মায়োর্কাকে উড়িয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে ফিরল রিয়াল মাদ্রিদ।
Published : 11 Sep 2022, 08:02 PM
মায়োর্কার বিপক্ষে শুরু থেকে আধিপত্য করলেও প্রথমে গোল খেয়ে বসল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে চ্যাম্পিয়নদের জন্য তা ভাবনার কারণ হলো না এতটুকুও। ফেদে ভালভেরদে চমৎকার গোলে সমতা টানার পর দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা শাসন করল তারা। আলো ছড়ালেন ভিনিসিউস জুনিয়র ও রদ্রিগো। সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে ফিরল কার্লো আনচেলত্তির দল।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে রোববার স্থানীয় সময় দুপুরে শুরু হওয়া ম্যাচে মায়োর্কাকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের তিন গোল করেছেন ভিনিসিউস, রদ্রিগো ও আন্টোনিও রুডিগার।
পাঁচ ম্যাচে শতভাগ সাফল্যে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে রিয়াল। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেছে বার্সেলোনা।
সপ্তাহে খেলতে হচ্ছে দুটি করে ম্যাচ। তিন দিন বাদেই আবার নামতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে। খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিতে এবং করিম বেনজেমার চোট মিলিয়ে আগের ম্যাচের শুরুর একাদশে ছয়টি পরিবর্তন আনেন আনচেলত্তি।
প্রথম পছন্দের খেলোয়াড়দের অনেকে না থাকলেও বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও শুরু থেকে আধিপত্য করতে থাকে রিয়াল।
প্রথম সুযোগটা অবশ্য পায় মায়োর্কা। ম্যাচ শুরু হতে প্রথম মিনিটেই শাণানো আক্রমণে রিয়ালের উন্মুক্ত রক্ষণে ফাঁক খুঁজে নেয় তারা। সবশেষ ফেরলদ মঁদির বাধা এড়িয়ে ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন ভেদাত মুরিকি। তবে সতর্ক ছিলেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া।
এরপর শুরু হয় রিয়ালের একাধিপত্য। দশম মিনিটে দারুণ একটা সুযোগও পায় তারা। তবে ডাভিড আলাবার উঁচু করে বাড়ানো থ্রু বল ধরে বক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন ভিনিসিউস।
এভাবে বারবার আক্রমণ করে গেলেও প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার মতো তেমন কিছু করতে পারছিল না রিয়াল। এরই মাঝে ৩৫তম মিনিটে আচমকা তাদের স্তব্ধ করে দেয় মায়োর্কা। ডান দিক থেকে সতীর্থের দূরের পোস্টে নেওয়া ক্রসে হেডে দলকে এগিয়ে নেন কসোভোর ফরোয়ার্ড মুরিকি।
পিছিয়ে পড়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে রিয়াল। সেই ধারাবাহিকতায় অসাধারণ নৈপুণ্যে সমতা টানেন ভালভেরদে।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে নিজেদের ডি-বক্সের একটু বাইরে দানি সেবাইয়োসের ছোট পাস ধরে দৌড় শুরু করেন তিনি। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের একজনকে কাটিয়ে এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে একটু আড়াআড়ি বাঁ দিকে গিয়ে বাঁ পায়ের জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন উরুগুয়ের এই মিডফিল্ডার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেল্টিকের বিপক্ষে বেনজেমার জায়গায় মাঠে নেমে দারুণ খেলা এদেন আজার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। শুরু থেকে নিজের ছায়া হয়ে থাকা বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডকে ৫৮তম মিনিটে তুলে লুকা মদ্রিচকে নামান কোচ। একই সময়ে মঁদির বদলি নামেন নাচো ফের্নান্দেস।
এর পরপরই দূর থেকে চেষ্টা করেন লুকাস ভাসকেস। তবে তার জোরাল শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। খানিক পর আবারও গোল খেতে বসেছিল রিয়াল; বক্সে অরক্ষিত আন্তোনিও সানচেসের শট পোস্টের বাইরে গেলে বেঁচে যায় স্বাগতিকরা।
দুই ব্রাজিলিয়ানের নৈপুণ্যে ৭২তম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো পাস ধরে দুই জনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে একজনকে কাটিয়ে রক্ষণচেরা পাস দেন রদ্রিগো। আর দারুণ এক টোকায় বল বক্সে নেওয়ার ফাঁকে শেষ ডিফেন্ডারকে এড়ান ভিনিসিউস। এরপর দ্বিতীয় ছোঁয়ায় কোনাকুনি শটে গোলটি করেন তিনি।
লা লিগায় টানা চার ও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জালের দেখা পেলেন ভিনিসিউস। স্পেনের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই (৪টি)।
নির্ধারিত সময় শেষের আগের মিনিটে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন রদ্রিগো। দানি কারভাহালের পাস ধরে প্রতিপক্ষের কয়েক জনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে বক্সে ঢুকে এক ঝটকায় একজনকে ফেলে দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
গত সপ্তাহে রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচেও গোল করেছিলেন রদ্রিগো।
আর যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে টনি ক্রুসের ফ্রি কিকে দূরের পোস্টে বল পেয়ে ভলিতে বড় জয় নিশ্চিত করেন রুডিগার। এবারের গ্রীষ্মের দলবদলে চেলসি ছেড়ে আসা জার্মান ডিফেন্ডারের রিয়ালের জার্সিতে এটাই প্রথম গোল।
ম্যাচ কতটা একপেশে ছিল, তা কেবল স্কোরলাইনে নয়, ফুটে উঠছে ম্যাচ পরিসংখ্যানেও। প্রায় ৭০ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ২২টি শট নিয়েছে রিয়াল, যার ৭টি লক্ষ্যে। আর মায়োর্কার পাঁচ শটের দুটি লক্ষ্যে ছিল।
দারুণ এই পারফরম্যান্স এবং চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে সাত ম্যাচ খেলে সবকটি জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে লাইপজিগের মুখোমুখি হবে রিয়াল। আগামী বুধবার চাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি তারা খেলবে ঘরের মাঠে।