এ অগ্রগতি শুধু মানুষের সামাজিক জীবন বোঝার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবও রয়েছে।
Published : 07 May 2024, 07:05 PM
‘শত্রুর শত্রু, আসলে বন্ধু’- এ প্রবাদ বহুকাল ধরেই প্রচলিত। তবে সম্প্রতি এর পেছনের রহস্য উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই প্রাচীন প্রবাদ নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। আর এতে আলোকপাত করা হয় মানুষের সম্পর্কের জটিল গতিবিধির ওপর।
৪০’র দশকে ‘সোশাল ব্যালেন্স থিওরি’ নামের একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন মনোবিজ্ঞানী ফ্রিটজ হাইডার, যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সমাজের লোকজনের কাছে সম্পৃতি খুঁজে থাকে।
ওই তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু কিছু নিয়ম আমাদের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে, দু’জন ব্যক্তির কোনও সাধারণ শত্রু থাকলে তাদের বন্ধু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। আবার, কোনও সংঘাত হলে তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
এর আগে গাণিতিক ও যোগাযোগ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ তত্ত্ব পরীক্ষা করা হলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ ছিল, সেগুলোতে মানুষের একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বিভিন্ন জটিলতাকে অনেক সরলীকরণ করে ফেলা হয়েছিল।
তবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ কথার মর্ম উদ্ধার করেছে ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা দলটি। একটি হল, পৃথিবীতে সবাই একে অপরকে চেনেন না। আর দ্বিতীয়টি হল, নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সংযোগ স্থাপনের প্রবণতা বেশি।
এ তত্ত্ব পরীক্ষা করতে গবেষকরা ‘স্ল্যাশডট’-এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশাল ডেটাসেট, মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও বিটকয়েন ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া এবং শপিং সাইট ‘এপিনিয়ন’-এর বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ বিশ্লেষণ করেছেন।
আর এ পরীক্ষায় এলোমেলোভাবে বিভিন্ন সম্পর্ককে নেতিবাচক বা ইতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত করার বদলে গবেষকরা এমন এক মডেল বানিয়েছেন, যা বাস্তব জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের আদলে তৈরি।
মডেলটি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির একে অপরের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা ও মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে ভিন্নতা নিয়ে তথ্য মিলেছে।
বিস্ময়করভাবে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষা চালিয়ে হেইডারের ‘সোশাল ব্যালেন্স থিওরি’টিরই প্রমাণ মিলেছে। এতে দেখা গেছে, মানুষের সামাজিক সংযোগ স্থাপনের পদ্ধতির সঙ্গে এ তত্ত্বের বিভিন্ন অনুমানের মিল আছে। আর এতে মানুষের আচরণ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।
এ অগ্রগতি শুধু মানুষের সামাজিক জীবন বোঝার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানবিষয়ক সাইট নোরিজ।
জীবনযাপনে সামাজিকতার পেছনে বিভিন্ন কারণ বোঝার মধ্যেই এই গবেষণার ফলাফল সীমাবদ্ধ নয়, এর আরও বিস্তৃত প্রয়োগ রয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষকরা রাজনৈতিক মেরুকরণের মতো নানা বিষয় সমাধান সম্ভব বলে গবেষকরা আশাবাদী।
তবে, বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। মানুষের সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের বাইরেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে নতুন পাওয়া এই তথ্য। মস্তিষ্কের সঙ্গে নিউরনের মিথস্ক্রিয়া বা রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ওষুধের সংমিশ্রণের কার্যকারিতা খুঁজে দেখার ক্ষেত্রেও এই একই নীতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এমনকি বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব জটিল পরিস্থিতি রয়েছে, সেগুলো আরও গভীরভাবে বোঝার ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এ গবেষণাটি।