২০১৮ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্কুল টুর্নামেন্ট নিয়ে ফুটবলের আঙিনায় পা রাখা। পরের বছর যোগ দেন যশোরে বাফুফে- ইউনিসেফের ক্যাম্পে। সেখান থেকে বাছাইকৃত ৮৩ জনের মধ্যে একজন ছিলেন সুরভি আক্তার প্রীতি। চলতি সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে যিনি এরই মধ্যে দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়ে উঠে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়।
মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সোমবার ভুটানকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সুরভি একাই গোল করেন ৬টি। একই প্রতিপক্ষকে ৮-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেশের মুকুট ফিরে পাওয়ার মিশন শুরুর ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করেছিলেন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই ফরোয়ার্ড।
দুই ম্যাচে ৯ গোল করা সুরভিকে নিয়ে মুগ্ধতার শেষ নেই ছোটনের। গোল করার প্রকৃতি প্রদত্ত প্রতিভা প্রিয় এই শিষ্যের ভেতর দেখছেন বাংলাদেশ কোচ। ক্যাম্পের শুরুর দিকে সুরভিকে নিয়ে পড়া বিড়ম্বনার স্মৃতিও আওড়ালেন তিনি।
“যখন সুরভিকে আমরা ক্যাম্পে নিয়েছি, তখন তো আরও ছোট ছিল। তবে মেধাবী ছিল। ওর একটা সমস্যা ছিল খাবার খেত না, খাবার নষ্ট করত। ওর ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রতিদিন আলাপ হতো ওর শারীরিক উন্নতি নিয়ে। যশোর ক্যাম্পে সবাই প্রথম দফা খাবার শেষ করে আবার খাবার নিত, কিন্তু সে খেত না। ঢাকাতে এসে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, ওর ক্যাম্প ছাড়ার মতো অবস্থা। পরে ও নিজেকে বদলেছে, ওর ভাই খুব সহযোগিতা করেছে, শারীরিকভাবে উন্নতি হয়েছে, যার কারণে এই ফল। ও ন্যাচারাল ট্যালেন্টেড খেলোয়াড়।”
নেপালের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে সুরভিকে শুরুর একাদশে সুযোগ দেননি ছোটন। পরে বদলি নামালেও লাভ হয়নি। তবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই কোচের।
“এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। নেপাল ম্যাচে আমাদের ওরকম পরিকল্পনাই ছিল (সুরভিকে বদলি নামানো)। প্রথম ম্যাচে নেমে সে হ্যাটট্রিক করেছে, নেপালের বিপক্ষে আগের ম্যাচে বদলি নেমে সুযোগ তৈরি করেছে, যদিও স্কোর করতে পারেনি। আজকে পরিকল্পনা ছিল শুরু থেকে নামানো এবং সে নেমে তার যোগ্যতা দেখিয়েছে।”
আগামী শুক্রবার নেপালের বিপক্ষে ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটির শিরোপার নির্ণায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নেপাল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও নিজেদের নিয়ে আশাবাদী ছোটন।
“পরের ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে হলে আজ আমাদের জয় দরকার ছিল। সেটা মেয়েরা পেরেছে বলে তাদেরকে অভিনন্দন। গোলও দরকার ছিল, কেননা গোল পার্থক্যও গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও মেয়েরা করতে পেরেছে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার যে দিকটি আছে, সেটা এই ম্যাচে দেখিয়েছে। আগের ম্যাচের চেয়ে ভুল-ত্রুটি কম করেছে মেয়েরা।”
“(ট্রফি জয়ের) সুযোগ পুরোপুরি আছে। গত ম্যাচে আমরা মিস করেছি। নিজেদের ভুল থেকে গোল হজম করেছি। ওই ম্যাচ পর্যালোচনা করে দেখেছি, আমরা ৪-৫ টা সহজ সুযোগ নষ্ট করেছি। এখন সামনের ম্যাচে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে এবং সুযোগুলো কাজে লাগাতে হবে। সুযোগ আসবেই।”
ছোটনের মতো সুরভির কণ্ঠেও গত ম্যাচে সুযোগ হারানোর আক্ষেপ। তবে তিন ম্যাচে ৯ গোল করার তৃপ্তিও আছে তার। প্রিয় খেলোয়াড়ের তালিকাও জানালেন সুরভি। দেশের বাইরে প্রিয় লিওনেল মেসি, দেশে সিরাত জাহান স্বপ্না।
“ভালো লাগছে (গোল ও হ্যাটট্রিক পেয়ে)। ভুটানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছি, এ ম্যাচেও হ্যাটট্রিকের পরিকল্পনা ছিল। নেপালের বিপক্ষে জিততে পারিনি বলে খারাপ লাগছে। ওই ম্যাচেও আমরা সুযোগ তৈরি করেছি, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি।”