বয়স বাড়ছে, দল নতুন স্ট্রাইকারের সন্ধানে আছে। লুইস সুয়ারেস নিজেও বুঝতে পারছিলেন বার্সেলোনায় শেষ হয়ে আসছে তার সময়। প্রস্তুতি থাকার পরও তাই বিদায়বেলায় আবেগ ছুঁয়ে গেল। চোখে জল নিয়ে জানালেন কাম্প নউয়ে স্বপ্ন পূরণের কথা। সামনের পথচলায় কেবল সুখস্মৃতিগুলোই মনে রাখার কথা বললেন উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার।
Published : 24 Sep 2020, 09:42 PM
নতুন ঠিকানা আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দিচ্ছেন বার্সেলোনার সঙ্গে ছয় বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে। প্রিয় আঙ্গিনা, সতীর্থ-বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন সুয়ারেস। তারকা এই স্ট্রাইকারের কণ্ঠে ঘুরেফিরে এলো প্রিয় বন্ধু লিওনেল মেসির নাম।
স্ট্রাইকারদের সঙ্গে ঠিক জমে উঠছিল না মেসির জুটি। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর সুয়ারেস বার্সেলোনায় আসার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। তার সঙ্গে জমে ওঠে মেসির বোঝাপড়া। মাঠের ভেতরে-বাইরে তাদের রসায়নের দারুণ সুফল পায় কাতালান দলটি। দুই ফুটবলার হয়ে ওঠেন প্রাণের বন্ধু।
কাম্প নউয়ে বিদায় অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মেসি ছাড়াও তার পাশে ছিলেন জেরার্দ পিকে ও জর্দি আলবা। এখানে শুরুর সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
“যখন আমি বার্সেলোনায় এসেছিলাম সবাই বলেছিল লিও থেকে সাবধান থাকতে, কারণ সে ক্লাবের প্রধান স্ট্রাইকার।”
“তবে আমাদের সময়ে আমরা এক সঙ্গে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সের চেষ্টা করেছি, এখান থেকে আমি গর্ব নিয়ে বিদায় নিতে পারি।”
দল ছাড়তে চাননি সুয়ারেস। চুক্তির মেয়াদ শেষ করতে প্রয়োজনে বদলি হিসেবে খেলতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। ঠিক উল্টোটা চেয়েছিলেন মেসি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে দল ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই থেকে যেতে হয়েছে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে।
ক্লাবে এই দুই জনের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে খবর। তা নতুন মাত্রা পায় গত এক যুগে বার্সেলোনা প্রথমবারের মতো ট্রফিশূন্য মৌসুম শেষ করায়। নতুন কোচ রোনাল্ড কুমান জানান, সুয়ারেসসহ আরও কয়েকজন নেই তার পরিকল্পনায়।
“পাগলাটে একটা মাস শেষ হচ্ছে। অনেক কিছুই বলা হয়েছে এবং ফাঁস হয়েছে যা আসলে বানোয়াট। অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। তবে সবাই জানে লিওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কেমন।”
মেসি-নেইমারের সঙ্গে সুয়ারেস যোগ হওয়ার পর বার্সেলোনা পেয়ে যায় স্বপ্নের আক্রমণভাগ। ত্রয়ীর কাঁধে ভর করে দলটি জেতে ট্রেবল। সেটাই সুয়ারেসের একমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা। সব মিলিয়ে স্প্যানিশ দলটির হয়ে তিনি জেতেন ১৩টি শিরোপা, করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৮ গোল।
“একটি ভুলের পরও ২০১৪ সালে আমার ওপর আস্থা রাখায় ক্লাবের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এটা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না এবং এখানে আসার পর থেকেই তারা আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছে।”
“আমি এখানে এসেছিলাম একটি স্বপ্ন পূরণ করতে, বিশ্বের সেরা ক্লাবে খেলতে এবং যা করেছি তাতে আমার খুব গর্বিত হওয়া উচিত। অনেক ভুগেছি। তবে আমি ভালো সময়ের কথাই স্মরণ করব যে গোলগুলো আমি করেছিলাম সব সময়ের সেরা খেলোয়াড়ের পাশে থেকে।”
“সে একজন ক্লাব কিংবদন্তি, আমাদের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল স্কোরার, তার জায়গায় সেরা।”
“আমি তার চারিত্রিক দিকগুলো তুলে ধরতে চাই। তার লড়াকু মানসিকতা এবং জয়ের তীব্র ইচ্ছা গত ছয় বছরে আমাদের অর্জনে অনেক সাহায্য করেছে।”
যেদিন বুট জোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন সুয়ারেস, সেদিন তার সম্মানে বার্সেলোনায় একটি ম্যাচ আয়োজনের ইচ্ছের কথা জানান বার্তোমেউ।