চার বছর ধরে ‘টোলারেট’ নামের একটি প্রকল্পের অধীনে আর্কটিকের গভীর থেকে তোলা প্রাচীন মাটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখবেন গবেষকরা।
Published : 07 May 2024, 02:03 PM
আধুনিক সময়ের বিভিন্ন ফসলকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিজ্ঞানীরা ঠেকাতে পারেন কিনা, তা দেখতে প্রাচীন অভিযান চলছে ডিএনএ’র গভীরে।
এ খননকাজ চলছে পৃথিবীর উত্তরে অবস্থিত সুমেরু অঞ্চল বা আর্কটিকের গভীরে।
স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের ‘হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা ইউরোপীয়ান বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এক জোট হয়ে প্যালিওলিথিক সময়ের ‘জীবাণু’ বিশ্লেষণে কাজ করছেন। সে সময়টিতে বিশ্ব বর্তমান পৃথিবীর মতো অনেক উষ্ণ হয়ে উঠেছিল।
এ কাজের জন্য গবেষণা দলটিকে ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে’র বৈজ্ঞানিক গবেষণা উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘হরাইজন ইউরোপ’ থেকে পাঁচ লাখ ইউরোর তহবিল পেয়েছে। ফলে চার বছর ধরে ‘টোলারেট’ নামের একটি প্রকল্পের অধীনে আর্কটিকের গভীর থেকে তোলা প্রাচীন মাটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন গবেষকরা।
‘হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র প্লান্ট মলিকিউলার জীববিজ্ঞানী ড. রস আলেকজান্ডার জানিয়েছেন, এজন্য গবেষকরা ‘প্রায় ১০০-২০০০০০ বছর আগে বা প্যালিওলিথিক যুগের বিভিন্ন নমুনা ব্যবহার করছেন। “কারণ পৃথিবী তখন বর্তমান সময়ের মতো অনেক বেশি উষ্ণ ছিল।”
এর উদ্দেশ্য “সে সময়ের গাছপালা, মাটি ও ব্যাকটেরিয়া আমাদের বর্তমান ফসলকে দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে কিনা তা খুঁজে বের করা”।
“গোটা বিশ্বে ফসলের জন্য খরা বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয়।”
“ইউরোপীয়ান ড্রথ অবজারভেটরি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, খরা নিয়ে ইইউ ৪৭ শতাংশের জন্য সাবধানবাণী ও ১৭ শতাংশের জন্য সতর্কতার কথা বলেছে। এমনকি, কিছু এলাকায় শস্যের ফলন ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।”
‘হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা দলটি জার্মানির ‘আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউট’-এর বিজ্ঞানীদের নেওয়া বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করে দেখবেন যে, প্রাচীন আমলের ডিএনএ, বর্তমান সময়ের ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদকে পানির অভাব হলে সহায়তা করতে পারে কিনা।
ড. আলেকজান্ডার বলেছেন, “ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের স্বাস্থ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরা এমন যৌগ মাটিতে ছাড়ে যা উদ্ভিদের শেকড়ের চারপাশে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এগুলো মাটির গুণাগুণ বজায় রাখায় আঠার মতো কাজ করে বা উদ্ভিদকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে সাহায্য করে।”
“আমরা খরায় টিকে থাকতে সক্ষম’ বার্লিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে দেখার জন্য মাটির উপরে নিয়ন্ত্রিত ‘গ্রোথ চেম্বার’ ব্যবহার করব, বিশেষ করে স্কটল্যান্ডের বড় আকারের বিভিন্ন ফসলের মধ্যে।”
‘হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র ‘ফুড কেমিস্ট্র’ বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টিফেন ইউস্টন বলেছেন, “মাটির নমুনা পেতে আমরা পুরো স্কটল্যান্ড জুড়ে কৃষক ও জমির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
“আমরা যদি প্রান্তিক জমিতে বার্লির মতো খাদ্য শস্য চাষ করতে পারি, তাহলে এটি অনেক বেশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধার পথ দেখাবে; বর্তমানে খরার মতো সমস্যার কারণে যেটি সম্ভব হচ্ছে না।”
“এছাড়াও, এই ব্যাকটেরিয়া ফসলের জন্য মাটি ও পানির প্রাপ্যতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য যেসব অণু তৈরি করে তা অন্য কোথাও মূল্যবান হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।”
“এসব প্রাচীন নমুনাতে প্রবেশ করতে পারা অনেকটা বোনাসের মতো, যা প্রায় অবিশ্বাস্য। সেখানে প্রচুর জৈবিক সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্কটল্যান্ড ও গোটা বিশ্বে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিবেশের উন্নতিতে ব্যবহার করতে পারি।”