ইংলিশ ফুটবল
পেপ গুয়ার্দিওলার সঙ্গে কেভিন ডে ব্রুইনের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে গুঞ্জনও আপাতত থেমে গেল।
Published : 05 Dec 2024, 06:40 PM
দলকে চালকের আসনে রেখে, নির্ধারিত সময়ের ১৬ মিনিট বাকি থাকতে মাঠ ছাড়লেন কেভিন ডে ব্রুইনে। ডাগআউটে তখন দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষায় পেপ গুয়ার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটি হাসিমুখে আলিঙ্গনে জড়ালেন তার মিডফিল্ডারকে।
অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করায় ছেলের প্রতি বাবার স্নেহের প্রকাশ যেন। বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের মুখেও খেলে গেল সন্তুষ্টির ছাপ, দু:সময়কে পেছনে ফেলার হাসি।
দীর্ঘ এক মাসের চোট কাটিয়ে ফেরার পর ছন্দ খুঁজে পেতে লড়ছিলেন ডে ব্রুইনে। শুরুর একাদশেও তাই জায়গা পাচ্ছিলেন না তিনি। দল ধুঁকছিল বাজেভাবে। তাতেই নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছিল।
সেরা একাদশে ডে ব্রুইনের সুযোগ না পাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কাই স্পোর্টসের আলোচনায় গ্যারি নেভিল ও জেমি ক্যারাঘার মন্তব্য করেন ‘ডে ব্রুইনে ও কোচের মধ্যে হয়তো কোনো সমস্যা চলছে।’ এতে বেজায় চটে যান গুয়ার্দিওলা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভও জানান তিনি।
সিটির তারকাসমৃদ্ধ স্কোয়াডেও ডে ব্রুইন কতটা অনন্য ও দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এটা বোঝাতে কোচ বলেন, “এই ক্লাবের সবচেয়ে বড় সাফল্য আমাকে উপহার দিয়েছে সে।”
অনেক দিন পর প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই নিজেকে পুরোনো রূপে মেলে ধরলেন ডে ব্রুইনে। যথার্থ প্রমাণ করলেন তাকে নিয়ে কোচের মন্তব্যকে।
প্রিমিয়ার লিগে টানা চার পরাজয় এবং সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচ জয়শূন্য (ছয়টি হার ও একটি ড্র) থাকার পর বুধবারের লিগের ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে সিটি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে নটিংহ্যাম ফরেস্টের বিপক্ষে ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতেছে গত চারবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
দলকে পথে ফেরানোর ম্যাচে সবচেয়ে বড় অবদান ডে ব্রুইনের। একটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করেন তিনি।
অষ্টম মিনিটে বাইলাইন থেকে ইলকাই গিন্দোয়ানের ক্রসে ডে ব্রুইনের জোরাল হেড জালের দিকেই যাচ্ছিল। গোললাইনের কাছে থাকা সিলভা টোকায় সেটা আরও নিশ্চিত করেন। ৩১তম মিনিটে স্বদেশি জেরেমি ডোকুর বাড়ানো বল ধরে একটু এগিয়ে পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গা থেকে গোলটি করেন তারকা প্লেমেকার।
৫৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন বেলজিয়ামের ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ডোকু।
এর কিছুক্ষণ পর ৭৪তম মিনিটে ডে ব্রুইনেকে তুলে রিকো লু্ইসকে নামান কোচ।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর লিগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলার পর এই ম্যাচেই সবচেয়ে বেশি সময় খেললেন ডে ব্রুইনে। ম্যাচ শেষে যখন তাকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ঘোষণা করা হয়, তখন বেঞ্চে বসেছিলেন তিনি; এই ঘোষণা সিটি সমর্থকদের উল্লাস যেন আরও বাড়িয়ে দেয়।
বোঝাই যায়, ডে ব্রুইনেকে চেনা রূপে ফিরে পেতে কেবল কোচ গুয়ার্দিওলাই নন, ভক্ত-সমর্থকরাও অধীর আগ্রহে ছিলেন।
ম্যাচের পর জয়ে ফেরার উচ্ছ্বাসের মাঝে গুয়ার্দিওলার কণ্ঠে বাড়তি উচ্ছ্বাস যোগ করল ডে ব্রুইনেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ।
“সে স্বরূপে ফেরায় আমি খুব খুশি। ৭৫ মিনিট (৭৪ মিনিট) চমৎকার খেলেছে সে।”
“সেরাটাই তার প্রাপ্য, কারণ সে দারুণ এক ছেলে এবং এখানে আসার পর থেকে এত বছর ধরে সে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে আছে।”
দলকে ব্যর্থতার গণ্ডি থেকে বের করতে এবং সেই চেষ্টায় নিজে সামনে থেকে অবদান রাখতে পেরে ডে ব্রুইনেও খুব খুশি। তবে তিনি বেশি খুশি দল সাফল্য পাওয়ায়।
“আমার মনে হয়, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা ম্যাচটা জিতেছি। ম্যাচটা আমরা ভালোভাবে শুরু করি, কিছু সুযোগ তৈরি করি, হয়তো কিছু ভুলও করেছি। মনে হয়, কিছু ভুল আমিও করেছি। তবে যেভাবে আমরা পারফরর্ম করেছি, তাতে আমি খুশি।”
লিগ টেবিলে ১৪ ম্যাচে আট জয় ও দুই ড্রয়ে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে সিটি।
চেলসি ও আর্সেনালের পয়েন্ট সমান ২৮ করে; তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে দুইয়ে চেলসি। ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে লিভারপুল।