জাতীয় অ্যাথলেটিকসের ৪৭তম আসরে দ্রুততম মানবীর মুকুট ধরে রাখার পর ২০০ মিটারে এই অ্যাথলেট সেরা হওয়ার পথে ভাঙলেন নিজের রেকর্ড।
Published : 10 Feb 2024, 07:18 PM
আগের দিন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মুকুট ধরে রাখার উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন। জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় ও শেষ দিনেও ট্র্যাকে গতির ঝড় তুললেন শিরিন আক্তার। ২০০ মিটারে সেরা হলেন তিনি নিজের রেকর্ড ভেঙে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে শনিবার ২৪ দশমকি ৬৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন শিরিন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট ভেঙেছেন ২০১৯ সালে গড়া ২৪ দশমিক ৯৭ সেকেন্ডের রেকর্ড।
অবশ্য ২০২১ সালের আসরে ২০০ মিটারে শিরিন সেরা হয়েছিলেন ২৪ দশমিক ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। তবে সেটি ইলেক্ট্রনিকস টাইমিং নয়, হ্যান্ড টাইমিংয়ের হিসাবে।
পরে ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতেও সেরা হন শিরিন। সব মিলিয়ে এবারের প্রতিযোগিতা ২৯ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট শেষ করলেন চারটি স্বর্ণপদকে চুমু এঁকে। এই বয়সে ট্র্যাকে ঝড় তোলা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিলেন আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণে।
“আসলে ‘এই বয়স’ বলতে কিছু নেই। ২০১৩ থেকে সিনিয়র খেলি। অলমোস্ট ১২ বছর। ক্লাস সেভেন থেকে আমি দ্রুততম বালিকা, দ্রুত কিশোরী হয়েছি। দ্রুততম মানবী হয়েছি, যেটা এবার ১৫তম বারে এসে দাঁড়াল। ২০০ মিটারের রেকর্ডটিও আমার ছিল (২৪.৯৭), সেটি আবার নতুন করে মজবুত করতে পেরেছি, নতুন রেকর্ড গড়তে পেরেছি, এটা আসলে অসাধরণ। কোচ আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। আগেও বলেছি আর কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা পেছন থেকে আমাকে অনেক সাপোর্ট করে; যে জন্য আমি নিজের কাজটা করতে পারছি।”
“অনুভূতি কখনই বোঝানোর মতো নয়। সব মানুষেরই নিজস্ব যে অনুভূতি থাকে, অনেক অসাধারণ কিছু থাকে, অনেক গল্প থাকে পেছনে, কষ্ট থাকে, অনেক বাধা থাকে, আমার পেছনে যত বাধাই থাকুক, আমার কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফি, বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান), বাংলাদেশ নৌবাহিনী, আমার যা, এবং যখন কিছু প্রয়োজন হয়েছে, সবসময় তারা চেষ্টা করেছে আমাকে সেটা দেওয়ার।”
যশোর প্রযুক্তি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করা এই অ্যাথলেট ৪০০ মিটারে একটা পর্যায়ে পিছিয়ে ছিলেন। শেষ ১০০ মিটার বিদ্যুৎ বেগে দৌড়ে পেছনে ফেলে দেন সবাই। জানালেন শেষ ১০০ মিটারের দৌড়টা তিনি দিয়েছিলেন দর্শকদের জন্য।
“৩০০ মিটার আসা পর্যন্ত আমি আমার মতো দৌড়েছিলাম, বাকিটা দর্শকের জন্য দৌড়েছিলাম। আমি জানি না, আল্লাহ আমাকে কীভাবে নিয়ে এলেন…আমার মনে হয় টাইমিং ধরলে চারশ মিটারে এটা সেরা টাইমিং। আমার কাছাকাছি কেউ থাকলে আমি ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করতে পারব-এমনটা আশা করেছিলাম, আল্লাহ যদি চায়..আল্লাহর অশেষ রহমত (আমি পেরেছি)।”
“(প্রতিটি ইভেন্টে) খুব কাছাকাছি ছিল প্রতিপক্ষরা। স্প্রিন্টে দেখবেন প্রতিযোগীরা খুব কাছাকাছিই থাকে। সবগুলো ইভেন্টে ভালো লড়াই হয়েছে। প্রতিপক্ষ কখনই দুর্বল নয়। স্প্রিন্টে যে কোনো সময় যে কোনো কিছুই হতে পারে।”
২১ দশমিক ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটারের পর ৪০০ মিটারে জহির রায়হান সেরার মুকুট জিতে নেন ৪৭ দশমিক ৭৬ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে। নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট জানালেন শরীরের ওজন বাড়িয়ে নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়া সহজ হয়েছে তার জন্য।
“ইন্টারন্যাশনাল যারা অ্যাথলেট আছে, ওয়েট গেইন করলে তাদের গতি এবং স্ট্রেন্থ বাড়ে। দৌড়ের শেষ দিকে আমি শরীরটা ধরে রাখতে পারি না, শরীরটা ভেসে যায় (ওয়েট কমের কারণে) একটু। যথাযথ ওজন থাকলে আমি গ্রাউন্ডে থাকতে পারব। এটা আন্তর্জাতিক কোচেরাই আমাকে বলেছে, অলিম্পিকের কোচেরাও বলেছেন।”
১৯৯৯ সালের কাঠমাণ্ডুর এসএ গেমসে ২০০ মিটারে ২১ দশমিক ১৫ সেকেন্ড টাইমিং করে রুপা জেতেন মাহবুব আলম। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এ ইভেন্টে এটাই বাংলাদেশী অ্যাথলেটদের আজও সেরা টাইংমিং। জহির মনে করেন, নির্দিষ্ট ইভেন্ট ধরে কাজ করলে তাদের পক্ষেও আরও ভালো করা সম্ভব।
“আসলে আমরা যদি নির্দিষ্ট ইভেন্ট ধরে কাজ করি, তাহলে এটা সম্ভব। দেখা যায় যে দেশে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বা দলের স্বার্থে এক সাথে অনেকগুলো ইভেন্ট করতে হয় আমাদের, সেক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরে অন্যরকম প্রভাব পড়ে যায়। এ কারণে হয়তো যে রেকর্ডটা আছে, সেটা ব্রেক হয় না। যদি আমরা একটা ইভেন্ট নিয়ে দীর্ঘসময় অনুশীলন করি, তাহলে এটা (ভাঙা) সম্ভব।”