করোনাভাইরাস মহামারির বাধা পেরিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে আবারও আগের সেই চাঞ্চল্য ফিরেছে। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে হকি, আর্চারির মতো খেলাগুলোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন খেলোয়াড়রা। তবে সবার এক ছাদের নিচে জড়ো হওয়ার উপলক্ষ্য তো খুব বেশি আসে না। ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসপিএ) বার্ষিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান যেন সাবেক, বর্তমান ক্রীড়া তারকাদের সেই সুযোগটাই এনে দিল।
Published : 03 Jun 2022, 11:04 PM
বিএসপিএ ক্রীড়া পুরস্কার ২০২১ ঘিরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুম শুক্রবার সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠেছিল দেশের ক্রীড়া তারকাদের মিলন মেলায়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছেন ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ, ফুটবলার তপু বর্মন, আর্চার দিয়া সিদ্দিকী ও নারী বডিবিল্ডার মাকুসদা আক্তার মৌ।
পুরস্কারজয়ীদের তালিকায় না থাকলেও আর্চার রোমান সানা, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত, টেবিল টেনিস তারকা সোমন সুলতানা সোমার ছিল সরব উপস্থিতি।
সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, হাবিবুল বাশাররা যেমন ছিলেন, তেমনি অনুষ্ঠান আলোকিত করেন সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কায়সার হামিদ, আরমান মিয়া, সাবেক হকি তারকা মামুন উর রশিদের মতো তারকারা।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয় ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলকে।
তবে সব ছাপিয়ে উপস্থিত সবার মধ্যে আবারও এক সঙ্গে মিলিত হওয়ার আনন্দটাই ছিল বেশি। অনুষ্ঠান শেষে তাই উপস্থিত ক্রীড়াবিদ, সংগঠকরা একে অপরের সঙ্গে মেতে উঠেন আড্ডায়।
লেজার শোয়ে অনুষ্ঠান শুরুর পরও করোনাভাইরাসের কঠিন দিনগুলোকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়। থমকে যাওয়া সেই সময়ে চারদিকে ছিল শুধু অনিশ্চয়তা। ক্রীড়া তারকারাও যখন কেউ নিশ্চিত ছিলেন না আবারও খেলার মাঠে ফিরতে পারবেন কি-না।
এক পর্যায়ে মঞ্চে উঠে আর্চার রোমান সানা তাই বলেন, আবারও এক ছাদের নিচে সবার জড়ো হওয়ার আনন্দের কথা।
তবে এই আনন্দ অনুষ্ঠানের মাঝেও ছিল বিষাদ। সাতক্ষীরার ফুটবল কোচ আকবর আলীর এদিন মঞ্চে উঠে তৃণমূলের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের পুরস্কার নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরস্কার নিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমান তিনি।
ফুটবলার সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, স্প্রিন্টার শিরিন আক্তারদের মতো অসংখ্য অ্যাথলেট তৃণমূলের এই কোচের হাতেই গড়া। তাকে স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় অনুষ্ঠানে।
ক্রীড়া সাংবাদিকদের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন বিএসপিএ ১৯৬৪ সাল থেকে বছরের সেরাদের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি তারা।
এ বছর বিএসপিএর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার পেয়েছেন ক্রিকেটার মিরাজ। সমর্থকদের ভোটে সেরা হয়েছেন ফুটবলার তপু বর্মন। বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ফুটবলারের পুরস্কারও পেয়েছেন এই দুজন।
বাংলাদেশে কোচিং করাতে আসা বিদেশি তিন কোচ তুলে ধরেন এদেশের সংস্কৃতি।
মিরাজ এই মঞ্চে আগেও পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৬ সালে বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান তিনি। এবার পেলেন আরও বড় স্বীকৃতি। যা তাকে সামনে আরও ভালো করার প্রেরণা জোগাবে বলে জানালেন তিনি।
মিরাজ আগেও এই মঞ্চে পুরস্কার নিলেও বর্ষসেরা সাইক্লিস্টের পুরস্কার জয়ী ফয়সাল হোসেনের জন্য অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্যরকম। এমন বড় কোনো আয়োজনে পুরস্কার পাওয়া এটিই প্রথম তার জন্য। আবেগতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই সাইক্লিস্ট সেভাবে অনুভূতি প্রকাশই করতে পারছিলেন না। তবে জানিয়ে গেলেন, বিদেশের মাটিতেও এখন ভালো করতে চান তিনি।
মাকসুদা মৌ নারী বডিবিল্ডিংয়ে নাম লিখিয়েছেন অনেকের অনেক কটূ থাকে উপেক্ষা করে। মেয়েরা কেন বডি বিল্ডিংয়ে আসবে, এই প্রশ্ন অনেক শুনতে হয়েছে তাকে। এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক আসরেও অংশ নেওয়া শুরু করেছেন মৌ। মঞ্চে পুরস্কার হাতে দাঁড়িয়ে এ দিন তাই সেদিনের সমালোচকদেরই এটি উৎসর্গ করেন তিনি।
অর্থাৎ পুরস্কারের এই মঞ্চ ছিল বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ারও। আবার এই মঞ্চ ক্রীড়াঙ্গনের চেনা মানুষদের একটু ভিন্ন ভাবে মেলে ধরার। সিনিয়র ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম যেমন ‘তুমি যে আমার কবিতা’ গানটি গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদকেও সবাই নতুন রূপে পেলেন এ দিন। তার গাওয়া আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’ গানটি অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ করল।
অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ।
কৃষকের সাজে জাতীয় আর্চারি দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ, লাঠিয়ালের বেশে সাইফ স্পোর্টিংয়ের আর্জেন্টাইন কোচ আন্দ্রেয়াস ক্রুসিয়ানি ও বাউলের সাজে মুক্তিযোদ্ধার কোচ রাজা ইসা মঞ্চে মুগ্ধতা ছড়ান।
পুরস্কারজয়ীরা ছাড়াও তাই উপস্থিত সবাই ভালোভাগা নিয়েই অনুষ্ঠান ছেড়ে যান। তবে কোচ আকবর আলীর মৃত্যু স্পর্শ করে সবাইকে। তার হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে মঞ্চে উঠে সাবিনা কোনো কথাই বলতে পারেননি।