উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
দৃষ্টিনন্দন শটে সপ্তম মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমা লক্ষ্যভেদ করার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে।
Published : 27 Oct 2024, 02:35 PM
দুই বছর আগের সেই একই চিত্রনাট্য। সেবার এগিয়ে যাওয়া গোলের দেখা মিলেছিল দ্বিতীয় মিনিটে; এবার সপ্তম মিনিটে। সেবারও ভুটানকে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা; এবারও তাই! ভুটানের গোলমুখের আগল এবার খুলে দিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। হ্যাটট্রিকের আলো ছড়ালেন তহুরা খাতুন। জোড়া গোলের আনন্দে ডানা মেললেন সাবিনা খাতুন। ভুটানকে কোণঠাসা করে রেখে, দলের মাঝের টানাপোড়েন, কোন্দল-সব দূরে ঠেলে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল পিটার বাটলারের দল।
নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে রোববার প্রথম সেমি-ফাইনালে ৭-১ গোলে জিতেছে শিরোপাধারীরা। গত সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সেমি-ফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা।
সাফের আঙিনায় ভুটানের বিপক্ষে কখনও না হারার আধিপত্যও ধরে রাখল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের সেরা এই প্রতিযোগিতায় সাবিনাদের অজেয় যাত্রা বেড়ে হলো আট ম্যাচে।
একটি পরিবর্তন এনে এদিনের একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ। আক্রমণভাগে শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় খেলান সাগরিকাকে; জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকে ভুটানের বিপক্ষেই হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। জ্বরের কারণে আগের দিনের অনুশীলনে না থাকলেও, সেরে উঠে সাবিনা খেলেন শুরু থেকে।
কিক-অফের বাঁশি বাজতেই আক্রমণ শুরু বাংলাদেশের। তৃতীয় মিনিটে ঋতুপর্ণার ক্রসে তহুরা পা ছোঁয়ালেও বল যায় বাইরে। গোল না মিললেও জয়ের জন্য ভুটানের রক্ষণে বাংলাদেশের রূদ্ররূপ হয়ে ওঠে স্পষ্ট।
সপ্তম মিনিটে গোছালো আক্রমণে ভুটানের প্রতিরোধের বাঁধ ভাঙে বাংলাদেশ। তহুরার পাস ধরে বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাম পায়ের জোরাল শটে জাল খুঁজে নেন ঋতুপর্ণা। চলতি আসরে এই ফরোয়ার্ডের এটা প্রথম গোল। দুদিন আগেই ‘কপালে গোল নেই’ বলে আক্ষেপ করেছিলেন ঋতুপর্ণা।
ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত দ্বাদশ মিনিটে। ঋতুপর্ণার ক্রসে সাগরিকার হেড গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ছুটছিল লক্ষ্যে, কিন্তু গোললাইন থেকে হেডে ফেরান ইদোন দর্জি। তিন মিনিট পর তহুরার শট আটকাতে পারেননি কেউ; শিউলি আজিমের পাস দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শরীর ঘুরিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড।
২৩তম মিনিটে ডেমা নামগাইয়েলের শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তিতে রাখেন রূপনা চাকমা। একটু পর ব্যবধান আরও বাড়তে পারত, কিন্তু সাবিনার পায়ের কারিকুরিতে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে নেওয়া শট দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
চলতি আসরে বাংলাদেশ অধিনায়কের গোলের অপেক্ষা ফুরায় ২৬তম মিনিটে। মনিকার আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে নিখুঁত টোকায় ব্যবধান বাড়ান সাবিনা।
৩৫তম মিনিটে আবারও তহুরার ঝলক। বক্সের একটু ওপর থেকে শট নেন তিনি, গোলরক্ষককের মাথার ওপর দিয়ে বল লুটোপুটি খায় জালে।
দুই মিনিট পর বাম দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে নিচু শটে বল জালে ঠেলে দুই হাত মেলে উদযাপনে মাতেন সাবিনা।
একটু পর ব্যবধান কমিয়ে ভুটানের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ডেকি লাহজম। তবে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখেই বিরতিতে যায় পিটার বাটলারের দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ভুটান। একবার কিছুটা গড়বড় পাকিয়েও ফেলেছিলেন রূপনা, তবে বল তার গ্লাভস গলে বেরিয়ে গেলেও বিপদের কারণ হয়নি।
৫৮তম মিনিটে আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় তহুরা। বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখেশুনে বাম পায়ের শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। সাফের আঙিনায় এটি তহুরার প্রথম হ্যাটট্রিক।
চলতি আসরে ২১ বছর বয়সী তারকার গোল হলো ৫টি।
পাঁচ মিনিট পর একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাটলার। সাবিনা, সাগরিকা ও ঋতুপর্ণাকে তুলে স্বপ্না রানী, শাহেদা আক্তার রিপা ও সানজিদা আক্তারকে নামান কোচ। সাফে অভিষেক হলো রিপার।
৭২তম মিনিটে সানজিদার কর্নারে শিউলি আজিম হেডে স্কোরলাইন ৭-১ করেন। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাটলার বেঞ্চের আরও খেলোয়াড়দের পরখ করতে শুরু করেন; মাসুরা পারভীনকে তুলে কোহাতি কিসকু এবং মারিয়া মান্দা বদলি মাতসুশিমা সুমাইয়াকে নামান।
ততক্ষণে শুরু হয়েছে শেষের বাঁশির অপেক্ষা। তা বাজতেই মুকুট ধরে রাখার অভিযানে শেষ ধাপে ওঠার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। সাবিনা-তহুরাদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি।
এ ম্যাচের আগেও আরেকবার অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ দলের ভেতরের পরিবেশ। কোচ বাটলার অভিযোগ করে বসেন, সাবেক কোচরা মেয়েদেরকে প্ররোচিত করছে দলে ভাঙন ধরানোর জন্য। এ নিয়ে কথার চালাচালিও কম হয়নি, কিন্তু সাবিনা-মারিয়া-সাগরিকাদের মাঠের পারফরম্যান্সে এসবের কোনো প্রভাবই নেই!