ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
ইউরোর ফাইনাল দিয়েই স্পেনের হয়ে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন হেসুস নাভাস, ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরোজয়ী তারকা শেষটাও রাঙাতে চান শিরোপা দিয়ে।
Published : 14 Jul 2024, 12:43 PM
ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত কোচের সঙ্গে অধিনায়কের আসাটাই রীতি। কিন্তু বার্লিনে শনিবার স্পেনের সংবাদ সম্মেলনে কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের পাশে অধিনায়ক আলভারো মোরাতা নন, সঙ্গী হলেন হেসুস নাভাস। অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার সংবাদকর্মীদের কৌতূহল মেটালেন নিজেই, “সে (মোরাতা) আমাকে বলল, আমার জন্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার উপযুক্ত সময় এটি। এত পথ পেরিয়ে এত ফাইনাল খেলে এই ফাইনাল ম্যাচটিই স্পেনের হয়ে আমার শেষ ম্যাচ…।”
হ্যাঁ, অনুমেয় ঘোষণাটিই চলে এলো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোববারের ফাইনাল দিয়েই জাতীয় দলে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন নাভাস।
স্পেনের এবারের দলটির খেলা দেখে নিয়মিতই তুলনা চলছে ২০০৮ থেকে ২০১২ সময়টার সেই ইতিহাস গড়া দলটির সঙ্গে। সেই দলের সঙ্গে এখনকার দলের একমাত্র যোগসূত্র এই নাভাস। ২০০৮ ইউরোতে তিনি ছিলেন না। স্পেনের জার্সিতে তার অভিষেক ২০০৯ সালে। তবে ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরোজয়ী দলের অংশ ছিলেন তিনি।
পরে ২০১৩ কনফেডারেশনস কাপে রানার্স আপ হওয়া স্পেন দলেও ছিলেন তিনি। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি। ওই আসরেই শুধু নয়, টানা ছয় বছর জাতীয় দলে আর সুযোগ পাননি তিনি। স্পেন জাতীয় দলও এই সময় পেরিয়েছে নানা মোড়। ২০১৪ বিশ্বকাপের বিপর্যয় থেকে শুরু করে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে তারা।
নাভাস আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন ২০১৯ সালে। এবারের পালাও দীর্ঘায়িত হয়নি খুব একটা। এরপর আবার তিন বছরের বিরতি। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এপিটাফ লেখা হয়েই গিয়েছিল। একসময়ের উইঙ্গার ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন রাইট-ব্যাক। অবিশ্বাস্যভাবে, ৩৭ বছর বয়সে আবার জাতীয় দলে ফেরেন তিনি গত বছর।
সেভিয়ার হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখে তাকে স্পেন দলে নেন কোচ দে লা ফুয়েন্সে। উয়েফা নেশন্স লিগজয়ী দলে ছিলেন তিনি। স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে খেলার রেকর্ডও করেন সেই আসরে।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার ইউরো দলে জায়গা করে নেন নাভাস। ইউরোতে স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে খেলার রেকর্ডও এখন তার। আলবেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পান দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্মান। সেমি-ফাইনালে দানি কার্ভাহাল কার্ড-খাড়ায় না থাকায় নাভাসের অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখেন কোচ।
ফাইনালে কার্ভাহাল ফিরবেন, সেরা একাদশে তাই নাভাসের থাকার সম্ভাবনা সামান্যই। তবে ফাইনাল ঘিরে তার রোমাঞ্চের কমতি নেই।
“এত এত বছর পর আবার এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি মানে, নিশ্চয়ই অনেক কিছুই ঠিকঠাক করছি আমি। এখন যদি শেষটা ভালো করতে পারি… গোটা দলের জন্যই এটা (ট্রফি জয়) দারুণ হবে… আমাদের এটা প্রাপ্য।”
“এই ৩৮ বছর বয়সেও সবকিছু নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত আমি… জাতীয় দলকে সহায়তা করা, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা…। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে (অবসরের)।”
নাভাস জানালেন, অনেক দিন ধরেই চোটকে সঙ্গী করে খেলে চলেছেন তিনি। দেশের জন্য সেই যন্ত্রণাকে আপন করে নিতে তার আপত্তি নেই একটুও।
“গত চার-পাঁচ বছর ধরেই নিতম্বের চোট বয়ে বেড়াচ্ছি। তবে দেশের হয়ে খেলার জন্য সবকিছুই করতে রাজি আছি। খেলার পরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়।”
“তবে ম্যাচের দিন ব্যাপারটা হলো সবকিছু উজাড় করে দেওয়ার। মাঠে নেমে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে চাই। দলের জন্য, দেশের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে প্রয়োজনে মরতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার এবং আমি এতে গর্বিত।”
এবারের ইউরোতে স্পেনের সাফল্যের পেছনে দলের সবার সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে চর্চা হয়েছে অনেকবারই। ১৪ বছর আগে বিশ্বকাপ ও ১২ বছর আগে ইউরোজয়ী দলটির সঙ্গে এখানে মিল খুঁজে পাচ্ছেন নাভাসও।
“ওই দলে মাঠের ভেতরে-বাইরে সবার বন্ধনটা ছিল দুর্দান্ত। এই দলেও সেই একইরকম একতা। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক দারুণ। আশা করি, শেষ কাজটুকুও আমরা করতে পারব। দলের জন্য ও দেশের জন্য তাহলে দারুণ হবে।”
শেষের সেই কাজে অবশ্য শক্ত বাধা তাদের অপেক্ষায়। ইংল্যান্ডকে হারানোর কাজটি কতটা কঠিন, জানেন নাভাসও। তবে নিজেদের ঘরানায় ভরসা রেখেই চ্যালেঞ্জ জিততে চান তারা।
“বিশ্বমানের ফুটবলারদের নিয়ে দারুণ এক দল ইংল্যান্ড। কাজটা কঠিন হবে আমাদের। এটা ফাইনাল ম্যাচ এবং আমরা জানি, এরকম ম্যাচ কতটা কঠিন হতে পারে।”
“প্রবল এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমরা লড়তে যাচ্ছি। তবে আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি, একইরকম খেলতে চাই। আগের ম্যাচগুলির মতোই একই তাড়না, একই রোমাঞ্চ ও আত্মবিশ্বাস অনুভব করছি আমরা। সুন্দর ফুটবল খেলে যাওয়াই আমাদের জন্য সঠিক পথ। পা মাটিতে রেখে নিজেদের কাজ করে যেতে চাই আমরা।”
স্পেনের হয়ে এটি তার শেষ ম্যাচ হলেও সেভিয়ার হয়ে খেলবেন আর অর্ধ-মৌসুম। আগামী জানুয়ারিতেই পাকাপাকিভাবে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা তিনি দিয়ে রেখেছেন আগেই। সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলেই নিশ্চিত করে দিয়েছেন এই সংবাদ সম্মেলনে।