশ স্ট্রাইকার।
৮৪তম মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে লড়াই জমিয়ে তোলেন ডিফেন্ডার ইয়োরেন্তে। বক্সের ভেতর থেকে জোরাল শটে গোলটি করেন তিনি।
তারপরও বার্সেলোনার জয় যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, তখনই ৯৩তম মিনিটে সরলথের গোলে আতলেতিকোর উল্লাস। সামুয়েল লিনোর পাসে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে গোলটি করেন তিনি।
আগামী ২ এপ্রিল আতলেতিকোর মাঠে হবে ফিরতি লেগ।