বাংলাদেশ ফুটবল
বছরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়া এই দুই মিডফিল্ডার সামনের দিনগুলোতেও মেলে ধরতে চান নিজেদের।
Published : 17 Nov 2024, 10:36 PM
একটি মাত্র গোল নিয়ে বছর শেষ হলে সেটা বাংলাদেশের জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের জন্য হতো ভীষণ বিব্রতকর এক গল্প। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি দুই মিডফিল্ডার মজিবুর রহমান জনি ও পাপন সিংয়ের নৈপুণ্যে। মালদ্বীপের বিপক্ষে একবার করে জালের দেখা পেয়েছেন তারা। তাতে বাংলাদেশ বছর শেষ করেছে জয়ের আনন্দে, এবং বছরে অন্তত তিন গোলের পরিসংখ্যান নিয়ে। দলের ‘মুখরক্ষা’ করা এই দুই ফুটবলার আগামীতেও পাদপ্রদীপের আলোয় নিজেদের ধরে রাখতে চান।
প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের আঙিনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মুখ লুকানোর শুরু গত মার্চ থেকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হেরে। এরপর একটি করে ম্যাচ গড়িয়েছে, দলের ব্যর্থতার পাল্লা হয়েছে ভারি। পরের তিন ম্যাচেও পরাজয় হয় সঙ্গী; ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ফিরতি লেগে ১-০, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ এবং লেবাননের বিপক্ষে ৪-০। সবগুলো ম্যাচই ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের।
বিবর্ণতা ঝেড়ে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠার সুযোগ হয় গত সেপ্টেম্বরে ভুটানের বিপক্ষে। শেখ মোরসালিনের একমাত্র গোলে জয় পায় বাংলাদেশ, দিনটি ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। ছন্দপতন হতেও অবশ্য দেরি হয়নি; তিন দিন পর ভুটানের বিপক্ষেই দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে ধরাশায়ী হয় হাভিয়ের কাবরেরার দল।
সেই থেকে অপেক্ষা শুরু নভেম্বরের ফিফা উইন্ডোর। মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বাশা-আকাঙ্খার পারদ চড়ে উঁচুতে। সেখান থেকে ভুপাতিত হতেও সময় লাগেনি। প্রথম প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে বসে ১-০ গোলে, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির আশাও গুঁড়িয়ে যায় মুহূর্তে।
মালদ্বীপের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও হারের শঙ্কা জাগে। পিছিয়ে পড়ার পর অসাধারণ নৈপুণ্যে পথ দেখান জনি, একক প্রচেষ্টায় দৃষ্টিনন্দন গোলে সমতার স্বস্তি এনে দেন তিনি। এরপর, সময় বইয়ে যাছিল; কিন্তু জয়সূচক গোলের দেখা মিলছিল না। শেষ সময়ে নায়ক হয়ে ওঠেন পাপন। বদলি নামার মিনিট চারেকের মধ্যে সুযোগসন্ধানী শটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান তিনি।
৮ ম্যাচে ২ জয়ের পাশে ৬ হারের কষ্ট নিয়ে ২০২৪ সাল শেষ করল বাংলাদেশ। এই আট ম্যাচে দল গোল হজম করেছে ১৫টি, দিয়েছে ৩টি। এই তিন গোলের মধ্যে একটি কেবল ফরোয়ার্ডের করা, ভুটান ম্যাচে যেটি করেছিলেন মোরসালিন।
সচরাচর বাংলাদেশের মিডফিল্ডারদের পায়ে গোল দেখা যায় না। ফরোয়ার্ড কিংবা ডিফেন্ডারদের দেখা যায় লক্ষ্যভেদ করতে। সবশেষ গত বছর জুনে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জনি জয়সূচক গোল করার ১৭ ম্যাচ পর, মাঝমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে তিনিই পেলেন জালের দেখা। আর জাতীয় দলের হয়ে এই প্রথম জালের দেখা পেলেন পাপন।
শেষটা রাঙানোর নায়ক এই দুই মিডফিল্ডার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানালেন, বছর শেষের স্বস্তি আর আগামী দিনের চাওয়া। আগামীতে আক্রমণের সুর বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি দলের মধ্যে গোল নিয়ে চলা হাহাকারও দূর করতে চান তারা।
জনি কেবল জাতীয় দলেই নয়, বসুন্ধরা কিংসের হয়েও নিয়মিত গোল করার আনন্দে ভাসতে চান।
“আলহামদুলিল্লাহ, গোল পেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। আল্লাহর রহমতে বছরের শেষ ম্যাচে গোল পেয়েছি। আসলে আগের ম্যাচে হেরেছিলাম, সবার উপরে চাপ ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রথমার্ধে যদি পিছিয়ে থেকে শেষ করতাম, তাহলে দ্বিতীয়ার্ধে তো সমস্যা হয়ে যেত। ওটাই মাথায় কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল, যদি সমতায় থেকে বিরতিতে যেতে পারি, তাহলে ভালো হয়। এজন্যই চেষ্টা করছিলাম, রাকিব (হোসেন) ও (শেখ) মোরসালিনকে বল বাড়াচ্ছিলাম। এরপর আমার সামনেই সুযোগ এসে গেল, শট নিলাম। গোল পেয়ে গেলাম।”
“অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে যেহেতু খেলি, সেহেতু গোল পাওয়ার আশা তো থাকেই। তবে সেরা একাদশে তো সবসময় খেলা হয় না, বদলি খেলি, তবে সবাই শেষটা মনে রাখে, বছরের শেষ ম্যাচে গোল পাওয়ায় বেশি ভালো লাগছে। এখন এটা জাতীয় দল, ক্লাব পর্যায়েও একইভাবে পারফরম করতে চাই। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করছি, যতটুকু সময় খেলার সুযোগ পাব, সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
৮৯তম মিনিটে বদলি নেমে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে টোকায় জালে বল জড়ান পাপন। আবাহনীর এই ২৪ বছর বয়সী মিডফিল্ডার চান জানালেন, বদলি নামার সময়ের ভাবনা।
“গোল দিয়ে বছর শেষ করতে পেরেছি, জয়সূচক গোল করতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে। এই জয়টা আমাদের অনেক দরকার ছিল। সবসময় চেষ্টা করি ভালো ফুটবল খেলার, যতটুকু সময় খেলি, সর্বোচ্চুটুকু দিয়ে চেষ্টা করি, সেটা দেশের হয়ে হোক, ক্লাবের হয়ে হোক। সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
“বদলি নামার সময় ভাবছিলাম, জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, যেভাবেই হোক জয় নিয়েই আমাদের মাঠ ছাড়তে হবে-যারাই খেলতে নেমেছিল, সবার আসলে এই একই মানসিকতা ছিল। শেষ পর্যন্ত চাওয়াটা পূরণ হয়েছে আমাদের।”
মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি মাঠে গড়ানোর আগেই বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছিলেন, আক্রমণাত্মক খেলবে তার দল। দুই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছেও সেভাবে। পাপন বললেন, মিডফিল্ডারদের ভূমিকা, সক্রিয়তা বাড়াতে অনুশীলনে কাজ করেছিলেন কাবরেরা।
“কোচ মিডফিল্ডারদের নিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন, আক্রমণের সময় আমাদের যোগ দিতে বলেছেন, রক্ষণের সময়ও যোগ দিতে বলেছেন। যেমন ধরুন, বাম দিকে কেউ বল পেলে ডান দিকের মিডফিল্ডার যেন আক্রমণে ওঠে, এভাবেই অনুশীলন করিয়েছিলেন কোচ। মাঠে খেলার সময়ও একই নির্দেশনা ছিল কোচের। সেটাই বাস্তবায়ন করেছি আমরা।”