স্ত্রী, সন্তানসহ অনাগত সন্তানের মৃত্যু কামনা করে বার্তা দেওয়া হয়েছে, জানালেন বার্সেলোনার এই ডিফেন্ডার।
Published : 20 Apr 2024, 11:21 AM
সামাজিক মাধ্যমে বাজে অভিজ্ঞতা কিংবা হেনস্তার শিকার নিয়মিতই হতে হয় তারকাদের। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বার্সেলোনার বিদায়ের পর সমর্থকদের কাছ থেকে যে ধরনের আচরণ পেয়েছেন জোয়াও কান্সেলো, তা যেন ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকেই। তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু কামনা করা হয়েছে, এমনকি অনাগত সন্তানের মৃত্যু কামনা করেও বার্তা পেয়েছেন এই ডিফেন্ডার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৩-২ গোলে জিতলেও দ্বিতীয় লেগে ৪-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় বার্সেলোনা। এই মৌসুমে তাদের ট্রফি জয়ের সম্ভাবনাও তাতে এরকম শেষ হয়ে যায়। লা লিগার ফয়সালা অবশ্য এখনও হয়নি। তবে সেখানেও আশার জায়গা সামান্য। সাত ম্যাচ বাকি থাকতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেয়াল মাদ্রিদের চেয়ে আট পয়েন্ট পেছনে তারা।
পিএসজির কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর রোববার রেয়ালের সঙ্গে তাদের মাঠে বার্সেলোনার লড়াই। তবে কান্সেলো ভুলতে পারছেন না সমর্থকদের নিষ্ঠুর আচরণ। রেয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ইএসপিএনকে সেই অভিজ্ঞতাই শোনালেন ২৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার।
“লোকে সব ধরনের কথাই বলে। ইনস্টাগ্রামে কিছু মন্তব্যে আমার মেয়ের মৃত্যু কামনা করা হয়েছে, যার এখনও জন্মই হয়নি। তারা (সমর্থকরা) অনেক কিছুই সামনাসামনি বলে না, কারণ সমস্যায় পড়তে হবে। তবে মন্তব্যের (সামাজিক মাধ্যমে) ক্ষেত্রে তারা যা ইচ্ছে লিখে দেয়। আমার সঙ্গিনীর প্রতি, আমার মেয়ে, অনাগত সন্তান, সবার প্রতি আক্রোশ দেখায় তারা।”
“পৃথিবীটা খুবই নিষ্ঠুর এবং এটা মেনে নিয়েই চলা শিখতে হয় আমাদের। আমি জানি, কীভাবে চলতে হয়। তবে সত্যি বলতে, জানি না আর কী বলার আছে। একটা বাচ্চার মৃত্যু কামনা করা মানে ভয়ানক ব্যাপার। টিভিতে তারা যে ফুটবলারকে দেখছে, তার আড়ালে যে একজন মানুষও আছে, লোকে তা ভাবে না। আমরাও তো মানুষ… আমরা সবাই তো একই!”
দ্বিতীয় লেগে উসমান দেম্বেলেকে করা কান্সেলোর ফাউল থেকে পেনাল্টি পেয়েই তৃতীয় গোলটি করে পিএসজি। বার্সেলোনার পরাজয়ের পর বিশ্লেষক ও সংবাদমাধ্যমের কাঠগড়ায় তোলা হয় এই ডিফেন্ডারকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ডের সাবেক ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ড তো চরম সমালোচনা করে বলেন, কান্সেলো ছিলেন ‘নির্বোধ, কাঁচা ও চাপের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়া কোনো তরুণ অনভিজ্ঞ ফুটবলারের মতো।’
ফার্ডিনান্ডের সেই সমালোচনা নিয়ে কথা বলেন কান্সেলো। নিজের ভুল মেনে নিতেও তার আপত্তি নেই।
“ফার্ডিনান্ড গ্রেট ফুটবলার ছিলেন, তবে আমি নিশ্চিত, তিনিও ভুল করেছেন মাঠে। আমরা সবাই ভুল করি।”
“তবে হ্যাঁ, তার কাজই এটা। তিনি বিশ্লেষক এবং নিজের ভাবনা প্রকাশের অধিকার তার আছে। তার ব্যক্তিগত মতামত আমি মেনে নিচ্ছি। যেভাবে পেনাল্টি দিয়েছি, হয়তো তা কিছুটা শিশুতোষ (ভুল) ছিল। তবে খেলাটাই এরকম, এসব হয়েই থাকে। এই মুহূর্তে আমার ভাবনা হলো, সব সমালোচনাই মেনে নিচ্ছি।”
তবে সমালোচনার নামে পরিবারকে জড়ানো বা পরিবারের মৃত্যু কামনা করার মতো ব্যাপার মেনে নিতে পারছেন না ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ধারে বার্সেলোনায় আসা এই পর্তুগিজ ডিফেন্ডার।
“আমার পারফরম্যান্সের সমালোচনা যত ইচ্ছা করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু দয়া করে পরিবারকে টানবেন না।”
পিএসজির কাছে বড় হার এখনও পোড়াচ্ছে কান্সেলোকে। তার বিশ্বাস, প্রথমার্ধে রোনাল্দ আরাউহো লাল কার্ড না পেলে ম্যাচ জিততেন তারাই।
“সত্যি বলতে, সপ্তাহটি খুব কঠিন ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরও এগিয়ে যেতে রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। এই ক্লাবের তা প্রাপ্য ছিল। তবে এই সপ্তাহে সেই স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে হয়েছে আমাদের।
“ম্যাচের পর ওই রাতে ঘুমাতে পারিনি আমি। অদ্ভুত এক ম্যাচ ছিল… যেভাবে আমরা হেরেছি, এটিই আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। ১১ বনাম ১১ খেলা হলে আমরা জিততাম বলেই মনে করি।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পেছনে ফেলে আপাতত এখন ‘এল ক্লাসিকো’ নিয়ে ভাবার চেষ্টা করছেন কান্সেলো।
“এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। বার্সার বিপক্ষে রেয়ালের লড়াইয়ে তাকিয়ে থাকে সবাই। রোববার তাদের বিপক্ষে মাঠে নামতে ও জয়ের চেষ্টা করতে এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর নেই।”