স্প্যানিশ ফুটবল
Published : 06 May 2025, 08:56 PM
একের পর এক গোল করছেন, বার্সেলোনার জয়ে রাখছেন অবদান, ব্যালন দ’র জয়ের দাবিও জোরাল করছেন- সব মিলিয়ে দারুণ সময়ের মধ্যে আছেন রাফিনিয়া। এর মাঝেই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড পিছু ফিরে তাকালেন শাভি এর্নান্দেসের সময়ে, যখন তিনি ছিলেন ব্রাত্য। দুঃসহ সেই দিনগুলোর স্মৃতি আওড়ে বার্সেলোনার সাবেক কোচের প্রতি ক্ষোভও দিলেন উগরে।
রাফিনিয়া প্রশংসায় ভাসালেন হান্সি ফ্লিককে। কেউ সেরা একাদশে খেলুক বা না খেলুক, বার্সেলোনার বর্তমান কোচ সবার সমান খোঁজ নেন বলেও সাংবাদিক ইসাবেলা পাগলিয়ারির ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন তিনি।
২০২২ সালে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে লিডস ইউনাইটেড থেকে বার্সেলোনায় নোঙর ফেলেন রাফিনিয়া। কাতালুনিয়ার দলটির হয়ে পরের বছরই জেতেন লা লিগা শিরোপা। কিন্তু শাভির কোচিংয়ে তিনি সেরা একাদশে ছিলেন অনিয়মিত। বদলি হিসেবে খেলতে হতো, বেঞ্চেই কাটত অধিকাংশ সময়।
মাঝেমধ্যে শুরুর একাদশে জায়গা পেলেও পুরোটা সময় খেলার সুযোগ পেতেন না রাফিনিয়া। তাকে তুলে নিতেন শাভি। উসমান দেম্বেলে, লামিনে ইয়ামাল ও ফেররান তরেসকে দিতেন প্রাধান্য। সাক্ষাৎকারে রাফিনিয়া বলেছেন, তার প্রতি শাভির কোনো আস্থাই ছিল না।
“আমি অনুভব করতাম, আমার প্রতি কোচিং স্টাফদের কোনো আস্থাই নেই। যখন কেউ থাকত না, তখন আমি সুযোগ পেতাম এবং ৯০ মিনিট খেলতাম। সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিতাম, ম্যাচে প্রভাব রাখতাম। কিন্তু যখনই অন্য কোনো খেলোয়াড় আমার পজিশনে আসত, তারা কোনো চিন্তা না করেই তাকে বেছে নিত।”
“কখনও কখনও যে ৬০ মিনিট আমি খেলতাম, সবকিছু করতাম, কিন্তু তারা আমাকে তুলে নিত। এ নিয়ে একটা বিখ্যাত ভিডিও আছে, যেখানে আমাকে ক্ষুব্ধ দেখা গেছে, আমি (মাঠ ছেড়ে) বেঞ্চে গিয়ে ঘুষি মেরেছিলাম।”
২০২৩ সালে ইউরোপা লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচের ঘটনা ছিল সেটি। রাফিনিয়া ওই ঘটনার বিস্তারিতও জানান সাক্ষাৎকারে।
“আমি আসলেই বেশ ভালো খেলছিলাম। গোল করেছিলাম এবং একটা গোল তৈরি করে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, স্কোরলাইন ২-২ থাকার সময় তারা আমাকে তুলে নিয়েছিল।”
“আমি খুব ভালো একটা সুযোগ তৈরি করছিলাম। ভালো অনুভব করছিলাম এবং মনে হচ্ছিল, ভালো খেলছি। কিন্তু আমাকেই প্রথম তুলে নেওয়া হয়েছিল। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।”
শাভির কোচিংয়ে ওই দুই মৌসুমে রাফিনিয়া খেলতে পারেন ৮৭টি ম্যাচ। এর মধ্যে ২৭ ম্যাচে নেমেছিলেন বদলি, মাত্র আট ম্যাচে খেলতে পেরেছিলেন পুরোপুরি ৯০ মিনিট। বিষয়গুলো নিয়ে শাভির সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি, দাবি রাফিনিয়ার।
“আমি বিষয়গুলো সুরাহার চেষ্টা করেছিলাম। একাধিকবার শাভির সাথে কথা বলেছিলাম, কিন্তু বুঝতে পারি যে এতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তিনি তার মতো করেই ভাবছিলেন।”
বার্সেলোনার থেকে শাভি চলে যাওয়ার পর রাফিনিয়া যেন ফিরে পান নিজেকে; শুরু করেন আলো ছড়াতে। যেখানে কাতালান ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার শুরুর দুই বছরে তার গোল ছিল ২০টি, সেখানে এই মৌসুমে হান্সি ফ্লিকের কোচিংয়ে এরই মধ্যে তিনি ৩১ বার পেয়েছেন জালের দেখা। একটু লেফট উইংয়ের দিকে খেলে নিজের কার্যকারিতা ও সামর্থ্য দেখাচ্ছেন এই ব্রাজিলিয়ান।
এই গোলগুলোও রাফিনিয়া করেছেন মাত্র ৫২ ম্যাচে। যার মধ্যে ৪৮টি ম্যাচ তিনি খেলেছেন শুরুর একাদশে। ৩৩ ম্যাচে খেলেছেন পুরো ৯০ মিনিট। মঙ্গলবার রাতে সান সিরোয় ইন্টার মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগেও তিনি ফ্লিকের কাছে থাকবেন নির্ভরযোগ্যদের একজন।
ফ্লিকের কাছ থেকে নিজে গুরুত্ব পাচ্ছেন বলেই নয়, দলের সবার প্রতি মনোযোগের কারণে এই জার্মান কোচে মুগ্ধ রাফিনিয়া।
“তিনি (ফ্লিক) এমন একজন, যিনি সব খেলোয়াড়ের দিকে দৃষ্টি দেন; যে খেলছে, যে খেলছে না-সবাইকে দেখভাল করেন ফ্লিক।”