টানা চার ম্যাচ জিতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে ক্রিস্তিয়ান এরিকসেন ও তার সতীর্থরা।
Published : 05 Sep 2022, 07:03 PM
কদিন আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পারফরম্যান্সে ছিল ভাটার টান। প্রিমিয়ার লিগের অন্য বড় ক্লাবগুলোর তুলনায় তাদের শক্তির ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। মূল খেলোয়াড়দের ফর্মে না থাকাও ছিল ভাবনার কারণ। তবে সেই কালো মেঘ ফুড়ে আলোর রেখা মিলতে শুরু করেছে। ফিরতে শুরু করেছে হারানো আত্মবিশ্বাসও। উড়তে থাকা আর্সেনালকে মাটিতে নামানোর পর ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার ক্রিস্তিয়ান এরিকসেন বললেন, তাদের ড্রেসিং রুমের পরিবেশই বদলে গেছে।
মৌসুমের শুরুটা দলটির জন্য ছিল যাচ্ছেতাই। গত মৌসুমে তাদের মলিন পথচলার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আক্রমণে ছন্দহীনতা, সেই ঘাটতি পোষাতে বড় কোনো খেলোয়াড় কিনতে না পারা এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর চলে যেতে চাওয়ার গুঞ্জন দিনে দিনে মাথাচাড়া দেওয়ায় সমর্থকদের মাঝে বাড়তে থাকে হতাশা।
এবার লিগের প্রথম দুই ম্যাচে দলের বাজে পারফরম্যান্সে সেটা আরও প্রকট হয়। ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিওনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হারের পর তারা ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে গিয়ে হেরে বসে ৪-০ গোলে।
ক্ষেপে ওঠে সমর্থকরা। ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ গ্লেজার পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। তৃতীয় রাউন্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্ষোভ প্রকাশ করে একদল সমর্থক।
তবে সেদিন থেকেই ইউনাইটেডের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। গত তিন আসরে একবার করে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হওয়া লিভারপুল ওই ম্যাচে মাঠে নামে পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবে। কিন্তু তাদেরকে চমকে দিয়ে ২-১ গোলে জিতে যায় ‘রেড ডেভিলস’ খ্যাত দলটি। দুর্দান্ত ওই জয়ের পরের দুই রাউন্ডে সাউথ্যাম্পটন ও লেস্টার সিটির মাঠে ১-০ গোলে জয় পায় ইউনাইটেড।
এরপর রোববার দারুণ ছন্দে থাকা আর্সেনালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে তারা। গত সপ্তাহে বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফিতে দলে আসা ফরোয়ার্ড আন্তোনি এ দিনই প্রথম মাঠে নামেন ইউনাইটেডের জার্সিতে। অভিষেক ম্যাচে ৩৫তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার। দ্বিতীয়ার্ধে আর্সেনাল সমতা টানলেও খেই হারায়নি ইউনাইটেড। ৯ মিনিটে দুটি গোল করে দলকে জয় এনে দেন মার্কাস র্যাশফোর্ড।
সমর্থকদের সামনে সবশেষ এই জয় দলটিকে করে তুলছে আরও আত্মবিশ্বাসী। ম্যাচ শেষে কোচ এরিক টেন হাগের কণ্ঠেও ফুটে উঠেছে তা।
র্যাশফোর্ডের দ্বিতীয় গোলে অবদান রাখা ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনও ইউনাইটেডে নতুন যোগ হওয়া খেলোয়াড়। ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ডেনিশ এই মিডফিল্ডার দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, শুরুর হতাশা পেছনে ফেলে দল এখন দারুণ উজ্জীবিত।
“প্রথম দুই ম্যাচের পরের তুলনায় দলের এখনকার আবহে পার্থক্য অনেক, এটা সত্যি। নতুন কোচের সঙ্গে পুরো সেট-আপ, অবশ্যই আমিও এখানে নতুন, অনেক খেলোয়াড় দেরিতে যোগ হয়েছে…আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি।”
“আমার মনে হয়, সবাই এটা অনুভব করতে পারছে। সতীর্থদের সঙ্গে সবকিছু এখন আরও স্বচ্ছন্দ হবে, এটা দারুণ একটা দল। সবাই এখানে তাদের সেরাটা দিতে চায় এবং লড়াই করতে চায়।”
এর মাঝে দারুণ একটা কীর্তিও গড়েছে ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে তৃতীয় দল হিসেবে কোনো শুরুর দুই ম্যাচ হারের পর টানা চার ম্যাচ জিতল তারা। এর আগে এমন কিছু করতে পেরেছিল ২০১১-১২ মৌসুমে টটেনহ্যাম হটস্পার ও ২০১৮-১৯ মৌসুমে আর্সেনাল।
স্বস্তির জায়গা আছে আরও। মাঝে অনেক দিন মার্কাস র্যাশফোর্ড যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। গত মৌসুমে একাদশে জায়গাও হারান তিনি। কিছদিন আগে সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনি যেমন সরাসরি বলেছিলেন, “র্যাশফোর্ডের পারফরম্যান্সে অবনতি হয়েছে এবং তার অনেক আত্মোপলব্ধি প্রয়োজন।”
হতাশাময় সময় যেন পেছনে ফেলতে শুরু করেছেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড। মাঠে তার উজ্জীবিত উপস্থিতিই এর প্রমাণ। গোলও পাচ্ছেন তিনি। লিভারপুলের বিপক্ষে আসরে প্রথম জালের দেখা পাওয়ার পর আর্সেনালের জালে করলেন জোড়া গোল। গত ডিসেম্বরের পর এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে জোড়া গোল করলেন তিনি।
এর আগে সাউথ্যাম্পটনের বিপক্ষে ব্রুনো ফের্নান্দেস ও লেস্টার সিটির বিপক্ষে জেডন স্যানচো করেছিলেন জয়সূচক গোল। তরুণ ইংলিশ উইঙ্গার স্যানচো জালের দেখা পেয়েছিলেন লিভারপুল ম্যাচেও।
দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে সবার এভাবে জ্বলে ওঠার মাঝে দারুণ ভবিষ্যৎ দেখছেন এরিকসেন। এ পর্যন্ত ইউনাইটেডের জার্সিতে তিনটি অ্যাসিস্ট করা অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডার বললেন, তাদের দলের আক্রমণভাগের সবার সবকিছু করার দক্ষতা আছে।
“আক্রমণভাগে আমাদের যারা আছে, সবাই মানসম্পন্ন। তারা সবাই পাস দিতে পারে, গোলও করতে পারে। তাদের পেছনে খেলাটা দারুণ ব্যাপার; যদি একটা ভালো পাস দেওয়া হয়, তাহলে সেটা গোল হবেই।”
“ফুটবল খেলায় এটাই আনন্দের, মাঠের দুই প্রান্তেই অনেক কিছু ঘটে। ম্যাচের ফলের বিচারে এই বিকালটা ছিল দারুণ।”
৬ ম্যাচের চারটি জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে আছে ইউনাইটেড। ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে তাদের ওপরে ব্রাইটন।
প্রথম পাঁচ রাউন্ডের সবকটি জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর্সেনাল। সমান ১৪ করে পয়েন্ট পরের দুটি স্থানে ম্যানচেস্টার সিটি ও টটেনহ্যাম হটস্পার।
প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দলটির সাম্প্রতিক দারুণ পারফরম্যান্সের মাঝে একটুখানি অপ্রাপ্তি আছে রোনালদোর গোল না পাওয়া। এই চার জয়ের ম্যাচের কোনোটিতেই অবশ্য শুরুর একাদশে ছিলেন না পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। প্রতি ম্যাচেই তিনি বদলি নামেন দ্বিতীয়ার্ধে বা শেষ দিকে।
কোচের জন্য আরেকটা দুর্ভাবনার জায়গা অধিনায়ক হ্যারি ম্যাগুইয়ারের ফর্মহীনতা। রোনালদোর মতো তিনিও জায়গা হারিয়েছেন শুরুর একাদশে। এই দুজন নিজেকে ফিরে পেলে দলটির শক্তি বাড়বে আরও। সঙ্গে বাড়বে আত্মবিশ্বাসও।