“বিক্রি নেই বললেই চলে। আশা করছি শুক্রবার থেকে হয়ত শুরু হবে।”
Published : 14 Mar 2025, 08:20 AM
রোজার এক তৃতীয়াংশ পেরিয়ে গেলেও বেচাকেনা জমে ওঠেনি রাজধানীর মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে।
হাতে-গোনা দোকানে গুটিকয়েক ক্রেতার আনাগোনা থাকলেও বাকিগুলোয় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
তারা বলছেন, বেনারসি পল্লীতে ঈদের চেয়ে ‘বিয়ের মৌসুমেই’ কেনাকাটা বেশি হয়। তবে অন্যবার ৯-১০ রোজায় যতটা বেচাবিক্রি হত, এবার সেটাও হচ্ছে না।
বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ার মত কারণকে সামনে আনছেন বিক্রেতারা।
মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার পাশেই বেনারশি পল্লী। এ শাড়ির বাজারে প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে।
মূলত বিয়ে-বৌভাতসহ এ ধরনের অনুষ্ঠানে মেয়েদের শাড়ির জন্য বেনারসি পল্লীর শাড়ির চাহিদা বেশি; ভিড় জমে ঈদেও। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন।
গত সোমবার দুপুরে বেনারসি পল্লীর ‘নীলআঁচল’ শো-রুমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একজন ক্রেতাও নেই। ফলে বিক্রেতারা নিজেদের মধ্যে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।
দোকানের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর বিয়ের মৌসুম; এসময়ে বিক্রিটা ভালো হয়।
“ঈদের সময় টুকটাক বিক্রি হয়। কিন্তু এখনও ঈদের বিক্রি শুরু হয়নি। আরও এক-দুই দিন পরে হয়ত শুরু হবে, সে অপেক্ষায় আছি আমরা।”
‘সিল্ক মিউজিয়ামে’ গিয়ে পাওয়া গেল তিন ক্রেতা। তাদের দেখিয়ে বিক্রেতা আশিক হোসেন বলেছিলেন, সারাদিনে তাদের দোকানে এই প্রথম কোনো ক্রেতা এসেছেন।
“আগে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা থাকত। এবার এখনও ঈদের বিক্রি শুরু হয়নি।”
আশিক বলেন, “বিক্রি নেই বললেই চলে। আশা করছি, শুক্রবার থেকে হয়ত শুরু হবে। দু-একজন মাঝেমধ্যে আসেন। তাদের দিয়ে তো মার্কেট চলে না। প্রত্যেকটা দোকানের অবস্থা খুব খারাপ।”
এবার বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কথা তুলে ধরে আশিক বলেন, “আগে উপহার দিতে অনেকেই লট ধরে শাড়ি নিয়ে যেত। এবার সেসব ক্রেতাও আসছে না।”
বেনারসি পল্লীর যাত্রা শুরু স্বাধীনতার পরপরই। সেখানে তাঁত, জামদানি, টাঙ্গাইল ও কাতানসহ অন্যান্য শাড়িও পাওয়া যায়। লেহেঙ্গার পাশাপাশি মেলে কিছু বিয়ের সামগ্রীও।
‘গুলশান শাড়িমলের’ বিক্রেতা মো. আনিছ বলেন, সব সময়ই ১০ রোজা পর্যন্ত ক্রেতা সমাগম কম থাকে। তবে এবার তারা সেই কম ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না।
“এবার বেশিই খারাপ যাচ্ছে। বেচাকেনা বর্তমানে নাই। সারা দিনে দুজন কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে বসে রইছি।”
তিনি বলেন, “দেশের পরিস্থিতির কারণে হতে পারে, মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নাই, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও সুবিধার না।”
‘আদি ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউজের’ ব্যবস্থাপক সাব্বির বলেন, দিনে কিছু ক্রেতা এলেও ছিনতাইকারীর ভয়ে সন্ধ্যার পর ক্রেতা আসেন না।
“দেশে ছিনতাই একটু বেশি তো, এ কারণে ক্রেতা কম। গত বছর এ সময় ভালো কেনাবেচা ছিল, এবারের অবস্থা বেশ খারাপ; বসে বসেই সময় কাটতেছে।”
‘লীলা বালি’ দোকানের বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “আগে রোজার এ সময়ে বিক্রি ভালোই হত; মোটামুটি ব্যস্ত সময় কাটত। এবার বেচাকেনার অবস্থা খারাপ।”
দোকানটিতে উপহারের শাড়ি পছন্দ করছিলেন উত্তরা থেকে আসা সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, “এখনও ঈদের কেনাকাটা শুরু করিনি। ১৫ রমজানের পর থেকে কেনা শুরু করব; ছুটির ফাঁকে ফাঁকে।”
‘খুরশীদ অ্যান্ড সন্সের’ বিক্রেতা ফয়সাল খান আসরাফি বলেন, রোজার শুরুতে বিক্রি বাড়বে, সে আশা ছিল তাদের; তবে এখনও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
“সামনে হয়ত ভালো হবে। আর এখন যে অবস্থা বেনারসি পল্লীতে, তেমন শাড়ি বিক্রি হয় না, সবাই ধানমন্ডি কিংবা নিউ মার্কেটের দিকে যান।”
তিনি বলেন, “তারপরও ১৫ রোজার পর বিক্রি বাড়বে, এ আশা করছি।”
মতিঝিল থেকে আসা সুবর্ণা বিপ্লব বর্ষা তিনটি শাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, “দাম অনেক বেশি। এভারেজ কেনাকাটা হচ্ছে। বাজেটের চেয়ে দাম বেশি পড়ে যাওয়ায় কোথাও আরও বাজেট অ্যাড করছি; কিছু কেনাকাটা বাদ দিচ্ছি।”
বেনারসি পল্লীতে ভাগ্নির জন্য ঈদের লেহেঙ্গা কিনতে এসেছেন ফাতেমা তাবাসসুম রিচি।
তিনি বলেন, তার বাজেটের তুলনায় পোশাকের দাম বেশি। ফলে তাকে কেনাকাটায় কিছুটা ছাড় দিতে হচ্ছে।
“দাম বেশি লাগতেছে এবার। একটু কম কোয়ালিটির কিনতেছি বা কম কিনতেছি।“
শাড়ি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, “আজই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছি। দাম বেশি, তাই দুটো শাড়ি কিনলাম। অন্য মার্কেট ঘুরে দেখি কী অবস্থা।”