‘স্টেডিয়ামটি দুর্দান্ত, কিন্তু মাঠের ঘাসের মান উন্নত করতে হবে’, রেয়াল মাদ্রিদের মাঠে ৩-৩ গেলে ড্রয়ের পর বললেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।
Published : 10 Apr 2024, 11:41 AM
ড্র ম্যাচেও কখনও কখনও জয়-হারের ব্যাপার থাকে। ৩-৩ গোলের ড্রয়ে যেমন জয়ের মতো অনুভূতিই ফুটে উঠছে পেপ গুয়ার্দিওলার কথায়। রেয়াল মাদ্রিদের মাঠে তিন গোল করা তো চাট্টিখানি কথা নয়! এই মাঠ নিয়ে অবশ্য অসন্তুষ্টি আছে ম্যানচেস্টার সিটি কোচের। স্টেডিয়াম দেখতে নান্দনিক হলেও এখানকার মাঠ ও ঘাসের মান উন্নত করার পরামর্শ দিলেন তিনি।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ ড্র হয় ৩-৩ গোলে। রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটি এগিয়ে যায় দুই দফায়, রেয়াল এক দফায়। শেষ বাঁশি বাজার সময় এগিয়ে থাকতে পারেনি কোনো দল।
ম্যাচের পর মাঠের ঘাস নিয়ে সিটির ফুটবলারদের অভিযোগের কথা জানালেন গুয়ার্দিওলা। ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটি সংস্কারের পর আরও দৃষ্টিনন্দন করে গড়া হয়েছে। সেই সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি এখনও। ম্যানচেস্টার সিটি কোচ বললেন, স্টেডিয়াম দেখতে দারুণ হলেও এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি তার দলের।
“স্টেডিয়ামটি দুর্দান্ত। তাদের এখন ঘাসের মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা উন্নত করতে হবে আরও। ফ্লোরেন্তিনোর (রেয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস) এখন কেবল মাঠ ভালো করা নিয়েই ভাবতে হবে, মাদ্রিদের মাঠ সবসময় যেমন (ভালো) ছিল।”
“আমার দলের ছেলেরা আমাকে এরকমই বলেছে। লোকের অবশ্য এটাকে খারাপভাবে দেখা উচিত নয়। স্টেডিয়াম তো চোখধাঁধানো। আমি যখন খেলেছি, মাদ্রিদের মাঠও সবসময় দুর্দান্ত ছিল। কার্পেটের মতো ছিল এটি। এখন আগের মতো নেই। তবে আমি নিশ্চিত, তারা এটা ঠিক করে ফেলবে।”
মাঠের অবস্থার দিকে আঙুল তুললেও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই গুয়ার্দিওলার। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই বের্নার্দো সিলভার ফ্রি কিক থেকে রেয়াল গোলকিপার লুনিনের ভুলে এগিয়ে যায় সিটি। তবে দ্রুতই তারা পিছিয়ে পড়ে ২-১ গোলে। প্রথমার্ধে পরেও দারুণ কিছু আক্রমণ সাজায় রেয়াল। কিন্তু সিটি নানাভাবে তা সামাল দিতে পারে।
দ্বিতীয়ার্ধে রেয়ালের আক্রমণে একটু ঢিল পড়ার সুযোগ নিয়ে দারুণ দুটি গোল করে আবার এগিয়ে যায় সিটি। বক্সের বাইরে থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুটি গোলায় বল জালে পাঠান ফিল ফোডেন ও ইয়োশকো ভার্দিওল। পরে ম্যাচের সেরা গোলটি করেন ফেদে ভালভের্দে। তার দুর্দান্ত ভলি জয় পেতে দেয়নি ম্যানচেস্টার সিটিকে।
তবে জয় না পেলেও তৃপ্তি ঠিকই পেয়েছেন গুয়ার্দিওলা। রেয়ালের মাঠে তিন গোল করতে পারাই তাকে সন্তুষ্টি দিচ্ছে।
“দুই দলই আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে। দারুণ বিনোদনদায়ী ম্যাচ ছিল, এই টুর্নামেন্টকেই ফুটিয়ে তুলছে তা। দ্বিতীয়ার্ধের তিন গোলই ছিল অসাধারণ। আমরা এগিয়ে যাই, কিন্তু তারা সমতা ফেরায়। ফুটবল এরকমই। কোনো সমস্যা নেই (এই ফলাফলে)… বের্নাবেউয়ে খেলা ছিল, এটা মাদ্রিদ, সবসময়ই স্পেশাল। আমরা ৩-২ গোলে এগিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখানে শেষের আগে কিছুই শেষ নয়।”
“প্রথমার্ধে যথেষ্ট আঁটসাঁট ছিলাম না আমরা, অনেক বল হারিয়েছি। কারণ তাদের গতি আছে তো বটেই, বল চালাচালিতেও তারা দারুণ কার্যকর। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা অবিশ্বাস্য মানসিকতায় খেলেছি এবং গোল করেছি। বের্নাবেউয়ে তিনটি গোল করেছি, দারুণ ব্যাপার। আমাদের জন্য এটা ভালো ফল নিশ্চিতভাবেই। এই দলের সঙ্গে জেতাটা সহজ কথা নয়।”
দ্বিতীয় লেগ ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে। এগিয়ে থাকার কথা তাই তাদেরই। গত দুই মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক-আউট পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। গত মৌসুমে সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে রেয়ালের মাঠে প্রথম লেগ ড্র করার পর দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে উড়ন্ত জয় নিয়ে ফাইনালে পা রাখে সিটি। পরে শিরোপা জেতে তারাই। এর আগের মৌসুমে প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে জিতেছিল সিটি। পরের লেগে রেয়াল নিজেদের মাঠে রুদ্ধশ্বাস এক জয়ে ফাইনালে পা রাখে এবং সেই পথ ধরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়।
এবার দ্বিতীয় লেগ নিজেদের মাঠে হওয়ায় গুয়ার্দিওলা বেশ খুশি। আগামী বুধবার সেই লড়াইয়ে যদিও নিজেদেরকে ফেভারিট মানতে নারাজ ম্যানচেস্টার সিটি কোচ।
“সঙ্গত কারণেই দ্বিতীয় লেগ বের্নাবেউয়ে খেলার চেয়ে নিজেদের মাঠে খেলতে চাইব আমি। এই ফলাফলও আমরা সাদরেই নিচ্ছি। তবে আমরা ফেভারিট? টুর্নামেন্টের রাজাদের বিপক্ষে? নাহ, জানি না… ফেভারিট তারাই থাকবে, মাঠে যারা দাপট দেখাতে পারবে। তবে আমাদের সমর্থকেরা আমাদের এগিয়ে রাখবে নিশ্চিতভাবেই।”
রেয়ালের বিপক্ষে মঙ্গলবার সিটি পায়নি তাদের প্রাণভ্রোমরা কেভিন ডে ব্রুইনেকে। গুয়ার্দিওলা জানালেন, ম্যাচের আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এই মিডফিল্ডার।
“সে বলেছিল যে খেলার মতো ফিট আছে। কিন্তু আমরা ড্রেসিং রুমে আসার পর সে বমি করতে শুরু করে এবং জানায় যে, খেলার মতো অবস্থায় নেই। ভালো অনুভব করছিল না সে। শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে মূল ব্যাপার হলো মানিয়ে নেওয়া এবং আমরা তা পেরেছি।”
ম্যাচের শেষ দিকে তুলে নেওয়া হলেও ফিল ফোডেনের চোট গুরুতর নয় বলেই জানালেন গুয়ার্দিওলা।