চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
দারুণ এক রেকর্ড গড়ার ম্যাচে পেনাল্টি থেকে তিনটি গোল করেন ইংলিশ তারকা।
Published : 18 Sep 2024, 02:58 AM
বিরতির পর দুই মিনিটে দুবার বায়ার্ন মিউনিখের জালে বল পাঠিয়ে দারুণ কিছুর স্বপ্নই হয়তো দেখতে শুরু করেছিল দিনামো জাগরেব। কিন্তু তেমন কিছু তো হলোই না, বরং এর আগে-পরে যা হলো, তা নিশ্চয় ভুলে যেতে চাইবে দলটি। হ্যারি কেইনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের দিনে গোল উৎসবে মেতে উঠল বায়ার্ন।
নতুন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানির কোচিংয়ে দারুণ ছন্দে এগিয়ে চলেছে মিউনিখের ক্লাবটি। সেই ধারায় মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৯-২ গোলে জিতেছে বায়ার্ন।
প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে ৯ গোল করার কীর্তি গড়ল বায়ার্ন।
বিধ্বংসী বায়ার্নের হয়ে একাই চার গোল করেন কেইন। ওলিসে করেন দুই গোল। বাকি তিন গোলদাতা রাফায়েল গেররেইরো, লেরয় সানে ও লেয়ন গোরেটস্কা।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে প্রথম আক্রমণ শাণায় বায়ার্ন। সেই শুরুর পর টানা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে তারা। দ্রুত গোলও পেয়ে যায় জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।
ষোড়শ মিনিটে সতীর্থের পাস ধরে কোনাকুনি শটে জালে বল পাঠান সের্গে জিনাব্রি; কিন্তু বাজে অফসাইডের বাঁশি। তবে, ওই আক্রমণের শুরুতেই আলেকসান্দার পাভলোভিচ ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পরে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
এবার আর কোনো হতাশা নয়। নিখুঁত স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন বায়ার্নের জার্সিতে গোলের পর গোল করে চলা কেইন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল পেতে পারতো বায়ার্ন। কিন্তু ২৪তম মিনিটে গেররেইরোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরাল শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
১০ মিনিটের মধ্যেই অবশ্য গেররেইরোর ওই হতাশা দূর হয়ে যায়। অসাধারণ নৈপুণ্যে গোলটিতে অবদান রাখেন জামাল মুসিয়ালা। বাঁ দিক থেকে আসা সতীর্থের ক্রস বুক দিয়ে দারুণ ভঙ্গিমায় পাশেই গেররেইরোকে খুঁজে তরুণ জার্মান ফরোয়ার্ড, আর নিচু শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পর্তুগিজ ডিফেন্ডার।
শুরু থেকে একচেটিয়া আধিপত্য করে ৩৮তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বায়ার্ন। সতীর্থের ছোট করে কর্নারের পর, বল ধরে ছয় গজ বক্সের মুখে ক্রস বাড়ান জসুয়া কিমিখ, আর দারুণ হেডে গোলটি করেন ফরাসি মিডফিল্ডার ওলিসে।
প্রতিপক্ষের আক্রমণের তোড়ে প্রথমার্ধে ভেসে যাওয়ার অবস্থা হয় দিনামোর। বিরতির আগে ১০টি শট নিয়ে পাঁচটি লক্ষ্যে রাখে বায়ার্ন, সেখানে গোলের জন্য একটি শটও নিতে পারেনি তারা।
সেই দলই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচ মিনিটে লক্ষ্যে দুটি শট নিয়ে দুটিই জালে জড়ায়। চোট পাওয়ায় এই অর্ধে আর মাঠে নামেননি বায়ার্নের মূল গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার, তার বদলি নেমে সভেন উলরিখের শুরুটা হয় ভীষণ বাজে।
৪৮তম মিনিটে মার্কোর পাস বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে দলের প্রথম গোলটি করেন ব্রুনো পেতকোভিচ। দুই মিনিটের মধ্যে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ব্যবধান আরও কমায় ক্রোয়েশিয়ার ক্লাবটি। ইয়োসিপ মিসিচের দারুণ থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠান জাপানের ডিফেন্ডার তাকুইয়া ওগিওয়ারা।
মুহূর্তের ব্যবধানে জোড়া গোল খেয়ে যেন আরও তেতে ওঠে বায়ার্ন।
৫৭তম মিনিটে কিমিখের শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন গোলরক্ষক; কিন্তু বিপদমুক্ত করতে পারেননি। সামনেই ছিলেন কেইন, আলগা বল পেয়ে সহজেই জালে পাঠান তিনি।
দুই মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিকও হতে পারতো তার; প্রায় আগের গোলটির মতোই সতীর্থ জিনাব্রির প্রচেষ্টা গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেওয়ার পর জালে পাঠান কেইন; কিন্তু এবার অফসাইডে ছিলেন জিনাব্রি।
৬১তম মিনিটেই অবশ্য ফের তিন গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। গোলটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কেইনেরও। সতীর্থের পাস পেয়ে দুই প্রতিপক্ষের মাঝে দুর্দান্ত এক ছোঁয়ায় বক্সে মুসিয়ালাকে খুঁজে নেন তিনি। গোলরক্ষক দ্রুত এগিয়ে আসায় মুসিয়ালা শট না নিয়ে পাশে বল বাড়ান, আর বিনা বাধায় গোলটি করেন ওলিসে।
পরের পাঁচ মিনিটে আরও দুটি সুযোগ হারানোর পর ৭৩তম মিনিটে আরেকটি সফল স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন কেইন। ডি-বক্সে দিনামোর মিডফিল্ডার মিসিচের হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টিটি পায় বায়ার্ন।
৭৭তম মিনিটে দিনামোর বক্সে আলফুঁস ডেভিস ফাউলের শিকার হলে তৃতীয় পেনাল্টি পায় বায়ার্ন। কোনো ভুল করেননি কেইন। আগেরবারের মতো বাঁ পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
গত সপ্তাহে হোলস্টেন কিলের জালে হ্যাটট্রিক করা ইংলিশ তারকার চলতি মৌসুমে বায়ার্নের হয়ে পাঁচ ম্যাচে গোল হলো ৯টি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৪৫ ম্যাচ খেলে এই নিয়ে ৩৩টি গোল করলেন কেইন। এতদিন ৩০ গোল নিয়ে ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ছিল ওয়েইন রুনির।
২০২৩ সালের গ্রীষ্মে টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে বায়ার্নে যোগ দেওয়ার পর থেকে, জার্মানির সফলতম ক্লাবটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে ৫৩ গোল করলেন কেইন।
সাত নম্বর গোলটি হজমের পর যেন পুরো খেই হারিয়ে ফেলে দিনামো। প্রতিপক্ষকে আটকানোর কোনো কৌশলই খুঁজে পাচ্ছিল না তারা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, বায়ার্ন আক্রমণেই উঠলেই মনে হচ্ছিল, এই বুঝি হলো আরেকটি।
বাকি সময়ে স্কোরলাইনে নাম লেখান তাদের দুই বদলি খেলোয়াড় সানে ও গোরেটস্কা। ৮৫তম মিনিটে সানে দূর থেকে গোল করার পর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে হেডে জালে বল জড়ান গোরেটস্কা।
আরও পড়ুন: